আর মাত্র ৩ দিন। ২১ জুন সকাল থেকেই সিলেটে ভোট উৎসব। সব ঠিক থাকলে এদিন সন্ধ্যারাতে জানা যাবে- কে হয়েছেন সিলেট নগরপিতা। 

সিলেট সিটি করপোরেশেন নির্বাচনে ৮ মেয়র প্রার্থী থাকলেও মূল আলোচনায় ছিলেন ৩ জন। তবে কেন্দ্রের নির্দেশে ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী হাফিজ মাওলানা মাহমুদুল হাসান নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোয় সিলেটে এখন লড়াই হবে শুধু আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থীর মধ্যে। 


প্রায় শেষ সময়ে এসে ভোটারদের নজর কাড়তে মরিয়া এই দুই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী ও জাতীয় পার্টির প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুল বিরামহীন ছুটে চলেছেন মহানগরের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত। করছেন গণসংযোগ, পথসভা ও মতিবিনিময়। ভোটারদের সামনে মহানগরের উল্লেখযোগ্য সমস্যাগুলো তুলে ধরে নির্বাচিত হলে এসব সমস্যা দ্রুত সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। এছাড়াও একাধিক মাইকে মহানগরজুড়ে সুরে-গানে, প্রতিশ্রুতি-স্লোগানে চলছে এ দুই প্রার্থীর সমর্থনে প্রচারণা।

সর্বশেষ শনিবার (১৭ জুন) দুপুরে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী মহানগরের একটি অভিজাত কনফারেন্স হলে সংবাদ সম্মেলন করে নিজের নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেন। নতুন করে সাজিয়ে সিলেটকে গ্রিন-ক্লিন-স্মার্ট করতে  তিনি ইশতেহারে ২১টি দফা উল্লেখ করেন। সেগুলো হলো- স্মার্ট নগরভবন, সবুজ, পরিচ্ছন্ন ও পরিবেশবান্ধব সিলেট, জলাবদ্ধতা দূরীকরণ ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, পরিকল্পিত নগরায়ন, নিরাপদ স্বাস্থ্যকর সিলেট, দুর্যোগ মোকাবেলায় সচেতনতা, শিক্ষা ও সংস্কৃতিবান্ধব সিলেট, নারীবান্ধব সিলেট, ব্যবসাবান্ধব সিলেট, পার্ক, উদ্যান ও খেলার মাঠ প্রতিষ্ঠা, সচল সিলেট, মানবিক উন্নয়নে সিলেট, প্রবাসীবান্ধব সিলেট, সম্প্রীতির সিলেট, পর্যটনবান্ধব সিলেট, সামাজিক অপরাধ নির্মূল, অংশগ্রহণমূলক ও সুশাসিত সিলেট, নাগরিকবান্ধব সিলেট, তারুণ্যের সিলেট এবং প্রযুক্তিযুক্ত সিলেট। 

এদিকে, জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুল রবিবার তাঁর নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করবেন বলে জানা গেছে। তবে এর আগে শনিবার দুপুরে তিনি একটি আশঙ্কা জানিয়ে সিসিক নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা বরাবরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। সিলেটে ভোটের দিন সহিংসতার আশঙ্কা করছেন বাবুল। তাঁর অভিযোগ- সিলেটের এমসি ও সরকারি কলেজের ছাত্রাবাসে প্রতিপক্ষ প্রার্থী সন্ত্রাসী বাহিনী জড়ো করছেন সহিংসতা ঘটানোর জন্য। এই জন্য ভোটের দিন এ দুটি ছাত্রাবাস বন্ধ রাখতে সিসিক নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা বরাবরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন বাবুল। 

অভিযোগে বাবুল উল্লেখ করেন- ‘বিশ্বস্থ সূত্র মারফত জানতে পারলাম- ২১ জুন (বুধবার) অনুষ্ঠিতব্য সিলেট সিটি কর্পোরেশন (সিসিক) নির্বাচনের ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের ভয়ভীতি প্রদর্শন এবং ভোট প্রদানের স্বাভাবিক পরিবেশ বিনষ্ট করার জন্য আমার প্রতিপক্ষ প্রার্থী কিছু ভাড়াটিয়া গুন্ডা ও সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে এসে সিলেট এম.সি কলেজ ও সরকারি ডিগ্রি কলেজের ছাত্রাবাসে জড়ো করছেন। আমার আশঙ্কা- নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ বানচাল করার জন্য প্রতিপক্ষ এ ধরণের সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে আসছেন। এমতাবস্থায় নির্বাচনের স্বাভাবিক ও সুষ্ঠু পরিবেশ রক্ষার স্বার্থে উল্লেখিত এই দুই ছাত্রাবাস ২০ জুন থেকে ২২ জুন পর্যন্ত বন্ধ রাখা প্রয়োজন।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে সিসিক নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ফয়ছল কাদেরের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।

এই অভিযোগের অনুলিপি বাবুল সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ (এসএমপি) কমিশনার বরাবরেও দাখিল করেছেন। এ বিষয়ে এসএমপি কমিশনার  মো. ইলিয়াস শরীফ (বিপিএম-বার, পিপিএম) শনিবার বিকেলে সিলেটভিউ-কে বলেন- অভিযোগটি এখনো আমি পাইনি। যদি পাই তবে অবশ্যই তদন্তসাপেক্ষে বিহীত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। 

এদিকে, ভোটারদের মন জয় করতে শনিবার দিনভর ব্যস্ত সময় পার করেন জাপা’র প্রার্থী বাবুল। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে দক্ষিণ সুরমার বাবনা ও লাউয়াই এলাকায় বাবুলের গণসংযোগ এবং সন্ধ্যা ৭টায় মেজরটিলায় মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।

এসব কর্মসূচিতে বাবুল বলেন- ‘ইভিএম-এ ভোটের শংকা থাকলেও সুষ্ঠু পরিবেশে ভোট হলে লাঙ্গলের বিজয় নিশ্চিত। আমার বিশ্বাস- নগরবাসী আমাকে তাদের পবিত্র আমানত দিয়ে মেয়র পদে নির্বাচিত করবেন। 

তিনি আরও বলেন- সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি আমি প্রথম থেকেই করে আসছি। কিন্তু নির্বাচন কমিশনের আচরণ আমাকে ব্যথিত করেছে। দেখা যাক- আল্লাহ আমার জন্য কী রেখেছেন। 

এছাড়া রাত ৯টায় কুশিঘাটে সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে ও রাত ১০টায় পাঠানটুলার একটি কমিউনিটি সেন্টারে সিলেট জেলা বাবুর্চি সমিতির সঙ্গে মতবিনিময় করবেন নজরুল ইসলাম বাবুল। 


সিলেটভিউ২৪ডটকম / ডালিম