মাননীয় মন্ত্রী,
সশ্রদ্ধ সালাম জানাই। আমি ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যের ছাত্র এবং দেশে-বিদেশে ৪৫ বছরেরও অধিককালের শিক্ষক। একমাত্র শাহজালাল বিশ^বিদ্যালয়েই প্রায় ২৯ বছর। বিভাগের প্রতিষ্ঠাকালীন ও প্রায় দেড়যুগেরও বেশি সময়ের বিভাগীয় প্রধান।

 


ভাগ্যিস্, দীর্ঘ ৭ বছরে ইংলিশের উপর আমি একটিমাত্র ডিগ্রি (পিএইচডি) অর্জন করতে সক্ষম হয়েছিলাম। নতুবা, আজ হয়ত এই জায়গায় উঠে আসতে পারতাম না।

কিছুদিন থেকে ৬ষ্ঠ ও ৭ম শ্রেণির ২/৩ টি নতুন পাঠ্যবই নিয়ে অনেক কথা শুনতে পাচ্ছিলাম, কিন্তু কোন একটি বই আজও আমি হাতে পাই নি, বা, পাওয়ার চেষ্ঠাও করতে পারি নি। পত্রিকান্তরে দেখলাম, প্রয়োজনীয় সংশোধনের নিমিত্তে বইগুলো আপনি উঠিয়ে নিচ্ছেন। যদি কখনো হাতে পাই, তাহলে আমার পাঠ-মতামত/পাঠ-প্রতিক্রিয়া আপনাকে লিখব/জানাব।

আমি দেশের, বিশেষ করে মাধ্যমিকের, ইংরেজি পাঠ্যবই নিয়ে অনেক দিন থেকে খুবই বিব্রত আছি। কোন কোন শ্রেনীর বই মাঝে-মধ্যে হাতে আসে, আর চোখ বুলিয়ে ঠান্ডা হয়ে যাই/অনেকটাই বোকা বনে যাই। আজ লিখতেই বাধ্য হলাম। আমার এই লেখা কোন সাধারনের জন্য নয়, কারণ, কোন সাধারণ মানুষ তো এগুলো হুবহু বুঝা দূরের কথা; আমার বিশ্বাস, অনেক উচ্চ-শিক্ষিতজনেরও এগুলো সত্যিকারভাবে অনুধাবন করা কষ্টকর হবে। তাই, আমার এ লেখা শুধু আপনার জন্য; আর, বিষয়-এক্সপার্টদের জন্য। 

আমি আপাদমস্তক একজন শিক্ষক; দেখতে ও শুনতে চাই গোটা দেশের বাচ্চাদের ইংরেজি শেখার বিশুদ্ধতা। নচেৎ, এত দীর্ঘদিনের একজন শিক্ষক হিসেবে আমি আমাদের বাচ্চাদের কাছে ও একদিন জাতির কাছে নীতিগতভাবে দায়বদ্ধ থেকে যাব।

অনেক দিন পূর্বে আমি প্রথমেই ৮ম শেণীর ইংরেজির টেক্সটবইটি নিয়ে লিখতে চেয়েছিলাম, ওটা একসময় আমার হাতে এসেছিল। এ মহূর্তে আর সেটি পাই নি।

আজ আমি ৯ম-১০ম শ্রেণীদ্বয়ের একটি ইংরেজি পাঠ্যবই যোগাঢ় করতে পেরেছি, আর, তাই, এটির উপরেই লিখতে বসেছি। দেখলাম, এ বইটির থার্ড রিভাইজ্ড্ ইডীশন বেরিয়েছে নভেম্বর-২০২০-এ, এবং, রিপ্রিন্ট হয়েছে অক্টোবর-২০২১-এ।

বইটি খুলতেই বইয়ের ২০২ নম্বর পৃষ্ঠাটি অকস্মাৎই বেরিয়ে গেল, পড়লাম। তারপর নিজের ইচ্ছায় পড়লাম ‘প্রিফেস’, পরে বেরিয়ে গেল ১৪ নম্বর পৃষ্ঠা। আর, আজ আমি এগুলোর মধ্যেই আমার লিখা সীমাবদ্ধ রাখবঃ  

 

ক) ২০২ নম্বর পৃষ্ঠা এবং ‘প্রিফেস’-পৃষ্ঠাঃ

১) ২০২ নম্বর পৃষ্ঠার শুরুতে ১১ নম্বরে ‘সাপোজ’ এর পরে ‘ক্ষমা’ আছে। অনুরূপভাবে, একই লাইনে ‘ইয়েস্টারডে’-র পরেও একটি ‘ক্ষমা’ বসা উচিৎ ছিল। এটা ইংরেজি ভাষাবিজ্ঞানের দাবি। একই পৃষ্ঠায়, ‘সাবজেক্ট’ এর পরে শিরোনামের বিষয়টির ‘এস্’ অক্ষরটি যেমন আছে ক্যাপিটাল লেটার, তেমনি ‘প্যাট্রিওটিজম’ এর ‘পি’-অক্ষরটিও ক্যাপিটাল লেটার হওয়া বাঞ্চনীয় ছিল। 

২) ‘আই নো’, এর পরে একটি ‘ক্ষমা’ বসবে। পরের লাইনে ‘বাট’ এর পরেও ‘ক্ষমা’ দেয়া জরুরি ছিল।

৩) বড় প্যারাগ্রাফের ‘ইন এ্য রিকশা’ বসা উচিৎ ছিল ‘মাই স্কুল’ এর পরে। আর, এখনে ‘ইন্’ হবে না, হবে ‘বাই’। ‘ইন এ্য রিক্শো’ শেষে হওয়ায় বুঝা যায়, আফসানা রিক্সার ভেতরে পরীক্ষা দিতে যাচ্ছিল। কত বড় ভুল? প্রসঙ্গক্রমে বলছি, এবং আপনারও জানা আছেঃ বাংলা ‘ভুল’ শব্দের ইংরেজি সিনোনীমস্ হচ্ছে মূলত দু’টিঃ ‘মিসটেক’ এবং ‘এ্যারার’। ‘মিস্টেক’ হচ্ছে সেটি, যেটি ব্যক্তি জানেন, কিন্তু কোনভাবে স্লিপ হয়ে গেছে। এটা ক্ষমার্হ। আর, ‘এ্যারার’ হচ্ছে ঐটি, যেটি ব্যক্তি আদৌ জানেনই না। সত্যিকারের শিক্ষিতদের জন্য এটা ক্ষমার অযোগ্য। 

৪) ‘অন্ দ্য রোড সাইড’ দিয়ে বুঝানো হয়েছে রাস্তার যে কোন এক সাইড, নির্দিষ্ট কোন এক সাইড নয়। তাই, নির্দিষ্ট না হওয়ায় ‘দ্য’ এর পরিবর্তে এখানে হবে ‘এ্য রোড সাইড’, অথবা ‘ওয়ান রোড সাইড’, অথবা ‘ওয়ান অব দ্য রোড সাইড্স্’।

৫) ‘১৬ ডিসেম্বর’ আমাদের একটাই নির্দিষ্ট বিজয় দিবস। তাই তার আগে ‘দ্য’ বসবে।

৬) ‘আই রিয়্যেলাইজ্ড্’-এ আছে ‘যেড্’, আর, এক লাইন পরে ‘রিয়্যেলাইজিং’-এ আছে ‘এস্’। ‘প্রিফেস’ পৃষ্টার ‘গ্লোবালাইজেশন’-এ আবার আছে ‘যেড্’। এ যাচ্ছে-তাই লাইসেন্স কে কীভাবে পেলেন, মাননীয় মন্ত্রী? আমরা তো পড়াই বৃটিশ ইংলিশ, আমেরিকান ইংলিশ নয়।

৭) ‘প্রিফেস’ পৃষ্ঠায় ‘ই’ দিয়ে ‘বেঙ্গলি’ শব্দটি যেহেতু একটি ঔপনিবেশিক শব্দ, তাই এটা হওয়া উচিৎ ছিল ‘এ্য’ দিয়ে ‘বাঙ্গালি’। আমাদের ২৬৬ দিনের মহান মুক্তিযুদ্ধ ছিল নির্দিষ্ট একটাই। তাই, ‘লিবারেশন ওয়ার’ এর পূর্বে ‘দ্য’ বসাতে হবে। ‘১৯৭১’ এর পূর্বে এবং ‘ওয়ার’ এর পরে একটি ‘ক্ষমা’ দেয়া প্রয়োজন, অথবা বলতে হবে, ‘ইন্ ১৯৭১’। 

৮) একই প্যারার শেষ লাইনে ‘রিলীজন্স’ শব্দটি যেমন বহুবচন, ‘সেক্স’ শব্দটিও তেমনি বহুবচন হওয়ার একান্ত প্রয়োজন ছিল। ‘অনারেবল’-এ ‘ইউ’ দেয়া হয়নি। ইচ্ছামত চলার কি সুযোগ আছে আমার, মন্ত্রী মহোদয়? ‘এ্যট হোম এ্যন্ড এব্রোড’-এখানে  ‘হোম‘ এর আগে ‘এ্যট’ লাগবে না। কারণ, ‘এ্যট হোম’ মানে হচ্ছে ‘দক্ষ’। ‘টেক্সটবুক্স’ শব্দটি বহুবচন; তাই, বাক্যের প্রথমে ‘দ্য’-এর প্রয়োজন নেই, যেমন হয়েছে ‘এ্যডিটোরিয়্যাল’ পৃষ্ঠায়, ওটা শুদ্ধ। 

৯) ‘লার্নার’ এবং ‘ফ্রেন্ডলি’-শব্দ দু’টির মাঝখানে একটি ‘হাইফেন’ বসবে। ‘২০১৭’ এবং ‘২০২০’ যেহেতু আলাদা দু’টো সাল/বছর, সেহেতু, ‘২০২০’ এর পূর্বেও আবার প্রিপোজীশন ‘ইন্’ বসবে।

 

খ) ১৪ নম্বর পৃষ্ঠাঃ

১) প্রথম লাইনের ‘আধার’-এর ‘ও’/‘অ’ হবে ক্যাপিটাল লেটার।

২) দ্বিতীয় লাইনের ‘প্যায়ার’ শব্দটি হবে বহুবচন=‘প্যার্য়াস্’, কারণ, যে কোন একটি ক্লাসে অনেক জোড়া শিক্ষার্থী থাকতেই পারে।

৩) ‘রিল্যাশনশিপ’-এর সাথে ‘এস্’ লাগবে, হবে বহুবচন=‘রিল্যাশনশিপস’।

৪) সেকশন ‘বি’ এর প্রথম লাইনের ‘বাট’ পরে ‘ক্ষমা’ আছে=শুদ্ধ। অপরপক্ষে, উপরে উল্লেখিত ‘বাট’-এর পরে ‘ক্ষমা’ দেয়া হয় নি; কিন্তু, দেয়ার প্রয়োজন ছিল, এটা ইংরেজি ভাষার দাবি।

৫) দি¦তীয় লাইনের ‘কারেজ’ শব্দটির পরে অবশ্যই একটি ‘ক্ষমা’ বসবে।

৬) ‘বঙ্গবন্ধু’ ও ‘লেড’, শব্দযুগলের এর মধ্যখানে একটা ‘হাইফেন’ লাগবে।

৭) ‘ইয়েট’-এর পরে ‘ক্ষমা’ বসবে।      

একটিমাত্র পাঠ্যবইয়ের মাত্র ৩টি পৃষ্ঠার উপরে আমাকে এতকিছু লিখতে হল, সত্যিই আমি দুঃখিত ও লজ্জিত। না জানি বইটির মোট ২০৩ পৃষ্ঠার উপর লিখতে গেলে কতটি কলাম্স্ লিখতে হবে।
 
আমরা এ-ও জানিঃ দোষা-দোষির খেলা সব চাইতে বাজে খেলা; তাই, এখানে কোন দোষা-দোষি নয়, এটা স্রেফ আমাদের কচি-মনা বাচ্চাদের সুন্দর ও সফল ভবিষ্যতের জন্য। সবাই বলেনঃ শিক্ষকগণ তো মানুষ গড়ার কারিগর! হায় আফসোস, এই ‘আমি’ কারিগরের জন্য! আর, এই আমি কারিগর, সত্যি কথা বলতে গেলে, আমাদের বাচ্চাদের ভবিষ্যৎ জীবন নিয়ে পুতুল-খেলা খেলছি, এই আর কি?

 

লেখকঃ মোঃ আতী উল্লাহ (বিসিএস, পিএইচডি), ইংরেজি বিভাগের প্রতিষ্ঠাকালীন ও দীর্ঘদিনের বিভাগীয় প্রধান, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট এবং দেশে-বিদেশে সাড়ে চার দশকেরও অধিক সময়ের ইংরেজি সাহিত্য এবং ইংরেজি ভাষার শিক্ষক। 

 

সিলেটভিউ২৪ডটকম/ নাজাত-০১