ক্রিকেট নিয়ে আমাদের উত্তেজনার শেষ নেই। বাংলাদেশে সবচেয়ে দামি খেলা ক্রিকেট। ক্রিকেটে স্পন্সর বেশি, সুযোগ-সুবিধা বেশি, আলোচনা বেশি, সমালোচনাও বেশি।এমনকি টাইগারদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে উপহার হিসেবে টাকা-ফ্ল্যাট-গাড়ি তো থাকেই। যে পরিমাণ সুযোগ-সুবিধা তারা পাই সেই হিসেবে ক্রিকেটের সাফল্য অনেক বেশি হওয়ার কথা ছিল। তা কি হয়েছে?

আমাদের ক্রিকেটে অবকাঠামোগত উন্নয়ন সেই অর্থে হয়নি। প্রান্তিকে খোঁজ নিয়ে দেখলে বোঝা যায়, ক্রিকেট খেলছে একটা নির্দিষ্ট শ্রেণির ছেলেমেয়েরা। সবাই খেলতে পারছে না। আমার নিজের উপজেলায় ভালো একটা খেলার মাঠও নেই। ক্রিকেটার তৈরি হওয়া তো দূরের কথা। আমার জেলাতে ভালো কোনো টুর্নামেন্ট পর্যন্ত হয় না। তাহলে শুধু ঢাকা বা জেলা শহর কেন্দ্র করে ভারত, পাকিস্তান, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকার মতো টিমের সাথে আমরা প্রতিযোগিতা করবো কীভাবে?


অন্যদিকে দেখেন, বিসিবির কোষাগারে ৯০০ কোটি টাকা আছে পড়ে আছে (প্রথম আলো, ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২১)। এই টাকা অলস। এই টাকা দিয়ে বিসিবি কী করছে? কোনো জবাবদিহিতা নেই। বিসিবি চাইলেই পারতো জেলা শহর বাদ দিয়ে প্রান্তিক পর্যায়ে ক্রিকেট একাডেমি করা, মাঠ তৈরি করা, ইনডোর স্টেডিয়াম তৈরি করা, দক্ষ খেলোয়াড় তৈরির কাজে লাগাতে।

সবচেয়ে বড় কথা হলো, নাজমুল হাসান পাপন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের ১৪তম সভাপতি। তার কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী থাকে না। সভাপতির চেয়ারে চতুর্থবারের মতো দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। ২০১২ সালে প্রথমে সরকার কর্তৃক মনোনীত সভাপতি ছিলেন তিনি। ২০১৩ সাল থেকে নির্বাচনের মাধ্যমে সভাপতি হন। ২০১৭ সালেও এই পদে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। (যুগান্তর, ০৭ অক্টোবর ২০২১) এতদিন ধরে কেন তিনি সভাপতিত্বের পদ আঁকড়ে পড়ে আছেন? তার সময়ে উন্নয়ন হয়েছে এটা অস্বীকার করার কোনো রাস্তা নেই। কিন্তু যে ধরনের উন্নয়ন হওয়ার কথা তা হয়নি। কিছুদিন পরপরই কিন্তু ক্রিকেট আলোচনায় আসে। গণমাধ্যমের শিরোনাম হয়। সেইসব আলোচনা দেখে মনে ক্রিকেট চলে অন্যের ইশারায়।

আমার তো মনে হয় বিসিবি পাপনের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। না হয় একজন ক্রিকেটার জুয়ার কোম্পানির সাথে চুক্তি করবে তা কেন বিসিবি জানবে না। খেলার আগের দিন ক্রিকেটাররা চলে যাচ্ছেন অর্থ আয়ের জন্য। কেউ কারো কথা শুনছে না।

শুধু তাই নয়, নারী ক্রিকেটার তো আরও বেশি অবহেলার শিকার। তাদের কথা কেউই জানতো না। যেখানে তাদের সর্বোচ্চ সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার কথা ছিল সেই জায়গায় তাদের বেতন ঠিক করতে আন্দোলন করতে হয়েছিল। এগুলো দৃষ্টিকটু। ক্রিকেটে অনেকদিন ধরেই সেই একই মুখ ঘুরে ফিরে আসছে। অথচ ভারতের প্রত্যেকটা ক্লাব পর্যায়ে এত ভালো ভালো খেলোয়াড় তৈরি হচ্ছে যে, তাদের নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা হচ্ছে সর্বোচ্চ।

জাতীয় দলে টিকে থাকার জন্য তাদের সর্বোচ্চ পরিশ্রম করতে হয়। আমাদের দেশে ঠিক তার উল্টো। সব জায়গায় আত্মীয়করণ। কে কার ভাতিজা, কে কার আত্মীয় তা দেখে আমরা তাদের জাতীয় দলে রাখছি। অথচ তার পারফর্মেন্স সবচেয়ে খারাপ। দিনের পর দিন সে শূন্য রানে আউট হচ্ছে। আরও রয়েছে ধর্মীয়করণের অভিযোগ। এইসব অভিযোগ থেকে বিসিবি মুক্ত নয়।

যারা আসলে বিসিবির দায়িত্বে আছেন তারা আসলে আমাদের লোক না। তারা আমাদের দায়িত্বে আছেন ঠিকই কিন্তু তারা আসলে আমাদের আপনজন না। যদি তাই হতো তাহলে দেশের জন্য যেটা ভালো হবে সেটা করতো, ক্রিকেটের উন্নয়নের কথা চিন্তা করে আত্মীয়করণে পড়ে থাকতেন না, দেশের স্বার্থে এই পদ ছেড়ে দিতেন।

ক্রিকেট নিয়ে আমি হতাশও না, আশাবাদীও না। আমার কথা হলো, মাঠে খেলোয়াড়রা তখনই ভালো খেলবে তখন মাঠের বাইরে খেলার ব্যাপারে আপনি নিশ্চিত করতে পারবেন। সেই নিশ্চয়তা কোথায়?