সম্প্রতি সিলেট বিভাগজুড়ে ব্যাটারিচালিত রিকশা (টমটম) বা ইজিবাইক চুরি এবং ছিনতাইয়ের ঘটনা বেড়েছে। প্রায় প্রতিদিন বিভাগের কোথাও না কোথাও ব্যাটারিচালিত রিকশা চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে।

তবে বসে নেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও। নিয়মিত অভিযানে এ চক্রের সদস্যদের আটকের পাশাপাশি তারা উদ্ধার করছে চুরি ও ছিনতাই হওয়া রিকশা। গত এক সপ্তাহে সিলেট বিভাগে বেশ কয়েকজন টমটম চোর বা ছিনতাইকারীকে আটক করে আদালতের নির্দেশে জেলহাজতে পাঠিয়েছে পুলিশ।


জানা গেছে, সিলেটের ওসমানীনগর উপজেলায় ২০ সেপ্টেম্বর রাতে পৃথক অভিযানে ছিনতাই হওয়া ৫টি টমটম উদ্ধার ও ছিনতাই চক্রের দুই সদস্যকে আটক করে থানাপুলিশ। আটকরা হলেন- সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলার ভুরভুরিয়া গ্রামের মৃত আব্দুল হামিদের ছেলে দয়াল মিয়া (৩৬) ও ব্রাহ্মনবাড়ীয়া জেলার নাসিরনগর থানার চাপরতলা গ্রামের মো. ইকবাল হোসেন (৩৩)।

পুলিশ জানায়- স্থানীয় টমটমচালক মো. শামীম হোসেন (২৪) তার ভাড়ায় চালিত রিকশাটি নিয়ে প্রতিদিনের মতো গত ১১ সেপ্টেম্বরও ওসমানীনগরের গোয়ালাবাজার এবং তাজপুরসহ বিভিন্ন জায়গায় ভাড়ায় যাত্রী পরিবহন করছিলেন। ওই দিন সন্ধ্যা অনুমান সাড়ে ৭টার দিকে গোয়ালাবাজার যাত্রীছাউনিতে তিনি তার রিকশা নিয়ে অপেক্ষমান অবস্থায় থাকা যাত্রীবেশী ছিনতাইকারীরা শামীমকে ভাড়া করে কাশিকাপন যাওয়ার কথা বলে রিকশায় উঠে।

এক পর্যায়ে শামীম তাদের নিয়ে ফকিরপাড়া রাস্তার মুখে পৌছার পর ছিনতাইকারীরা পিছন দিক হতে রশি দিয়ে তার হাত-পা বেঁধে ও গলায় ফাঁস দিয়ে তাকে মারধর করে রাস্তার পাশের একটি ঝোপের ভেতর লেফ টমটম ছিনিয়ে নিয়ে চলে যায়। পরে স্থানীয়রা তাকে দেখতে পেয়ে উদ্ধার করেন।

এ বিষয়ে ওসমানীনগর থানায় শামীম মামলা দায়ের করলে বুধবার রাতে ওসমানীগর থানাপুলিশের একটি দল তাজপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে শামীমের ছিনতাই হওয়া রিকশাটি  উদ্ধার এবং দয়াল ও ইকবালকে আটক করে। পরে তাদের দেওয়া তথ্যমতে বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ছিনতাই হওয়া আরও ৪টি রিকশা উদ্ধার করে পুলিশ।

আটক দুজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরপূর্বক পুলিশ তাদের আদালতে প্রেরণ করলে বিজ্ঞ বিচারক জেলহাজতে প্রেরণের নির্দেশন দেন।

এদিকে, শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার ব্রাহ্মণবাজার ইউনিয়নের মিশন (পাহাড়ী) এলাকায় ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে চালকের কাছ থেকে একটি ইজিবাইক ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে।

জানা যায়, ব্রাহ্মণবাজার ইউনিয়নের মির্জাপুর গ্রামের মানিক মিয়ার ছেলে দরিদ্র অটোরিকশা চালক জুয়েল (২২)-এর অটোরিকশাটি ব্রাহ্মণবাজার থেকে ভাড়া করে যাত্রীবেশি প্রতারক চক্র। পরে মিশন (পাহাড়ি) এলাকায় পৌছালে আগে থেকেই সাদা মাইক্রোবাস গাড়িতে ওৎ পেতে থাকা ভুয়া ডিবি পুলিশের ৫ জনের একটি দল তাদের গতিরোধ করে ওই যাত্রীকে গাঁজাসহ আটক করে। এরপর চালক জুয়েলসহ ওই ব্যক্তিকে তাদের গাড়ীতে তুলে। অন্যদিকে তাদের সাথে একজন তার অটোরিকশাটি থানায় নিয়ে যাওয়ার জন্য নিয়ে যায়। এরপর জুয়েলকে গাড়িতে করে মৌলভীবাজার শহরের প্রবেশদ্বার ইসলামপুর এলাকায় নামিয়ে দিয়ে বলা হয়- এখন তোমাকে অফিসে নিয়ে গেলে আটক করা হতে পারে। এরপর তার হাতে তিনশ টাকা ভাড়া দিয়ে বলা হয়- আমাদের লিখিত কাগজ (তাতে লিখা ছিলো, মফিজ, আকবারী অফিস, ০১৮১৯৬৯১৬১৫) কুলাউড়া থানায় দেখালে তোমার রিকশাটি দিয়ে দিবে।

পরে থানায় গিয়ে ডিবি পুলিশের ওই কাগজ দেখালে, তাকে বলা হয় এই নামে কোনো অফিস নেই। পরে চালক বুঝতে পারেন- প্রতারক চক্রের কবলে পড়ে তিনি রিকশাটি খুইয়েছেন। জুয়েল জানান, ১লাখ ২৬ হাজার টাকায় কিস্তিতে নতুন অটোরিকশাটি ৫০ হাজার টাকা অগ্রিম দিয়ে মাসখানেক আগে শো-রুম থেকে ক্রয় করেছিলেন।

কুলাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুস ছালেক বলেন, অভিযোগ পেলে বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ ব্যাপারে মৌলভীবাজার ডিবি পুলিশের অফিসার ইনচার্জ মো. আশরাফুল ইসলাম জানান, আমাদের ডিবি পুলিশের কোনো টিম ওইদিন কোনো অভিযানে যায়নি। সে নিশ্চয়ই কোনো প্রতারক চক্রের কবলে পড়েছিল।

এছাড়া শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) রাত ১০ টার দিকে হবিগঞ্জ শহরের জেলাসদর আধুনিক হাসপাতালের সামন থেকে টমটম চুরি হয়।

পুলিশ জানায়- বিষয়টি সদর থানা পুলিশকে অবগত করলে তাৎক্ষণিক টমটম উদ্ধারে মাঠে নামে পুলিশ। এক পর্যায়ে রাত ১২টার দিকে শহরতলির ধুলিয়াখাল এলাকায় অভিযান চালিয়ে টমটম উদ্ধারসহ আটক করা হয় দুই চোরকে। এর মধ্যে একজন নারী।

তারা হলো- জেলার চুনারুঘাট উপজেলার পাচগাও গ্রামের ইয়াকুব আলীর ছেলে মিজানুর রহমান (৩৩) ও তার স্ত্রী জুলি আক্তার (২৫)।

ওসি জানান- আটককৃতদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলাটি দায়ের করেছেন সদর উপজেলার শিয়াল দাড়িয়া গ্রামের রশিদ মিয়া। শনিবার বিকেলে তাদেরকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।

এসব ঘটনার আগে ২৩ জুলাই রাতে সিলেট মহানগরের এয়ারপোর্ট থানাধীন পশ্চিম পাঠানগাঁও এলাকা থেকে সফিক মিয়া (৪৩) নামে এক চালকের ইজিবাইকটি চুরি হয়ে যায়। এ ঘটনায় পরে তিনি এয়ারপোর্ট থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।

সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি (উপ মহাপরিদর্শক) শাহ মিজান শাফিউর রহমান (বিপিএম-বার, পিপিএম) শনিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় সিলেটভিউ-কে মুঠোফোনে বলেন- বিষয়টি আমাদের পুলিশ বিভাগের বিশেষ নজরে আছে। যখনই কোনো অপরাধী চক্রের অপতৎপরতা বেড়ে যায় তখনই পুলিশও বেশি অভিযান চালায় কিংবা তৎপর হয়। নিয়মিত অভিযান চালানোর পাশাপাশি এ চক্রকে নির্মূল করার লক্ষ্যে বিভাগের সকল সাকেল এসপি ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া আছে। টমটম বা ব্যাটারিচালিত রিকশাকে টার্গেট করা চক্রের সদস্যদের নিয়মিত অভিযানে আটকও করছে পুলিশ। এমন অভিযান অব্যাহত থাকবে।


সিলেটভিউ২৪ডটকম / ডালিম /এসডি-৫১৩