নানা আয়োজন ও উৎসবমুখর পরিবেশে ম্যানিলাস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদযাপন করেছে।
একই সাথে বাংলাদেশ-ফিলিপাইন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে দূতাবাস কর্তৃক বর্ষব্যাপি আয়োজিত অনুষ্ঠানের সমাপনী ঘোষণা করা হয়।
সোমবার (২৭ মার্চ) সন্ধ্যায় ম্যানিলার প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত অভিজাত পাঁচ তারকা হোটেল ’দুসিত থানি ম্যানিলা’-এর বলরুমে এক বর্ণাঢ্য সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- ফিলিপাইনের পররাষ্ট্র বিভাগের সেক্রেটারী (পররাষ্ট্রমন্ত্রী) এনরিকে মানালো।
ফিলিপাইনের প্রধান বিচারপতি আলেকজান্ডার গেসমুন্ড, সিনেটর সিনিথয়া ভিলিয়ার, মাকাতি সিটি মেয়র মারলিন বিনায়, কূটনৈতিক কোর প্রধান চার্লস ব্রাউনসসহ অন্যান্য রাষ্ট্রদূত ও কূটনীতিবৃন্দ, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধানগণ, ফিলিপিনো পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও অন্যান্য সরকারি বিভাগসমূহের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাবৃন্দ, এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংকের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাবৃন্দ, বাংলাদেশ ও অন্যান্য দেশের অনারারি কনসালবৃন্দ, ফিলিপিনো সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকবৃন্দ, ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সদস্যবৃন্দ এবং আন্তর্জাতিক ও বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে কর্মরত প্রবাসী বাংলাদেশীসহ প্রায় তিনশত অতিথি এই অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানে অংশ নেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে ফিলিপাইন ও বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করে ফিলিপাইনের জনপ্রিয় গানের দল Coro San Benildo Performing Group। এরপর রাষ্ট্রদূত এফ. এম. বোরহান উদ্দিন অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথিদের স্বাগত জানিয়ে শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করেন।
বক্তব্যের শুরুতে তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের সকল শহিদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং মা-বোনদের চরম আত্মত্যাগের কথা গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধের অব্যবহিত পরেই বাংলাদেশকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি প্রদানের জন্য ফিলিপাইনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। বিশেষভাবে তিনি জাতিসংঘ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থায় বাংলাদেশের সদস্যপদ লাভে ফিলিপাইনের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ফারদিনান্দ মার্কোস সরকারের ভ‚মিকার কথা উল্লেখ করেন।
রাষ্ট্রদূত বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে আর্থ-সামাজিক সকল ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে।
তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ ইতোমধ্যে অর্থনীতিতে ৩৫তম বৃহত্তম দেশে পরিণত হয়েছে এবং ২০৩১ সালের মধ্যে একটি মধ্যমে আয়ের দেশে পরিণত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এছাড়া তিনি বাংলাদেশ ও ফিলিপাইনের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক এবং বিভিন্ন পর্যায়ে চলমান দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতামূলক সম্পর্কের কথা তুলে ধরেন এবং এ সম্পর্কের নতুন উচ্চতায় উন্নীতকরণে দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্যে সেক্রেটারী মানালো বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেন এবং বাংলাদেশের সাথে ফিলিপাইনের দীর্ঘদিনের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের কথা উল্লেখ করেন।
তিনি বাংলাদেশের সাথে কৃষি, বাণিজ্য, পর্যটনসহ বিভিন্ন খাতে সম্পর্ক জোরদার করার পাশাপাশি দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার বিবিধ ক্ষেত্রে বিদ্যমান অমিত সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে ঘনিষ্ঠ অংশীদার হিসেবে একযোগে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। সেই সাথে তিনি দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উত্তরোত্তর সফলতা কামনা করেন।
বক্তব্য শেষে রাষ্ট্রদূত বোরহান উদ্দিন সেক্রেটারী মানালো, প্রধান বিচারপতি গেসমুন্ড, সিনেটর ভিলিয়ার, ক‚টনীতিক কোর প্রধান চার্লস ব্রাউন এবং মাকাতি সিটি মেয়র বিনায়কে সাথে নিয়ে কেক কাটেন। অতঃপর এক জাঁকজমকপূর্ণ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে Coro San Benildo Performing Group এর ফিলিপিনো সদস্যদের দেশাত্মবোধক বাংলা গান পরিবেশনা উপস্থিত সকলকে মুগ্ধ করে। এরপর এক জমকালো ফ্যাশন শো এর মাধ্যমে ফিলিপিনো ও বাংলাদেশি নারীরা বিভিন্ন শাড়ি আমন্ত্রিত অতিথিদের সামনে তুলে ধরেন। জামদানি, মসলিন, তসর, কাতান, রাজশাহী সিল্কসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন অ লের নানান ধরণের বর্ণিল শাড়ি সংগ্রহ ও এর প্রানবন্ত উপস্থাপনা সকল অতিথিদের ব্যাপক প্রশংসা কুড়ায়।
অভ্যর্থনা কক্ষের প্রবেশ পথে বাংলাদেশের কৃষি, গার্মেন্টস, পাট, চামড়াসহ অন্যান্য সম্ভাবনা খাতসহ পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটসহ বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের স্থির চিত্র তুলে ধরা হয়। পাশাপাশি অনুষ্ঠানের নেপথ্যে যন্ত্রসঙ্গীতের সাথে সাথে বাংলাদেশের উন্নয়ন ও ভ্রমণ বিষয়ক বিভিন্ন প্রমাণ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়।
ইতোপূর্বে রবিবার (২৬ মার্চ ২০২৩) বাংলাদেশ দূতাবাসে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের আনুষ্ঠানিক কর্মসূচি পালন করা হয়। দিবসটি উপলক্ষ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং দূতালয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। এরপর রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর প্রদত্ত বানীসমূহ পাঠ করা হয় এবং মহান স্বাধীনতা দিবসের তাৎপর্য বিষয়ে আলোচনা হয় এবং বিশেষ প্রামান্যচিত্র প্রদর্শিত হয়।
ফিলিপাইনের বহুল প্রচারিত ইংরেজি ‘দৈনিক ফিলিপাইন স্টার’-এ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে ৩ পৃষ্ঠাব্যাপী বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশিত হয়।
সিলেটভিউ২৪ডটকম/ডেস্ক/এসডি-১৩