সিলেটে গত কয়েকদিন ধরে চলছে বৃষ্টিপাত। এর মধ্যে বৃহস্পতি, শুক্র ও শনিবার ঝরেছে ভারী বৃষ্টি। আর এমন বৃষ্টি হলে সিলেটে পাহাড়, টিলা ও নদীপারের ভূমিধসের থাকে সমূহ আশঙ্কা। সেই আশঙ্কাকে সত্যি করে শুক্রবার দিবাগত রাতে টিলা ধসে সিলেটের সদর উপজেলায় মারা গেছে এক শিশু।

এছাড়া সিলেট ও হবিগঞ্জের কয়েকটি স্থানে ঘটেছে আর টিলা ধসের ঘটনা। এসবে কেউ প্রাণ না হারালেও আহত হয়েছেন কয়েকজন। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কয়েকটি পরিবার।


জানা যায়, শুক্রবার দিবাগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে সিলেট সদর উপজেলার খাদিমনগর ইউনিয়নের চা বাগান এলাকায় টিলা ধসে ঘরের দেয়ালের উপর পড়লে এর নিচে চাপা পড়ে অর্চনা ছত্রী নামে ১১ বছরের এক শিশু মারা যায়। অর্চনা খাদিম চা বাগানের শ্রমিক বুলবুল ছত্রীর মেয়ে।

খবর পেয়ে সিলেট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাছরীন আক্তার ঘটনাস্থল পরিদর্শন এবং জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রাথমিকভাবে ১০ হাজার টাকা সহায়তা প্রদান করেন। এসময় আরও ১০ হাজার টাকা সহায়তা প্রদানের আশ্বাস দেন তিনি।

তিনি বলেন- অতিবৃষ্টির পূর্বাভাস পাওয়ার পর টিলা এবং এর পাদদেশে বসবাসকারীদের মাইকিং করে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছিলো।

অপরদিকে, শনিবার ভোরে জৈন্তাপুর উপজেলার চিকনাগুল ইউনিয়নে পূর্বসাতজনি গ্রামে টিলা ধসে ৩টি পরিবারের বসতঘর মাটি চাপা পড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটেছে। তবে এতে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।

জানা যায়, টিলা ধসের ঘটনায় লেদই পাত্র (৬৫) সুদেন পাত্র (৪৬) ও রণ পাত্র'র (৫৫) পাশাপাশি থাকা ৩টি পরিবারের বসতঘর মাটিচাপা পড়ে।

খবর পেয়ে শনিবার দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন জৈন্তাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আল-বশিরুল ইসলাম। তিনি তাৎক্ষণিকভাবে ক্ষতিগ্রস্তদের নগদ ১০ হাজার টাকা দিয়ে সহায়তা করেন। জেলা প্রশাসককে বিষয়টি অবগত করে ক্ষতিগ্রস্ত বসতঘর মেরামতসহ প্রয়োজনীয় সহযোগিতার আশ্বাস দেন।

তিনি জানান, উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অতিবৃষ্টি চলাকালীন সময়ে ইউনিয়ন পর্যায়ে মাইকিং করে সতর্ক করা হয়েছে।

এছাড়া শনিবার ভোরে মহানগরের আখালিয়া এলাকায় দুটি স্থানে টিলা ধসে বাড়ি-ঘরের দেয়াল ভেঙে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি  হয়েছে। এতে বিপাকে পড়েন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যরা।

ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যরা জানান- দেয়াল ধসে কারো শোবার ঘর ও কারো রান্নাঘর বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। এতে চরম বিপাকে পড়েছেন তারা।

প্রতি বর্ষা মৌসুমে সিলেটে টিলা-পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটলেও ঝুঁকি নিয়ে এসবের পাদদেশে বসবাস করেন মানুষজন। ফলে প্রায় প্রতি বছরই সিলেটে ঘটে টিলা ধসে মৃত্যুর ঘটনা।

গত বছরের ৬ জুন ভোরে জেলার জৈন্তাপুর উপজেলায় টিলাধসে একই পরিবারের ৪ জন নিহত হওয়ার মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। এছাড়াও সিলেটে প্রায়ই পাওয়া যায় টিলাধসে প্রাণহানির খবর।

এর আগে গত বছরের ১৪ মে সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার লক্ষ্মণাবন্দে টিলাধসে অপু পাল নামের এক যুবক চাপা পড়ে মারা যান।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মহানগরসহ সিলেট জেলা বিভিন্ন স্থানে পাহাড়-টিলার পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় মানুষের বসবাস বাড়ছে। কয়েক বছর আগেও যেসব টিলা এলাকায় মানুষের আনাগোনা ছিল না, সেসব এলাকায় এখন গড়ে উঠেছে বসতি।

পরিবেশবীদদের অভিযোগ, ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করা এসব মানুষকে সরিয়ে নিতে প্রশাসনের কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেই। শুধু প্রাণহানি ঘটলে কিছুটা টনক নড়ে প্রশাসনের। প্রশাসন মাঝে-মধ্যে অভিযান দিলে টিলার নিচের মানুষ কয়েক দিনের জন্য অন্যত্র যান। কিন্তু অভিযানের পরই ফের তারা ফিরে আসেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সিলেট মহানগরের এয়ারপোর্ট ও জালালাবাদ এলাকা, সদর, দক্ষিণ সুরমা, গোলাপগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ, জৈন্তাপুর ও গোয়াইনঘাট উপজেলায় প্রায় ৪শ পাহাড়-টিলা রয়েছে। যদিও এ সংক্রান্ত কোনো সঠিক পরিসংখ্যান জেলা প্রশাসনের কাছে নেই। কয়েক বছর আগে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) সিলেট নগরী ও বিভিন্ন উপজেলায় টিলার একটি পরিসংখ্যান প্রকাশ করে।

বেলা সূত্র জানায়, সিলেট মহানগর ও সিলেট সদর উপজেলায় ২শ টিলা রয়েছে। বিভিন্ন উপজেলায় আরও দুইশর উপরে টিলা আছে। এসব টিলার মধ্যে অনেক টিলাই সম্পূর্ণ এবং অধিকাংশ টিলা অর্ধেক ও আংশিকভাবে কেটে ফেলা হয়েছে। টিলা কেটে ফেলার কারণে ও কাটা অব্যাহত থাকায় দিনদিন ঝুঁকি বাড়ছে। ভারী বৃষ্টি হলেই এসব টিলার মাটি নরম হয়ে ধসে পড়ে এবং নিচে বসবাসকারী লোকজনের মধ্যে হতাহতের ঘটনা ঘটে।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে সিলেট জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসানের সরকারি মুঠোফোন নাম্বারে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।


সিলেটভিউ২৪ডটকম / ডি.আর