একে একে তিন বার টেন্ডার আহবান করেও বিক্রি হয়নি সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার ন্যাচারাল গ্যাস ফার্টিলাইজার ফ্যাক্টরির পুরাতন যন্ত্রপাতি। তৃতীয়বার সর্বোচ্চ দরদাতা ঢাকার প্রতিষ্ঠান এমএম বিল্ডার্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড আশ্রয় নিয়েছে ভয়াবহ জালিয়াতির। 

 


টেন্ডার প্রক্রিয়া হিসাবে জামানত বাবদ ২৭ কোটি ৫০ লাখ টাকার একটি পে-অর্ডার জমা দিয় তারা। কিন্তু তা ভুয়া প্রমাণিত হয়ে জালিয়াতির নজির সৃষ্টি করেছে। 

 

এ কারনে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়ে শাহজালাল ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড(এসএসসিএল) এর পরিচালক মোহাম্মদ জিয়াবুল হোসেন জানান, প্রতিষ্ঠানটিকে কালো তালিকাভুক্ত করার জন্য ইতোমধ্যেই বিসিআইসিতে চিঠি দেওয়া হয়েছে এবং তাদের টেন্ডার প্রক্রিয়ার জামানত বাবদ প্রায় ৭ কোটি টাকা বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। এছাড়া প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ একাধিকজনের বিরুদ্ধে  মামলা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।এসব বিষয়ে এমএম বিল্ডার্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ার্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মহিউদ্দিন মঈনের বক্তব্য পাওয়া যায় নি।

 

নতুন সারকারখানা এসএফসিএল নির্মান হওয়ায় ন্যাচারাল গ্যাস ফার্টিলাইজার ফ্যাক্টরিটি সংস্কার করে পুনরায় চালু না করে বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।

প্রসঙ্গত ২০২০ সালে এনজিএফএফএল বিক্রির জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়।দরপত্র বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কারখানার বিভিন্ন যন্ত্রাংশ ( স্ক্র্যাপ) প্রতি লট যেখানে যে অবস্থায় আছে সেভাবেই নিলাম হবে। নিলামে ৯টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। তখন ১০৩ কোটি ৭৫ হাজার টাকা উল্লেখ করে সর্বোচ্চ দরদাতা নির্বাচিত হয় সিলেটের ‘মেসার্স আতাউল্লাহ’ নামের সিলেটের একটি প্রতিষ্ঠান। ভ্যাটসহ টাকার পরিমাণ দাঁড়ায় ১১৫ কোটি ৮৮ লাখ ৩৪ হাজার ৩৭৫ টাকা। কিন্তু নিয়ম অনুযায়ী  টাকা জমা না করায় এটি আদালত পর্যন্ত গড়ায়। আদালতের বেঁধে দেওয়া সময়েও টাকা জমা দিতে পারেনি দরদাতা প্রতিষ্ঠানটি। অবশেষে পুনরায় নিলামের সিদ্ধান্ত নেয় শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ বিসিআইসি।

 

২০২১ সালে দ্বিতীয় দফা দরপত্র আহ্বান করা হলে তখন সর্বোচ্চ দরদাতা প্রতিষ্ঠান হিসাবে নিলামে মেসার্স সাইদুর রহমান ২১১ কোটি ৪ লাখ ২৫ হাজার টাকা দিয়ে পুরোনো সার কারখানাটি স্ক্র্যাপ হিসাবে কিনে নেন। কিন্তু ওই প্রতিষ্ঠানও টাকা সময়মতো দিতে না পারায় সেটিও বাতিল করে নতুন করে আবার টেন্ডার আহ্বান করা হয়।

 

২০২২ সালে তৃতীয় দফা টেন্ডারে ২২টি শিডিউল বিক্রি করা হলেও জমা পড়ে মাত্র  ৩টি দরপত্র। এর মধ্যে ঢাকার প্রতিষ্ঠান মেসার্স এমএম বিল্ডার্স লিমিটেড ৬ কোটি ৮৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা জামানত দিয়ে টেন্ডারে অংশগ্রহণ করে। পরে ভ্যাট-ট্যাক্স ছাড়া ২৭৫ কোটি টাকা দর উল্লেখ করে সর্বোচ্চ দরদাতা নির্বাচিত হয়।

 

গত বছর ডিসেম্বরে ১৪ দিনের সময় বেঁধে দিয়ে নিরাপত্তা জামানতের টাকা জমা দিতে সর্বোচ্চ দরদাতা এমএম বিল্ডার্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ার্সকে পত্র দেয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি সময়মতো অর্থ জমা না দিয়ে বারবার সময় প্রার্থনা করতে থাকে। সবশেষ ১৫ মার্চ ছিল টাকা জমা দেওয়ার শেষদিন। কিন্তু সেদিনও তা জমা না দিয়ে ১৯ মার্চ এনসিসি ব্যাংকের চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ শাখার ২৭ কোটি ৫০ লাখ টাকার একটি পে-অর্ডার জমা দেওয়া হয় প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে। পে-অর্ডার নম্বর ২৮৪৯২৯৬।

 

পরদিন ২০ মার্চ ফেঞ্চুগঞ্জ সোনালী ব্যাংক শাখায় পে-অর্ডারটি জমা দেয় সারকারখানা কর্তৃপক্ষ। সেদিনই সোনালী ব্যাংকের শাখা থেকে পে-অর্ডারটি জাল উল্লেখ করে সারকারখানা কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়। এরপরই বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়।

 

বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর শাহজালাল সারকারখানা লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ জিয়াবুল হোসেন পরবর্তী করণীয় ঠিক করতে বিসিআইসিতে পত্র দেন। এবং জাল পে-অর্ডার জমা দেওয়ার অপরাধে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে মামলা করা হবে, টেন্ডার প্রক্রিয়ায় অংশ নেওয়ার সময় জমাকৃত ৬ কোটি ৭৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা বাজেয়াপ্ত ঘোষণা করা। এ ব্যাপারে বিসিআইসির চেয়ারম্যান কে মোবাইল ফোনে বারবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেন নি।

 

সিলেটভিউ২৪ডটকম/ ফরিদ / নাজাত