ছবি : পল্লব ভট্টাচার্য্য

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গানে- ‘আয় তবে সহচরী হাতে হাতে ধরি ধরি...’

অনেকটা সেরকমই হাত ধরাধরি আবারও আমাদের মাঝে এলো পয়লা ফাল্গুন আর বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। আজ মঙ্গলবার- পয়লা ফাল্গুন, ‘বসন্ত জাগ্রত দ্বারে’। আর মনের গহীনে প্রিয়জনের নামটি ভালোবেসে লেখার দিনটিও আজ- ১৪ ফেব্রুয়ারি, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস।


সারাদেশের ন্যায় সিলেটের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সাংস্কৃতিক-সামাজিক সংগঠনের উদ্যোগে দিবস দুটি নানা বর্ণিল আয়োজনে পালন করা হবে।

ঋতুচক্রের নিয়মে ফের আমাদের মাঝে ফিরেছে ঋতুরাজ বসন্ত। নিষ্পত্র শাখাগুলোতে নবীন কিশলয়। অজস্র পলাশ, শিমুল, কৃষ্ণচূড়ার রক্তিম আভায় বনে লাগছে আগুন। তার আঁচ লাগছে নবীন-প্রবীণ মনেও। ভোরের বাতাসে জেগে উঠছে নতুন প্রাণ।

এ ঋতু ফুলের ঋতু। পশ্চিমের বসন্তে চেরি ফুলে ভরে ওঠে প্রকৃতি। আমাদের বসন্তের ফুলের যেন অভাব নেই। কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া, কাঁঠালচাঁপা, কাঠগোলাপ, নাগেশ্বর, রুদ্রপলাশ, মহুয়া, রক্তকাঞ্চন, দেবদারু, স্বর্ণশিমুল—কত কত ফুল। এ বসন্তে থোকায় থোকায় ফোটে নজরুলের প্রিয় ফুল দোলনচাঁপা। ফোটে রবীন্দ্রনাথের প্রিয় ফুল অশোক, পলাশ, শিমুল। 

তাই বসন্ত ভালোবাসার ঋতু। অনুভব আর আবেগের ঋতু। পশ্চিমের ভ্যালেনটাইনস ডে বা ভালোবাসা দিবসের ধারণা এসে মিলেছে আমাদের বসন্তে। বাংলা একাডেমি পঞ্জিকা সংশোধনের পর এখন পহেলা ফাল্গুন আর ভালোবাসা দিবস একই দিনে উদযাপিত হয়। ভালোবাসার মানুষকে আরো কাছে পাওয়ার সময় এ বসন্ত। বসন্ত আসে তরুণের পোশাকে, মননে, সংগীতে। বাঁধনহারা মন এ সময় গেয়ে ওঠে, ‘মধুর বসন্ত এসেছে মধুর মিলন ঘটাতে। ’

তবে বসন্ত কেবল প্রেমের ঋতু নয়। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে বাঙালির দ্রোহের ইতিহাসও। এমনই এক বসন্তে বাঙালি ভাষার জন্য আন্দোলন করেছিল। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি দিনটি ছিল ৮ ফাল্গুন। সেদিন মাতৃভাষার  মর্যাদা রাখতে জীবন দিয়েছিলেন সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, শফিউর।

বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের হাত ধরে বাঙালি করেছে বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলন, উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান, একাত্তরের অসহযোগ আন্দোলন আর ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ। সেদিক থেকে দেখতে গেলে বসন্তে রোপিত হয়েছিল বাংলাদেশের জন্মের বীজ।

তেমনি আশির দশকে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন এক চূড়ান্ত রূপ নিয়েছিল এমনই এক বসন্তে। ১৯৮৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি প্রাণ দিয়েছিলেন জাফর, জয়নাল, মোজাম্মেল, আইয়ুব, কাঞ্চন, দিপালীরা। সেই আন্দোলনের পথ বেয়ে নব্বইয়ে বাংলাদেশ পেয়েছিল গণতন্ত্রের স্বাদ।

দ্রোহ হোক বা প্রেম, বসন্ত আমাদের জীবনে বয়ে নিয়ে আসে নতুন আশা। রুক্ষ শীত শেষে বসন্তের আগমনে প্রকৃতিতে জাগে নতুন আনন্দ। অথচ সময়টা মলিন। করোনা মহামারির একের পর এক ঢেউ আমাদের শঙ্কিত মনকে বিবর্ণ করে তুলেছে। বসন্তকে তাই আরো বেশি প্রয়োজন এখন।

এবারের বসন্ত নতুন জীবনীশক্তিতে প্রকৃতি ও প্রাণকে ভরিয়ে তুলুক। বসন্তের দোলা লাগুক বনে, প্রতি মনে।


সিলেটভিউ২৪ডটকম / ডালিম