শেষ হয়েছে পঞ্চম সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচন। ইতোমধ্যে শপথ নিয়েছেন নবনির্বাচিত মেয়র-কাউন্সিলররা। আগামী অক্টোবরে তারা দায়িত্ব নেবেন বলে জানা গেছে। বিশেষ কোনো কারণে এর আগেও তারা নিতে পারেন দায়িত্ব। এ অবস্থায় উন্নয়নের ছোঁয়াহীন সিসিকে অন্তর্ভুক্ত হওয়া ১৫টি ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের প্রশ্ন- নতুন পরিষদের নজর কি পড়বে বর্ধিত এলাকায়? এবার কি কিছুটা হলেও বদলাবে তাদের ‘ভাগ্য’?

সিলেট সিটি করপোরেশনের আয়তন বাড়ার প্রায় দুই বছর হতে চললেও বর্ধিত এলাকাগুলোতে দৃশ্যমান উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। এ সময় নগরের পুরোনো ২৭টি ওয়ার্ডে বিভিন্ন উন্নয়নকাজ হলেও বর্ধিত ১৫টি ওয়ার্ডে তেমন কোনো উন্নয়ন হয়নি। যথাযথ নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত না হওয়ায় ওই এলাকার বাসিন্দারা নিয়মিত ভোগান্তিতে পড়ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।


২০০২ সালের ২৮ জুলাই সিলেট পৌরসভাকে সিটি করপোরেশনে উন্নীত করা হয়। তখন নগরের আয়তন ছিল ২৬ দশমিক ৫০ বর্গকিলোমিটার। সর্বশেষ ২০১৮ সালে ২৭টি ওয়ার্ডে সিটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ২০২১ সালের ৩১ আগস্ট সিলেট সদর ও দক্ষিণ সুরমা উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের কিছু মৌজা অন্তর্ভুক্ত করে সিটি করপোরেশন সম্প্রসারিত করা হয়। এখন ওয়ার্ড বেড়ে ৪২টি এবং আয়তন সাড়ে ৭৯ বর্গকিলোমিটারে দাঁড়িয়েছে। বর্তমান মহানগরের বাসিন্দা প্রায় ১০ লাখ।

নতুন ১৫টি ওয়ার্ডের জন্য ৪টি আঞ্চলিক কার্যালয় স্থাপন করে সেসব স্থানে কার্যক্রম শুরু করে সিটি কর্তৃপক্ষ।

বর্ধিত এলাকার তেমুখী ঘুরে দেখা গেছে, এখানে জলাবদ্ধতার সমস্যা প্রকট। এছাড়া ডালিয়া, নয়াবাজার, নোয়াগাঁও ও মেজরটিলাসহ শতাধিক এলাকায় ভাঙাচোরা রাস্তাঘাট আছে। যেগুলো চলাচলের প্রায় অনুপযোগী। 

এদিকে, সিটি করপোরেশনে অন্তর্ভুক্ত নতুন এলাকাগুলোতে অপরিকল্পিতভাবে বহুতল ভবন নির্মিত হলেও কর্তৃপক্ষ বাধা দেয়নি। নতুন ওয়ার্ডগুলোর বিভিন্ন স্থানে মাঠ ও জলাশয় ভরাট করা হলেও সেদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষের। 

মহানগরের বর্ধিত ১৫টি ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের অভিযোগ- ভাঙাচোরা রাস্তাঘাট, জলাবদ্ধতা, সুপেয় পানির সংকট, মশার উপদ্রব, নাজুক পয়োনিষ্কাশনের ব্যবস্থা, সরু গলিসহ নানা ধরনের ভোগান্তি থাকলেও সমাধানে তেমন কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এ ছাড়া বিভিন্ন এলাকায় সড়কের পাশে যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা স্তূপাকারে পড়ে থাকলেও তা অপসারণেরও উদ্যোগ নেই। পাশাপাশি আধুনিক মহানগর গড়ে তোলার কোনো পরিকল্পনাতেই এসব ওয়ার্ড অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।

বর্ধিত কয়েকটি ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান- মহানগরে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পর তারা আশা করেছিলেন- তাঁদের সকল প্রকার নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করা হবে। কিন্তু মহানগরে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার দুই বছর হয়ে গেলেও বিন্দুমাত্র উন্নয়ন হয়নি। বর্ধিত ১৫টি ওয়ার্ড আদতে গ্রামই রয়ে গেছে।

টুকেরবাজার এলাকার একজন বাসিন্দা বলেন, বর্ধিত এলাকার কোথাও সুপেয় পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করেনি সিটি করপোরেশন। পয়োনিষ্কাশনের জন্য নালা তৈরি করা এবং রাস্তাঘাট পাকাকরণের উদ্যোগও বেশির ভাগ জায়গায় নেওয়া হয়নি। অধিকাংশ রাস্তা এখনো কাঁচা। তাই যোগাযোগব্যবস্থার সুবিধা এখনো নিশ্চিত হয়নি। সড়কবাতি না থাকায় সন্ধ্যার পর অন্ধকারে পথ চলতে হয় তাঁদের।

বর্ধিত ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের নোয়াগাঁও মদিনা আবাসিক এলাকার এক বাসিন্দা বলেন- ‘মহানগরে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কোনো সুফলই গত দুই বছরে পাইনি। আগের মতো জলাবদ্ধতা, কাঁচা রাস্তা, সুপেয় পানির সংকট আর মশার উপদ্রব নিয়ে চলতে হচ্ছে। তবে এবার প্রত্যাশা করছি, সিসিকের নবনির্বাচিত মেয়র ও কাউন্সিলররা আমাদের দিকে চোখ তুলে তাকাবেন। তাঁরা দ্রুততার সঙ্গে আমাদের ওয়ার্ডের সমস্যা সমাধানে উদ্যোগী হবেন, এটাই প্রত্যাশা করছি।’

সিসিক সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে নতুন ওয়ার্ডগুলোর জন্য প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্পের ডিপিডি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) প্রণয়ন করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছে সিটি কর্তৃপক্ষ। ওই মন্ত্রণালয়ে এটি অনুমোদনের পর পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়েও অনুমোদিত হয়েছে। এখন একনেকে প্রকল্পটি পাস হওয়ার অপেক্ষায় আছে। এটি পাস হলে বর্ধিত এলাকায় উন্নয়নকাজ শুরু হবে।


সিলেটভিউ২৪ডটকম / ডালিম