বাঁশ-বেতের তৈরী পলো হাতে ‘ঝপ-ঝপা-ঝপ’ শব্দে সিলেটের বিশ্বনাথে উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়নের গোয়াহরি গ্রামের বিলে (দক্ষিণের বড় বিল) পালিত হয়েছে গ্রামবাংলা ঐতিহ্যবাহী পলো বাওয়া উৎসব।

 


শনিবার (২১ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে গ্রামবাসী একসাথে পলো, টেলা জাল, উড়াল জাল হাতে নেমে পড়ে পলো বাওয়া উৎসবে। এরপূর্বে সকাল ৮টা থেকে বিলে আসতে শুরু করেন গ্রামের বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষ।

 

শত বছরের পুরানো পলো বাওয়া উৎসবের ধারাবাকিতায় এবছর অনুষ্ঠিত পলো বাওয়া উৎসব প্রায় ২ ঘন্টাব্যাপী চলে। প্রতি বছর বাংলা সালের পহেলা মাঘ আনুষ্ঠানিকভাবে বার্ষিক পলো বাওয়া উৎসব পালন করা হলেও শীতের তীব্রতা এবার বেশি হওয়ার তারিখটা সর্বসম্মতি ক্রমে পিছিয়ে আনা হয়েছে। পলো বাওয়া উৎসবকে কেন্দ্র করে গোয়াহরি গ্রামে চলমান উৎসবের আমেজ আরো কয়েক দিন স্থায়ী হবে। ১৫ দিন পর আবারও গ্রামবাসী ঐক্যবদ্ধভাবে পলো বাওয়া উৎসবে যোগ দেবেন। আর এই ১৫ দিনের ভিতরে বিলে হাত দিয়ে মাছ ধরতে পারবেন গ্রামবাসীর যেকেউই।

 

এবছর বিলে পানি ও মাছের পরিমাণ কম থাকার কারণে পলো বাওয়া উৎসবে যোগ দেওয়া অনেক শৈখিন মাছ শিকারীকেই ফিরতে হয়েছে খালি হাতে। আর শিকারকৃত মাছের মধ্যে ছিল- বোয়াল, শউল, মিরকা, কারপু, বাউশ, ঘনিয়া, রুইসহ বিভিন্ন জাতের ছোট মাছ।

 

বার্ষিক পলো বাওয়া উৎসবে মাছ শিকার করতে নিজ নিজ হাতে পলো নিয়ে উৎসাহ-উদ্দিপনার সাথে বিলের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েন গ্রামবাসী। আর যাদের পলো নেই তারা টেলা জান বা উড়াল জাল দিয়ে মাছ শিকার করেন। এসময় মাছ ধরা নিজ চোখে দেখার জন্য ও উৎসবের আমেজ সকলের সাথে ভাগাভাগি করতে বিলের পারে ছোট শিশু থেকে বৃদ্ধ বয়সের নারী-পুরুষ, দূর থেকে আসা অনেকের আত্বীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবকে সাথে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন।

 

এব্যাপারে গোয়াহরি গ্রামের শৈখিক মাছ শিকারী ইকবাল হোসেন বলেন, পলো বাওয়া উৎসব আমাদের গ্রামের একটি ঐতিহ্য। আমার কাছে পলো বাওয়া উৎসব খুব মজার বিষয়। শত ব্যস্ততার মধ্যেও আমি এ উৎসবে অংশ গ্রহন করি। আমাদের গ্রামবাসী যুগ যুগ ধরে এই উৎসব পালন করে আসছেন।

 

মাদ্রাসা শিক্ষক গোয়াহরি মাওলানা লুৎফুর রহমান বলেন, আমি একটি মাদ্রাসার শিক্ষক। এই মাছ ধরায় অংশ নিতে পেরে খুব আনন্দ লাগছে।

 

যুক্তরাজ্য প্রবাসী আশরাফুজামান বলেন, প্রবাসে থাকার কারণে পলো বাওয়ায় অনেক বছর দেখিনি। এবার ওই উৎসবে যোগ দিতে পেরে আনন্দই লাগছে। পলো দিয়ে মাছ শিকার একটি মজার বিষয়।

 


সিলেটভিউ২৪ডটকম/প্রনঞ্জয়/এসডি-১৪