সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকেই ধারাবাহিকভাবে বিমান হামলা চালাচ্ছে জান্তা সরকার। মিয়ানমারের মধ্যাঞ্চলে জান্তাবিরোধীদের এক অনুষ্ঠানে আজ মঙ্গলবার দেশটির সেনাবাহিনী বিমান হামলা চালিয়েছে। এতে অন্তত ৫০ জন নিহত হয়েছেন। গণমাধ্যম ও স্থানীয় প্রতিরোধ আন্দোলনের সদস্যরা এ তথ্য জানান।
ইয়াঙ্গুন থেকে ১১০ কিলোমিটার পশ্চিমে সাগাইং অঞ্চলের বাসিন্দাদের বরাত দিয়ে বিবিসি বার্মিজ, রেডিও ফ্রি এশিয়া (আরএফএ) এবং ইরাবদি নিউজ পোর্টালের খবরে বলা হয়, এ হামলায় সাধারণ মানুষসহ ৫০ থেকে ১০০ জনের মৃত্যু হয়েছে।
তবে রয়টার্স তাৎক্ষণিকভাবে নিজেদের পক্ষ থেকে এ খবরের সত্যতা যাচাই করতে পারেনি। এমনকি জান্তা সরকারের এক মুখপাত্রের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
পিপলস ডিফেন্স ফোর্সের (পিডিএফ) একজন সদস্য, যিনি জান্তাবিরোধী মিলিশিয়া, তিনি রয়টার্সকে বলেন, স্থানীয় পর্যায়ে তাঁদের একটি দপ্তর খোলার অনুষ্ঠানে যুদ্ধবিমান থেকে এ হামলা চালানো হয়েছে।
পিডিএফের ওই সদস্য নাম না প্রকাশ করার শর্তে বলেন, ‘এখনো নিহতের প্রকৃত সংখ্যা জানা যায়নি। আমরা এখনো সব মরদেহ উদ্ধার করতে পারিনি।’
আল–জাজিরার খবরে বলা হয়, ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি সেনা অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে অং সান সু চির নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতায় বসে সামরিক জান্তা। এর বিরুদ্ধে দেশটিতে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ শুরু হলে নিরাপত্তা বাহিনী কঠোরভাবে দমন করে। রক্তক্ষয়ী এ অবস্থাকে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা ও অন্যরা গৃহযুদ্ধ বলে অভিহিত করেছেন। জাতিসংঘের তথ্যমতে, সেনা অভ্যুত্থানের পর থেকে এখন পর্যন্ত অন্তত ১২ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।
গত অক্টোবরে কাচিন রাজ্যে একটি কনসার্টে বিমান হামলা চালানো হয়েছিল। এতে অন্তত ৫০ জন নিহত হয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন শিল্পী ও সশস্ত্র জাতিগত সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর সদস্যরা। এরপর যত হামলা হয়েছে, তার মধ্যে আজকের হামলাটি ভয়ংকর।
নির্বাসনে থাকা মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থী সরকার দ্য ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট এ হামলার নিন্দা জানিয়েছে। তারা এটিকে ‘সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে আরেকটা (সামরিকদের) চরম শক্তির নির্বিচার ব্যবহারের উদাহরণ’ বলে মন্তব্য করেছে।
মানবাধিকার গ্রুপ, নৃতাত্ত্বিক সংখ্যালঘু বিদ্রোহী এবং গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, গত মাসে মিয়ানমারের উত্তর–পশ্চিমে একটি গ্রামে বিমান হামলায় শিশুসহ অন্তত আটজন সাধারণ মানুষ নিহত হন।
জান্তা সরকার বেসামরিক নাগরিকদের নৃশংসতা চালাচ্ছে বলে যে আন্তর্জাতিক অভিযোগ আছে, তা অস্বীকার করেছে। উল্টো তাদের ভাষ্য যে ‘সন্ত্রাসীরা’ দেশকে অস্থিতিশীল করতে বদ্ধপরিকর, তাদের বিরুদ্ধে এ লড়াই। পশ্চিমা দেশগুলো জান্তা সরকারের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।
সিলেটভিউ২৪ডটকম/এনটি
সূত্র : প্রথম আলো