আটক সাথী আক্তার।

বিভিন্ন নারী-পুরুষের নামে থাকে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট। নারীর ছবি-সংবলিত এসব অ্যাকাউন্ট থেকে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয় বিভিন্ন পণ্য বিক্রির। সঙ্গে দেওয়া হয় একটি মুঠোফোন নাম্বার কিংবা আহ্বান করা হয় আইডি’র মেসেজ বক্সে বার্তা পাঠানোর। পণ্য কিনতে আগ্রহী কোনো পুরুষ ওই ফোন নাম্বারে কল করলে অপর প্রান্তে কল রিসিভ করেন একজন নারী। একপর্যায়ে ওই নারী ‘ঘনিষ্ট আলাপ’ শুরু করেন, প্রলোভিত হন কল করা পুরুষ। ফেসবুকের ইনবক্সে মেসেজ দিলেও একইভাই ‘ঘনিষ্ট হওয়ার ট্যাকনিক’ ব্যবহার করা হয়।
 

তারপর প্রলুব্ধ পুরুষ নারীর দেওয়া একটি বাসায় যান। কিন্তু সেখানে নারী একা থাকেন না, থাকেন তার সহযোগিরা। পুরুষ মানুষটি সেখানে যাওয়ামাত্র তাকে জিম্মি করে আদায় করা হয় টাকা-পয়সা, লুটে নেওয়া হয় সর্বস্ব।
 


সিলেটে নারী দিয়ে ব্ল্যাকমেইল করা এমন কয়েকটি চক্র বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তাদের ফাঁদে পা দিয়ে ফাঁসছেন সব বয়েসি পুরুষ। এমন একটি ঘটনা বেরিয়ে এসেছে সিলেটের শীর্ষ নিউজ পোর্টাল ‘সিলেটভিউ’র অনুসন্ধানে। 
 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সিলেট মহানগরের ২৪ নং ওয়ার্ডের কুশিঘাট এলাকার একটি দুতলা বাসার নিচতলার একটি ইউনিট প্রায় দুই মাস আগে মাসপ্রতি ৯ হাজার টাকায় ভাড়া নেন সাথী আক্তার নামের এক নারী। তার বাড়ি সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর উপজেলার লাউড়েরঘর এলাকায়। ভাড়া নেওয়ার সময় বাসার মালিককে সাথী তার স্বামী ও দুই সন্তান আছে বলে জানান।
 

বাসার মালিককে তিনি আরও জানান- একটি বেসরকারি হাসপাতালে আয়া এবং স্বামী মহানগরের সোবহানীঘাট কাঁচাবাজারে চাকরি করেন। কিন্তু মূলত সাথীর কোনো স্বামী নেই। তিনি ওই বাসায় একাই থাকতেন। তার রয়েছে ৪ ছেলে সহযোগী। তাদের একজনের নাম জামিল ও আরেকজনের নাম নাদেল। ছেলে সহযোগিরা ‘জান্নাত আরা’ ও ‘রনি আহমদ’ নামে দুটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে পণ্য বিক্রির বিজ্ঞাপন দেন। এছাড়া এসব অ্যাকাউন্টের ইনবক্সে বার্তা আদান-প্রদানের মাধ্যমে অসামাজিক কাজের চুক্তিও করেন তারা বিভিন্নজনের সঙ্গে। কেউ যখন এই চক্রের ফাঁদে পা দিয়ে কুশিঘাটের বাসাটিতে আসেন তখন তারা তাকে জিম্মি করে লুটে নেন সর্বস্ব। এছাড়া সাথী নামের ওই নারীর সঙ্গে বিবস্ত্র অবস্থায় ছবি ও ভিডিও মুঠোফোনে ধারণ করে হুমকি দেওয়া হয়- এ বাসা থেকে বেরিয়ে কাউকে কিছু বললে এসব ছবি ও ভিডিও অনলাইনে ছড়িয়ে দেওয়া হবে। ফলে ভয়ংকর এ চক্রের কাছে সব হারিয়েও মুখ খুলেন না ভুক্তভোগীরা।
 

এভাবেই সোমবার (১৬ অক্টোবর) সাথী-চক্রের ফাঁদে পা দেন সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার হেতিমগঞ্জ এলাকার ২৫ বছরের এক যুবক। পেশায় তিনি একজন মাদরাসাশিক্ষক। তার সঙ্গে কথা হয় সিলেটভিউ’র। তিনি সিলেটভিউ-কে বলেন- ‘রনি আহমদ’ নামক ফেসবুক আইডিতে তিনি একটি ল্যাপটপ বিক্রির বিজ্ঞাপন দেখে ইনবক্সে ক্ষুদেবার্তা পাঠান। পরে কথা হয় সাথীর সঙ্গে। সাথীর দেওয়া কুশিঘাটের বাসার ঠিকানায় ওই যুবক সোমবার সন্ধ্যার পর আসলে সাথীর ছেলে সঙ্গীরা তাকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে মোবাইল ও টাকা-পয়সা ছিনিয়ে নেয়। এরপর তার কাছে আরও ১ লাখ টাকা দাবি করা হয়। পরে বিকাশের মাধ্যমে ১০ হাজার টাকা আনিয়ে রাত ৯টার দিকে তাদের হাত থেকে মুক্তি পান ওই যুবক।

তবে এ বিষয়ে সাথীর বক্তব্য ভিন্ন। তিনি সিলেটভিউ-কে বলেন- ওই যুবক তার সঙ্গে অসামাজিক কাজ করার প্রস্তাবে রাজি হয়েই কুশিঘাটের বাসায় এসেছিলেন। 

ব্ল্যাকমেইলের শিকার ওই যুবকের কথায়ও রয়েছে অনেক গড়মিল।
 

তিনি সিলেটভিউ-কে বলেন- কোনো খারাপ কাজের নয়, ল্যাপটপ কেনার উদ্দেশ্যেই তিনি এ বাসায় এসেছিলেন। পরে তাকে ওই বাসায় আটকে রেখে সবকিছু ছিনিয়ে নেওয়া হয়।

তবে সাথী বলছেন- ওই যুবকের সঙ্গে ‘অসামাজিক কাজের চুক্তির’ মেসেজ আদান-প্রদানের প্রমাণ তার কাছে রয়েছে।
 

এদিকে, ‘ব্ল্যাকমেইলের শিকার’ ওই যুবক মঙ্গলবার (১৭ অক্টোবর) দুপুরে কুশিঘাট এলাকায় গিয়ে স্থানীয়দের কাছে বিচারপ্রার্থী হন এবং ঘটনার বর্ণনা দিয়ে মোবাইল উদ্ধার করে দেওয়ার দাবি জানান। পরে এলাকার মানুষজন সাথী নামের ওই নারীর কাছে বিষয়টি জানতে চাইলে এলাকাবাসীকে তিনি বলেন- তিনি পতিতাবৃত্তির সঙ্গে জড়িত। জামিল, নাদেল ও আরও দুই ছেলে তাকে জোরপূর্বক এই ব্ল্যাকমেইল কাণ্ডের সঙ্গে জড়িয়েছে। এর বিনিময়ে তিনি টাকা পান। অল্প কিছুদিন আগে তারা সিলেটে চক্রটি গড়ে তুলেছেন। নানা বয়েসি পুরুষদের প্রলুব্ধ করে ফাঁদে ফেলা হয় এবং একপর্যায়ে জিম্মি করে টাকা-পয়সা লুটে নেওয়া হয়।

পরে এলাকাবাসী পুলিশে খবর দিলে মঙ্গলবার বিকালে সিলেটের শাহপরাণ থানার একটি টিম ঘটনাস্থলে গিয়ে সাথী ও ‘ব্ল্যাকমেইলের শিকার’ যুবককে আটক করে নিয়ে যায়।

বাসার মালিক সিলেটভিউ-কে বলেন- সাথী নামের ওই নারী বাসা ভাড়া নেওয়ার সময় একজন পুরুষ নিয়ে আসেন এবং তাকে স্বামী বলে পরিচয় দেন। শর্ত অনুযায়ী তিনি তার জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপিও আমাকে দেন। তবে সেটি আসল না নকল তা যাচাই করা হয়নি।
 

সাথীকে আটকের বিষয়টি সিলেটভিউ-কে নিশ্চিত করেছেন শাহপরাণ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ইন্দ্রনীল ভট্টাচার্য্য। তিনি সিলেটভিউ-কে বলেন- ওই যুবকের অভিযোগ, ল্যাপটপ কিনতে গিয়ে তিনি প্রতারণার শিকার হয়েছেন। তিনি লিখিত অভিযোগ দিলে এবং তদন্তে বিষয়টির সত্যতা পেলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া ওই নারীর সঙ্গে আর কে কে জড়িত আছে তাদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।

 


সিলেটভিউ২৪ডটকম / ডালিম