গত এক বছর ধরে বিএনপি-জামায়াত এবং কিছু কুচক্রী মহল থেকে গুজব ছড়ানো হচ্ছে যে বাংলাদেশ (দেউলিয়া) শ্রীলংকা হবে। আসলে এরা চাচ্ছেই বাংলাদেশ শ্রীলংকা হোক। এরা যখন বাংলাদেশের শ্রীলংকা হওয়া নিয়ে গুজব ছড়াতে ব্যস্ত, ঠিক সেই সময় ওদের পেয়ারা পাকিস্তান, শ্রীলংকা হওয়ার পথে অনেক ধাপ এগিয়ে গেছে। অন্যদিকে, বিএনপি-জামায়াতের গুজব এবং ফখরুলের প্রাত্যহিক মিথ্যাচারের মধ্যেই শেখ হাসিনা সরকার গত এক বছরে শ্রীলংকা তো হয়নি, বরং
(১) পদ্মা সেতু উদ্বোধন করেছে
(২) মেট্রোরেল উদ্বোধন করেছে
(৩) দেশের বিভিন্ন জেলায় একযোগে ১০০ সেতুর উদ্বোধন করেছে।
(৪) সারা দেশের ৫০টি জেলায় ২ হাজার ২১ দশমিক ৫৬ কিলোমিটার সম্মিলিত দৈর্ঘ্যের ১০০ রাস্তা-মহাসড়ক উদ্বোধন করেছে।
(৫) দেশের প্রথম পাতাল রেলের নির্মাণ কাজ শুরু করেছে।
(৬) নড়াইলে ৬ লেনের মধুমতী সেতু এবং নারায়ণগঞ্জে তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতু উদ্বোধন করেছে।
(৭) পিরোজপুরের কচা নদীর ওপর নির্মিত বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুননেছা মুজিব অষ্টম বাংলাদেশ চীন-মৈত্রী সেতুর উদ্বোধন করেছে।
(৮) রাজশাহীতে এক হাজার ৩১৭ কোটি টাকার ২৫টি প্রকল্প উদ্বোধন করেছে।
(৯) যমুনা নদীতে বঙ্গবন্ধু রেলসেতু ১ কিলোমিটার দৃশ্যমান হয়েছে।
(১০) ইউরোপে পোশাক রফতানিতে চীনকে পেছনে ফেলে শীর্ষে উঠে এসেছে বাংলাদেশ।
(১১) ডিজিটাল জীবনযাত্রার বৈশ্বিক সূচকে ২৭ ধাপ এগিয়েছে বাংলাদেশ।
(১২) সামাজিক নিরাপত্তা খাতের বরাদ্দ বেড়েছে।
(১৩) দেশের আরও ৯ টি জেলায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
(১৪) বিয়ানীবাজার কূপ থেকে জাতীয় গ্রিডে গ্যাস সরবরাহ শুরু করেছে।
(১৫) বড়পুকুরিয়া খনি থেকে পুরোদমে কয়লা উত্তোলন শুরু করেছে।
(১৬) আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে লক্ষাধিক গৃহহীন পরিবারের নবজীবনের ঠিকানা মিলেছে।

উন্নয়নের এই লিস্ট লিখতে গেলে আরও অনেক পাতা লাগবে, এ জন্যই এখানেই শেষ করলাম। সরকারের প্রতিটি উন্নয়ন-কাজ মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি করবে, ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধি করবে, জীবনে সচ্ছলতা আনবে। মনে রাখবেন খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষা এবং অন্যান্য নাগরিক সুবিধা আকাশ থেকে পড়ে না। উন্নয়ন কর্মকাণ্ড সফলভাবে বাস্তবায়নের মাধ্যমেই এই নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করা হয়।


পৃথিবীর অন্যান্য স্বল্পোন্নত দেশগুলোর মতো বাংলাদেশেও দুর্নীতি আছে, এদেশ থেকেও অর্থ পাচার হয়। দল-মত নির্বিশেষে অনেকেই দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের সঙ্গে যুক্ত। এই রোগ বাংলাদেশে আগেও ছিল, এখনও আছে। বিএনপি-জামায়াত আমলে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে অনেকেই অন্যায়-অনিয়ম-দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের সঙ্গে যুক্ত ছিল, আর এখন তা হয় না। তবে, দেশের বিভিন্ন স্তরে দুর্নীতি আছে, অস্বীকার করা যাবে না। পৃথিবীর কোনও দেশই এই রোগগুলো থেকে মুক্ত নয়। কাজেই, দুর্নীতি বা অর্থ পাচার না হলে আরও উন্নয়ন হতো- এসব কথা বলে হা-হুতাশ করার কিছু নেই। যা সম্ভব নয় তা নিয়ে ভেবে কী লাভ? তবে, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সর্বোচ্চ পর্যায়ে দুর্নীতি কমে এসেছে, এজন্য আমরা আর দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হই না। এমনকি প্রথম দশের মধ্যেও থাকি না।

পত্র-পত্রিকায় মাঝে মধ্যে দুর্নীতি ও অর্থ পাচার নিয়ে ধারণাপ্রসূত এবং অসত্য খবর ছাপে। পদ্মা সেতু নিয়েও আপনাদের মনে থাকার কথা, বিশ্ব ব্যাংকের বায়বীয় অভিযোগের ভিত্তিতে দেশের পত্রিকাগুলো পদ্মা সেতু নিয়ে দুর্নীতির হেডলাইন করতো, মানুষকে বিশ্বাস করিয়ে ফেলেছিল পদ্মা সেতুতে দুর্নীতি হয়েছেই হয়েছে। কিন্তু পরবর্তীতে কানাডার আদালত রায় দিয়েছিল সেখানে কোনও দুর্নীতিই হয়নি। আমাদের পত্র-পত্রিকাগুলো কখনও কখনও তাদের কাটতি বাড়ানোর নষ্ট প্রতিযোগিতায়  লিপ্ত হয় এবং এমন খবর ছাপে।

দেশ থেকে এত অর্থ-পাচার হলে, এত দুর্নীতি হলে, এত উন্নয়ন সম্ভব হতো না। শেখ হাসিনার প্রতিটি উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের সুফল ভোগ করছে এদেশের মানুষ। সমস্যা হচ্ছে কিছু সুবিধাভোগী মানুষ এগুলো অস্বীকার করে এবং বৈশ্বিক বাস্তবতায় আমরা যে এখন একটু সংকটে আছি, কিছুটা চাপের মধ্যে আছি -সেই সংকটের উদাহরণ টেনে কুতর্ক করে।

বাংলাদেশকে দেউলিয়া বানানোর এত চেষ্টা করে লাভ হয়নি। অপপ্রচার করে একটি দেশকে দেউলিয়া বানানো যায় না। কিছুদিন আগেও বাংলাদেশ শ্রীলংকাকে ঋণ দিয়েছে। আমাদের অর্থনীতি এমন একটি স্থানে পৌঁছেছিল যে আমরা অন্যদের ঋণ দেওয়া শুরু করেছিলাম।

২০২০ সালের পর থেকে করোনা মহামারি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রভাবে বিশ্ব অর্থনীতি টালমাটাল হয়ে পড়েছে। ২০২২ ও ২০২৩ সালে বিশ্ব এক ভয়াবহ আর্থিক মন্দার কিনারায় এসে দাঁড়িয়েছে। এই বাস্তবতায়, আমরা সতর্কতা অবলম্বনের স্বার্থে আইএমএফ থেকে ঋণ চেয়েছিলাম। এই ঋণ নিয়েও একটি মহল অপপ্রচার করেছে। তারা বলেছে বাংলাদেশে এতই দুর্নীতি হয় এবং বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থা এতই খারাপ যে আইএমএফ বাংলাদেশকে ঋণ দেবে না। আইএমএফ-এর ঋণ অনুমোদন যেন বাংলাদেশের জন্য একটি পরীক্ষার মতো সামনে এসে দাঁড়ায়। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ সেই পরীক্ষায়ও পাস করেছে। কিন্তু থেমে নেই গুজববাজদের গুজব।

জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন সংস্থার সম্মেলনে বলা হয়, “বিশ্ব অর্থনীতি এখন প্রবল ঢেউয়ের বুকে থাকা তরীর মতো দুলছে। গত তিন বছরে একটার পর একটা আঘাত এসেছে অর্থনীতিতে। যার প্রভাবে বিশ্বজুড়ে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে, বিশেষ করে জ্বালানি ও খাদ্যপণ্যের দাম অনেক বেড়ে গেছে। ভূরাজনৈতিক সংকটের কারণে এগুলো মোকাবেলা করা কঠিন হয়ে পড়েছে।”

এই বাস্তবতায়, যারা আজকে বাংলাদেশে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি নিয়ে অভিযোগ করছে, তাদেরকে বোঝাবে কে? গত ১৪ বছরে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ধারাবাহিক উন্নয়ন না হলে আজকে বাংলাদেশে ঝড় বইতো, সুনামি হতো। বিএনপি-জামায়াতের হাতে দেশ থাকলে বাংলাদেশ নির্ঘাত শ্রীলংকা হতো, নিদেনপক্ষে পাকিস্তান তো হতোই।

লেখক: চেয়ারম্যান, সুচিন্তা ফাউন্ডেশন