সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার ৬ টি হাওরে আজ পর্যন্ত ৯৯ ভাগ ধান কর্তন এবং নন হাওরগুলোতে ৬০ ভাগ ধান কর্তন হয়েছে বলে জানান শাল্লা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।

বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ঘোষিত হাওরাঞ্চলের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে শাল্লা উপজেলা। এই এলাকার মানুষের সারাবছরের একমাত্র ফসল বোরোধান উৎপাদন করে ৯৫ ভাগ মানুষের চাহিদা পূরন করে থাকে। এই বোরোধান কর্তনের মৌসুম হচ্ছে মার্চের শেষ হতে এপ্রিল পর্যন্ত। এরই মাঝে আবার আবহাওয়া অফিস ২৩ এপ্রিল থেকে পাহাড়ি ঢল ও টানা ঝড়বৃষ্টি হওয়ার পূর্ভাবাস জনস্বার্থে প্রকাশ করেছিল। কিন্তু প্রকৃতি তার আচরণ ভাল করায় উপজেলার সব হাওরে কৃষকরা আনন্দেই ধান কর্তন করেছেন বেশিরভাগ। সূর্যের প্রখর তাপে ধানগুলো ভালোভাবে শুকিয়ে কৃষকরা গোলায় তুলছে। আবার গরুর খাবার (খড়) শুকিয়ে মাঠে টাল দিয়েছে। কয়েকদিন পর কৃষকরা খড় (গোখাদ্য) সৃজনের জন্য বাড়িতে তুলে সংরক্ষণ করবে।


শনিবার (২৯ এপ্রিল) সরজমিনে উপজেলার বেশকিছু হাওর পরিদর্শন করলে এই সচিত্র দৃশ্যত হয়।

এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবু তালেব প্রতিবেদকে জানান, আমাদের শাল্লা উপজেলায় আজ পর্যন্ত ৯৯ ভাগ ধান কর্তন করা হয়েছে। আগামী কালকের মধ্যে উপজেলায় শতভাগ ধান কর্তন শেষ হবে।

স্থানীয় কৃষকরা জানান, কিছু কিছু হাওরে ধান কর্তন শেষ, আবার কিছু হাওরে ধান কাটার বেশ বাকীও রয়েছে। আবহাওয়া ভাল আছে কয়েকদিনের মধ্যে সব হাওরের বোরোফসল কেটে ফেলবে। তবে দু'ফসলি অর্থাৎ সেচ প্রকল্পের জমিগুলো একটু দেরি হলেও শিলা বৃষ্টি ছাড়া বন্যায় বা পাহাড়ি ঢলে ফসল নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
 
কালিয়া কুটা হাওরের কৃষক অলিউর রহমান চৌধুরী ইমন বলেন, আমার জমিগুলো হারভেস্টার মেশিন ও বেপারি দিয়ে কাটছি। গরুর খাদ্যের জন্য কিছু জমি বেপারি দিয়ে কাটা লাগে। আমাদের হাওরে এখন পর্যন্ত ৭০ ভাগ ধান কাটা হয়েছে। আবহাওয়া ভাল থাকলে আশাকরি বাকি জমিগুলো একসপ্তাহের মধ্যে কাটা হবে।

বরাম হাওরের কৃষক কৃপাসিন্ধু দাশ বলেন, আমি ২৫ কেয়ার জমির সবগুলোই কেটে ফেলছি। মেশিন দিয়ে কাটাতে খুব দ্রুত সম্ভব হয়েছে। আর কিছু জমি বেপারি দিয়েও কাটছি। আমাদের হাওরের প্রায় সব ধানকাটা শেষ। রোদ দেয়ায় সাথে সাথে ধানও শুকানো হয়ে যাচ্ছে।

ভান্ডাবিল হাওরের কৃষক বিশ্বরূপ দাশ বলেন, আমি ৭০ কেয়ার জমি করছি। এর মধ্যে ৬৬ কেয়ার জমি কর্তন করেছি। বাকী ৪ কেয়ার কালকে কাটব। এখন মানুষ মেশিনের মাধ্যমে ধান কাটতে সুবিধা পায় এবং তাড়াতাড়ি কাটতে পারে। কিছু জমির সমস্যা অর্থাৎ নিচু জমিতে মেশিন সার্ভিসের কারনে বেপারি দিয়ে কাটা লাগে। এই জমির পরিমান তেমন একটা না সামান্য।

ছায়ার হাওরের কৃষক সুরঞ্জিত দাশ বলেন, আমি ২২ কেয়ার জমি করছিলাম।  আজকে সব জমিন কেটে টেনশন মুক্ত হলাম। এখন ধান ও বন শুকাইয়া বাড়িতে তুললেই এইবারের বৈশাখী শেষ হয়ে যাবে। তিনি আরও বলেন, আমাদের ছায়ার হাওরের আগামীকাল বা পরশুর মধ্যে সম্পূর্ণ ধানকাটা হয়ে যাবে।

ফয়েজুল্লাপুর হাওরের কৃষক আব্বাস মিয়া বলেন, আমাদের এখানে এক ফসলি জমি কাইট্টা তোলা শেষ। আর দু'ফসলি জমি ধান কাটার লাগি বড় মেশিন লাগানো আছে হাওরে। আল্লাহর রহমতে আগামী সাত দিনের মধ্যে জমির সব ধান উঠে যাবে। আল্লায় যে দিন দিছে এবার ফলনও বাম্পার হয়েছে।

উল্লেখ্য, শাল্লা উপজেলায় সর্বমোট ২১ হাজার ৬৯৪ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ করা হয়েছে। এর থেকে চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৯৫ হাজার ২৫৩ মেট্রিক টন। যার বাজার মূল্য আনুমানিক ৩৮১ কোটি ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা হতে পারে।


সিলেটভিউ২৪ডটকম/সুজন/ইআ-১৩