সিলেটের বিয়ানীবাজারে একটি বাড়ির কেয়ারটেকার মধ্যরাতে হঠাৎ উধাও হয়েছেন। তাঁকে খুঁজতে গিয়ে তার বিছানায় পাওয়া যায় রক্তসাদৃশ্য লাল তরল কিছুর দাগ।
শুক্রবার (৩১ মার্চ) ভোরে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় থানাপুলিশ। তবে ওই নিখোঁজ হওয়া কেয়ারটেকারের বিছানার এই দাগ আসলে রক্তের কি না তা নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে। ল্যাবে পাঠিয়ে পরীক্ষা করে দেখছে পুলিশ।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার মাথিউরা ইউনিয়নের পূর্বপাড় গ্রামের আবদুল হেকিমের বাড়ির কেয়ারটেকার ছিলেন তাইজুল ইসলাম ওরফে নাহিদ (৩৫)। সাড়ে পাঁচ বছর ধরে তিনি এ দায়িত্ব পালন করছিলেন। তাঁর বাড়ি নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার বড়ভিটাবাজার গ্রামে। ১৪ বছর আগে তিনি বিয়ানীবাজার আসেন।
স্থানীয়রা জানান, আবদুল হেকিমের দুই ছেলে প্রবাসী। বাড়িতে আরও দুই ছেলে ও দুই মেয়ে থাকেন। বাড়ির দেখাশোনা করতেন তাইজুল। আবদুল হেকিমের ঘরের পাশে আধাপাকা একটি ঘরে থাকতেন তিনি। ওই ঘরের পাশে মুরগির একটি খামারও আছে। শুক্রবার সাহ্রি খাওয়ার জন্য তাইজুলকে ডাকতে যান আবদুল হেকিমের ছেলে। তখন তাইজুলের ঘরের দরজা খোলা দেখে ভেতরে প্রবেশ করে বিছানা, মেঝেসহ বারান্দায় রক্ত দেখতে পান। পরে বিষয়টি প্রতিবেশীসহ চেয়ারম্যান ও পুলিশকে জানানো হয়।
খবর পেয়ে ভোরেই সিলেটের বিয়ানীবাজার থানার একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে আলামত সংগ্রহ করে। এ সময় তাইজুলের ব্যবহৃত কাপড় ও মুঠোফোন জব্দ করা হয়। বিভিন্ন জায়গায় সন্ধান চালিয়েও তাইজুলকে পাওয়া যায়নি। এ সময় রক্তজাতীয় তরল পদার্থের কোনো গন্ধ না পাওয়ায় সন্দেহ হয় পুলিশের।
স্থানীয়দের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, ১৪ বছর ধরে বিয়ানীবাজারের মাথিউরা এলাকায় থাকতেন তাইজুল। স্থানীয় এক ব্যক্তিকে ধর্মের ভাই বানান তিনি। ওই ব্যক্তিকে ভুল নাম–পরিচয় দিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করতে চেয়েছিলেন তাইজুল। কিন্তু তিনি রাজি হননি। এরপর তাইজুল বিয়ানীবাজারের ঠিকানা দিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করলেও মা-বাবার নাম ঠিকই দিয়েছেন।
পুলিশ জানায়, তাইজুল কলেজ পড়া অবস্থায় বন্ধুদের সঙ্গে মারামারির সময় একজন মারা গেলে তিনি বাড়ি থেকে পালিয়ে আসেন। এরপর আর বাড়ি ফেরেননি। প্রায় তিন বছর আগে বাবার মৃত্যু হলেও বাড়িতে পুলিশ আছে, এমন খবর পেয়ে আর যাননি। বিয়ানীবাজারে থাকতে বিভিন্নজনের কাছ থেকে ঋণ নিয়েছেন, লেনদেন করেছেন।
পুলিশের ধারণা, পাওনা টাকা না দিতে তাইজুল এমন নাটক সাজিয়ে থাকতে পারেন।
বিয়ানীবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. তাজুল ইসলাম বলেন, পুলিশ ওই ঘর থেকে একটি বালতি, মগ ও কাঠি উদ্ধার করেছে। বালতি ধুয়ে ফেলা হলেও কাঠিসহ মগে কিছুটা লাল রং পাওয়া গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, লাল রং মিশিয়ে রক্তজাতীয় তরল পদার্থ বিছানায় ও ঘরে ছিটিয়ে বোকা বানানোর চেষ্টা করা হতে পারে। তাইজুলের সন্ধান চলছে। তাঁকে পাওয়া গেলে ঘটনার বিস্তারিত জানা যাবে। উদ্ধার করা বিভিন্ন আলামত পরীক্ষার জন্য ল্যাবে পাঠানো হয়েছে।
সিলেটভিউ২৪ডটকম / ডালিম