বিভিন্ন দাবিতে লাগাতার আন্দোলনে নেমেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। দলটি বলছে- এটি তাদের ‘ডু অর ডাই’ আন্দোলন। দাবিগুলোর মধ্যে প্রধান হচ্ছে- আওয়ামী লীগ সরকারের পতন।

এই দাবিতে গত ২৮ অক্টোবর রাজধানী ঢাকার নয়াপল্টনে আয়োজিত মহাসমাবেশ শেষ করতে না পেরে পরদিন হরতালের ডাক দেয় বিএনপি। পরে দেয় ৩১ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত তিন দিনের টানা অবরোধের ডাক। উত্তপ্ততার মধ্যদিয়ে এ তিন দিনের অবরোধ হয়েছে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে। আগামী রবি ও সোমবার (৫ ও ৬ নভেম্বর) ফের ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ-কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি।


এদিকে, ৩১ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত তিন দিনের টানা অবরোধকালে বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের মধ্যমসারীর এবং তৃণমূলের কর্মীরা রাস্তায় থাকলেও ছিলেন না সিলেট জেলা ও মহানগরের শীর্ষ নেতারা। সর্বোপরি এ তিন দিন একটিবারের জন্যও মাঠে দেখা যায়নি বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার সিলেটের চার উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির, সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, ইলিয়াসপত্নী তাহসিনা রুশদীর লুনা ও ড. এনামুল হক চৌধুরীকে।

এদের মধ্যে শুধু আরিফুল হক চৌধুরী অবরোধের প্রথম দিন দক্ষিণ সুরমায় পুলিশের ধাওয়া খেয়ে দুর্ঘটনায় নিহত যুবদল নেতা দিলু আহমেদ জিলুর লাশ দেখতে হাসপাতালে যান এবং পরদিন (বুধবার) দুপুরে লাশটি গ্রহণ করে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেন। এর বাইরে তাঁকে আর কোথাও দেখা যায়নি। আর বাকি তিনজনকে একবারের জন্যও দেখা যায়নি আন্দোলনের মাঠে।

বিষয়টি নিয়ে সিলেট বিএনপির তৃণমূল ও অবরোধ-আন্দোলনে সরব নেতাকর্মীদের মাঝে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। নেতাকর্মীদের অনেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে মন্তব্যের মাধ্যমে প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির। তাঁকে বিগত বিভিন্ন সময় সিলেট বিএনপি আয়োজিত ‘শান্তিপূর্ণ’ কর্মসূচিতে উপস্থিত হিয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্য দিতে দেখা গেছে। অংশগ্রহণ করেছেন মিছিলসহ বিভিন্ন সভা-সমাবেশে। কিন্তু দলীয় নেতাকর্মী মনে করছেন- তাদের মনোবল বাড়ানোর জন্য যেসময় সবচেয়ে বেশি তাঁকে মাঠে প্রয়োজন, ঠিক সেসময় তিনি নিরব রয়েছেন। যা মাঠের নেতাকর্মীদের হতাশ করছে।

এদিকে, বিএনপি নির্বাচনে গেলে গুরুত্বপূর্ণ সিলেট-১ আসনে খন্দকার আব্দুল মুক্তাদিরকেই দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হবে বলে রয়েছে জোর গুঞ্জন। এ ক্ষেত্রে তাঁর আরও বেশি মাঠে থাকার প্রয়োজন বলে মনে করছেন ত্যাগী নেতাকর্মীরা।

খালেদা জিয়ার দুই উপদেষ্টা ইলিয়াসপত্নী তাহসিনা রুশদীর লুনা ও ড. এনামুল হক চৌধুরী। এনামুল হক দ্বাদশ নির্বাচনে সিলেটের কোনো আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন চাওয়ার ইচ্ছা পোষণ না করলেও তাহসিনা লুনার সিলেট-২ আসনে বিএনপির প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। কিন্তু দলের চলমান আন্দোলনে তাঁকে একদিনও দেখা যায়নি কোথাও। খবর নেই ড. এনামুল হক চৌধুরীরও।

গত ১৬ সেপ্টেম্বর সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা হিসেবে পদোন্নতি দেওয়া হয়। এর আগে তিনি বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ছিলেন। দলের নির্দেশনা মেনে সিটি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করায় তাকে এ পদ ‘উপহার’ দেওয়া হয়। কিন্তু তাঁকেও গত তিন দিনের টানা অবরোধে অনুসারীদের নিয়ে মাঠে নামতে দেখা যায়নি। বিএনপি নির্বাচনে গেলে সিলেট-১ অথবা সিলেট-৪ আসন থেকে তিনি দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার জোর সম্ভাবনা রয়েছে।

খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির ও আরিফুল হক চৌধুরী দুজনেরই নিজস্ব বলয় রয়েছে সিলেটে। মহানগরে বিভিন্ন সময়ে আয়োজিত দলীয় কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে তাঁরা দুজনই নিজ বলয়ের নেতাকর্মীদের দিয়ে শোডাউন করে শক্তি প্রদর্শন করেন। কিন্তু খন্দকার আব্দুল মুক্তাদিরের মতো আরিফুল হক চৌধুরীও গত তিন দিন ছিলেন ‘নিরব’।

তৃণমূল বা অবরোধে সক্রিয় থাকা নেতাকর্মীরা বলছেন- নিজের অনুসারীদের নিয়ে তাঁরা অবরোধ-কর্মসূচিতে মাঠে থাকলে সিলেটে আন্দোলন পুরোদমে ‘চাঙা’ হতো।
 
এ বিষয়ে বিএনপি চেয়ারপার্সনের এই চার উপদেষ্টার কারোরই বক্তব্য মুঠোফোনে পাওয়া যায়নি।


সিলেটভিউ২৪ডটকম / ডালিম