দেশের নাগরিকদের মুঠোফোনের কল ডাটা (সি.ডি.আর) আর জাতীয় পরিচয়পত্রের (এন.আই.ডি) তথ্য নিরাপত্তার প্রশ্নে গোপন জিনিস। শুধু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী চাইলে সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে এসব তথ্য সংগ্রহ করতে পারে। তবে সাধারণ কেউ আইনি প্রয়োজনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহযোগিতার মাধ্যমেই এসব বিষয় জানতে পারেন। নতুবা এসব নিয়ে ঘাটাঘাটি করা আইনত শাস্তিযোগ্য অপরাধ। আর সেই ভয়ংকর অপরাধ সিলেটে বসে দীর্ঘদিন ধরে করে যাচ্ছিলেন সুনামগঞ্জের তরুণ মো. রুমেন হোসেন (২৩)। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। বন্দী হতে হয়েছে র‍্যাবের জালে।

র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)-৯ এর একটি দল গত রবিবার (২৬ মার্চ) দুপুরে ঝটিকা অভিযান চালিয়ে সিলেট মহানগরের শামীমাবাদ এলাকার ৩ নং রোডের একটি বাসা থেকে সাইবার অপরাধী রুমেনকে গ্রেফতার করে। তিনি সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক থানার কুমারকান্দি গ্রামের মৃত আফরোজ মিয়ার ছেলে। রুমেন দীর্ঘদিন ধরে শামীমাবাদের ওই তিন তলা বাসার নিচতলায় একটি ইউনিট ভাড়া নিয়ে চালিয়ে যাচ্ছিলেন সাইবার ক্রাইম। গ্রেফতারের পরদিন তাকে আদালতে প্রেরণ করা হলে বিজ্ঞ বিচারক কারাগারে পাঠান।


গ্রেফতারের পর র‍্যাব-৯ এর পক্ষ থেকে বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সংবাদমাধ্যমকে জানানো হয়, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে র‍্যাব জানতে পারে- শামীমাবাদের ওই বাসায় অবস্থান করে ডিজিটাল প্লাটফর্ম ব্যবহার করে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করছে একটি চক্র। পরে রবিবার অভিযান চালিয়ে বাসাটি থেকে রুমেনকে গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতারের সময় রুমেনের কাছ থেকে সাইবার ক্রাইমে ব্যবহৃত ১টি ল্যাপটপ ও ১টি ডেস্কটপ কম্পিউটার, ৩টি স্মার্ট ফোন ও ৪টি সিম কার্ড জব্দ করে র‍্যাব।

র‍্যাব জানায়, এটি একটি সংবদ্ধ চক্র। চক্রটির মূলহোতা রুমেন। তার আরও সহযোগী রয়েছেন। চক্রটি টাকার বিনিময়ে একজনের মুঠোফোনের কল ডাটা (সি.ডি.আর) এবং জাতীয় পরিচয়পত্রের (এন.আই.ডি) তথ্য সংগ্রহ করে অন্যজনের কাছে সরবরাহ করতো। এটি তারা ইন্টারনেটের মাধ্যমে একটি টেলিগ্রাম আইডি ব্যবহার করে করতেন। জব্দকৃত কম্পিউটার ও মুঠোফোনে এর প্রমাণ পেয়েছে র‍্যাব।

র‍্যাব-৯ এর মিডিয়া অফিসার সিনিয়র এএসপি আফসান-আল-আলম মঙ্গলবার (২৮ মার্চ) বিকালে সিলেটভিউ-কে বলেন- ‘এই অপরাধ একটি চক্রের মাধ্যমে সংঘটিত হতো। রুমেন এর মূলহোতা। তাকে জিজ্ঞাসাবাদে নেপথ্যে থাকা আরও সক্রিয় একজনের নাম পাওয়া গেছে। তবে তদন্তের স্বার্থে এই মুহুর্তে নামটি প্রকাশ করা যাচ্ছে না।’

গ্রেফতারের পর রুমেনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে র‍্যাব। সিনিয়র এএসপি আফসান-আল-আলম বলেন- ‘এসময় রুমেন তার নেপথ্যের সহযোগির নাম-ঠিকানা বলেন। তবে তিনি জানান- ওই ব্যক্তির সঙ্গে কোনোদিন দেখা হয়নি, শুধু অনলাইনে কথোপকথন ও তথ্য আদান-প্রদান হতো। আড়ালের ব্যক্তিই রুমেনকে লোকজনের সি.ডি.আর এবং এন.আই.ডি’র তথ্য সংগ্রহ করে দিতেন। এর বিনিময়ে তাকে টাকা দিতেন রুমেন। পরে তিনি তথ্যগুলো অন্যের কাছে চড়া দামে বিক্রি করতেন।’

এক প্রশ্নের জবাবে র‍্যাব কর্মকর্তা সিলেটভিউ-কে বলেন- ‘আড়ালের ওই ব্যক্তি কোনো ফোন কোম্পানি বা এন.আই.ডি-সংশ্লিষ্ট সরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকির করেন কি না তা এখনও জানা যায়নি। এ বিষয়ে আরও তদন্ত করছে র‍্যাব। এছাড়া যত দ্রুত সম্ভব ওই ব্যক্তিকে গ্রেফতারের চেষ্টাও করা হচ্ছে।’

এদিকে রুমেনকে গ্রেফতারের পর সিলেট কোতোয়ালি থানায় হস্তান্তর করে র‍্যাব। সোমবার (২৭ মার্চ) পুলিশ তাকে আদালতে প্রেরণ করলে বিজ্ঞ বিচারক কারাগারে প্রেরণ করেন।


সিলেটভিউ২৪ডটকম / ডালিম