দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের একটি প্রাচীন জনপদ সিলেট। বনজ, মৎস্য ও খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এই লীলাভূমি। ইউরোপ, আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে এ অঞ্চলের লাখ লাখ মানুষের বিচরণ। বিশেষ করে যুক্তরাজ্যে বিপুল সংখ্যক সিলেটি বসবাস করেন; এ বিষয়টি মাথায় রেখে সিলেটকে অনেকেই ‘দ্বিতীয় লন্ডন’ হিসেবে অভিহিত করেন। স্পষ্টত, প্রবাসী আয়ে সিলেট অঞ্চলের মানুষের জীবনমান বেশ উন্নত। কিন্তু আলোর ঝলকানির নিচে তো অন্ধকার থাকেই। সিলেটের অগ্রসরমান জীবনমানের ক্ষেত্রে অন্ধকার যেন চা শ্রমিক আর ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর লোকজন; যাদের জীবনে আলোর রোশনাই খুব কম সময়ই স্পর্শ করে।

এসব জনগোষ্ঠীর মানুষের মতে, তারা সামাজিক ও রাজনৈতিক উভয় ক্ষেত্রেই অবহেলিত, পূর্ণ অধিকার থেকে বঞ্চিত। জাতীয় নির্বাচনের আগে কখনো-সখনো তাদের নিয়ে কিছু কিছু রাজনৈতিক দল মনোযোগ দিলেও নির্বাচন পরবর্তীতে দলগুলো তাদের বিষয়ে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। ফলে বছরের পর বছর ধরে এসব জনগোষ্ঠীর সাথে বঞ্চনা শব্দটি ঔতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে।


চা শ্রমিক ও নৃগোষ্ঠীর চিত্র

বাংলাদেশ চা বোর্ডের তথ্যানুসারে, বাংলাদেশে বাণিজ্যিক চা আবাদ শুরু হয় ১৮৫৪ সালে (মতান্তরে ১৮৪৭)। সিলেট শহরের উপকণ্ঠে ‘মালনিছড়া চা বাগান’ ছিল এ দেশের প্রথম চা বাগান। তবে জেলা ব্র্যান্ডিংয়ের অংশ হিসেবে সিলেট জেলা প্রশাসন থেকে ২০১৮ সালের জুনে প্রকাশিত ‘প্রকৃতি কন্যা সিলেট’ শীর্ষক ব্র্যান্ড-বুকে বলা হয়েছে, মালনিছড়া চা বাগান ১৮৪৯ সালে ইংরেজ ব্যবসায়ী হার্ডসনের হাত ধরে গড়ে ওঠে।

উপযোগী আরণ্যক পরিবেশ থাকায় সিলেট অঞ্চলে দ্রুত চা চাষ বৃদ্ধি পায়। স্বাধীনতার পূর্ব অবধি দেশে চা আবাদ অঞ্চল দুটি ভ্যালিতে বিভক্ত ছিল; একটি সিলেটের ‘সুরমা ভ্যালি’, অপরটি চট্টগ্রামের ‘হালদা ভ্যালি’। স্বাধীনতার পর হালদা ভ্যালির নামকরণ হয় ‘চট্টগ্রাম ভ্যালি’। অন্যদিকে সিলেট অঞ্চলে চা বাগানের আধিক্যের কারণে ‘সুরমা ভ্যালি’কে পৃথক ছয়টি ভ্যালিতে রূপ দেওয়া হয়। এগুলো হচ্ছে- নর্থ সিলেট ভ্যালি, বালিশিরা ভ্যালি, লস্করপুর ভ্যালি, লংলা ভ্যালি, জুড়ী ভ্যালি ও মনু-দলই ভ্যালি। দেশে বর্তমানে ১৬৭টি চা বাগান আছে, তন্মধ্যে ১৩৫টিই সিলেট অঞ্চলে অবস্থিত। এর মধ্যে সিলেট জেলায় চা বাগানের সংখ্যা ২০টি।

চা শ্রমিকদের প্রায় সবাই-ই ছোট ছোট গোত্র বা গোষ্ঠীর বাসিন্দা। এসব ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মধ্যে রয়েছে ওঁরাও, সাঁওতাল, ভূমিজ, ভুঁইয়া, মাহালি, পাসি, ঘাসি, উড়িয়্যা (পান), রবিদাস, তুরী, মুন্ডা, গোর্খা, কোরা, দোসদ, শবর, খড়িয়া ও পরধান প্রভৃতি।

সিলেট অঞ্চলে আরও কিছু নৃগোষ্ঠীর বাস রয়েছে, যারা মূলত চা চাষ নয়, অন্য পেশা বা কাজে জড়িত। তন্মধ্যে মণিপুরী জনগোষ্ঠী বয়ন শিল্পে অবস্থান ক্রমেই সুসংহত করছে। খাসিয়া বা খাসি নৃগোষ্ঠী কমলা, তেজপাতা, জুম ও পান চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করে। ত্রিপুরা জনগোষ্ঠী জুম চাষ, পাত্র সম্প্রদায় কৃষি কাজ, গারো গোষ্ঠী জুম চাষ ও পশু পালন, হাজং সম্প্রদায় কাপড় বোনা ও কৃষিকাজ এবং হালাং জনগোষ্ঠী জুম চাষ করে থাকেন।

এ ছাড়া সিলেট অঞ্চলে বসবাস করছে বাংলাদেশের একমাত্র মুসলিম ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ‘পাঙাল’; যারা ধর্মীয় ভাবাবেগে মুসলমান হলেও সাংস্কৃতিক বিচারে মণিপুরীদের সাথে তাদের সামঞ্জস্য বেশি।

সবমিলিয়ে সিলেট অঞ্চলে প্রায় ৩৫টি ক্ষুদ্র জাতি-গোষ্ঠীর বসবাস। এর মধ্যে অন্তত ২৬টিই চা-বাগানকেন্দ্রিক। অন্য নৃগোষ্ঠীর লোকজন কিছুটা অগ্রসর হলেও চা-কেন্দ্রিক গোষ্ঠীর অবস্থা শোচনীয়।

দেশে চা শ্রমিক জনগোষ্ঠীর প্রকৃত সংখ্যা কতো, তা বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো পরিচালিত জনশুমারি থেকে পাওয়া যায় না। সেখানে নির্দিষ্ট করে চা শ্রমিক জনগোষ্ঠীর সংখ্যা সম্পর্কে আলাদা করে কিছু উল্লেখ নেই। তবে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় তথ্যানুসারে দেশে চা শ্রমিক জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বর্তমানে প্রায় সাড়ে ৭ লাখ, আর স্থায়ী শ্রমিক সংখ্যা দেড় লাখের বেশি। এর বাইরে অস্থায়ী শ্রমিক সংখ্যা আরও প্রায় অর্ধ লাখের মতো।

অবশ্য ২০২২ সালের জনশুমারিতে দেশে মোট ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী মানুষের সংখ্যা ১৬ লাখ ৫০ হাজার ১৪৯ জন উল্লেখ করা হয়েছে। এদের মধ্যে ৯ লাখের বেশি বাস করেন পার্বত্য চট্টগ্রামে। সিলেট বিভাগে নৃগোষ্ঠী মানুষের সংখ্যা ১ লাখ ৩৬ হাজার ৫৯৪ জন। এদের সিংহভাগই আবার চা-শ্রমিক জনগোষ্ঠী।

বঞ্চনার জীবন

দেশের বাগানগুলোতে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নিয়মিতই চায়ের উৎপাদন বাড়ছে। চলতি বছরও চা উৎপাদনে নতুন রেকর্ড গড়ার লক্ষ্য রয়েছে। এবার লক্ষ্যমাত্রা ১০ কোটি কেজি। ২০২৫ সালের মধ্যে দেশে চায়ের উৎপাদন ১৪ কোটি কেজিতে নিয়ে যেতে চায় বাংলাদেশ চা বোর্ড।

“চায়ের অব্যাহত উৎপাদন বৃদ্ধি দেশের অর্থনীতিতে সঞ্চার করছে নতুন গতি। কিন্তু যাদের শ্রমে-ঘামে, যাদের অবর্ণণীয় কষ্ট দেশের অর্থনীতিকে সুসংহত করতে ভূমিকা রাখে, সেই শ্রমিকদের জীবনেরই গতি কোথায়!”

অনেকটা আক্ষেপের সুরেই যেন কথাগুলো বলছিলেন বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন সিলেট ভ্যালির সাবেক সভাপতি শ্রীবাস মাহালি।

পরের বক্তব্যে খানিক ব্যাখ্যাই যেন দিলেন এই শ্রমিক নেতা, “আমাদের চা শ্রমিক, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী বঞ্চনার শিকার। রাজনৈতিক শক্তিমত্তায় তো আমাদের অবস্থান নেই-ই, সামাজিক কিংবা মৌলিক অধিকারেও আমরা পরিপূর্ণ ন্যায্যতা থেকে বঞ্চিত। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাসস্থান, মজুরি সবক্ষেত্রে আমাদের জনগোষ্ঠী পিছিয়ে আছে।”

চা শ্রমিক এবং শ্রমিক নেতাদের সাথে কথা বলে চা শ্রমিক জনগোষ্ঠীর জীবনমানের নিম্নমুখীতা, রাজনৈতিক বঞ্চনা ও আশাহত হওয়ার তথ্য পাওয়া যায়।

তারা জানান, রাজনৈতিক ক্ষেত্রে চা শ্রমিক ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর স্বতন্ত্র শক্ত ভিতের কোনো প্ল্যাটফর্ম নেই। বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম, বাংলাদেশ আদিবাসী পরিষদ এসব সংগঠনই মূলত তাদের অধিকার, দাবিদাওয়া নিয়ে কথা বলে। এর বাইরে অভ্যন্তরীণ কিছু সংগঠনও রয়েছে, যেগুলো মূলত জাতি বা গোষ্ঠীকেন্দ্রিক।

চা শ্রমিক নেতারা জানান, রাজনীতিতে চা শ্রমিকদের প্রত্যক্ষ সম্পৃক্ততা নেই। তবে নির্বাচন এলে এই জনগোষ্ঠীর কদর বাড়ে রাজনৈতিক দল ও নেতাদের কাছে। তখন চা শ্রমিক ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর লোকদের আবাসস্থলে নেতাদের আগমন বাড়ে।

চা শ্রমিকেরা জানান, স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান চা শ্রমিকদের ভোটাধিকার দিয়েছিলেন। সেই থেকে আওয়ামী লীগের প্রতি চা জনগোষ্ঠীর দুর্বলতা রয়েছে। চা শ্রমিক অধ্যুষিত নির্বাচনী আসনগুলোতে তাই নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরাই সিংহভাগ সময় বিজয়ী হন। উদাহরণস্বরূপ তারা সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার-৪ আসনের কথা টানেন। চা শ্রমিক অধ্যুষিত এ আসনে সিংহভাগ সময়ই আওয়ামী লীগদলীয় প্রার্থী সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। সর্বশেষ পাঁচটি সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আব্দুস শহীদ টানা নির্বাচিত হন, যিনি এর আগে ১৯৯১ সালের নির্বাচনেও বিজয়ী হয়েছিলেন। শুধুমাত্র ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বিতর্কিত নির্বাচনে এ আসনে বিএনপিদলীয় শফিকুর রহমান বিজয়ী হয়েছিলেন।

আওয়ামী লীগের প্রতি চা শ্রমিক ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর লোকদের দুর্বলতার কথা অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর অজানা নয়। ফলে অন্যান্য দলগুলো তাদের প্রতি কিছুটা বিরাগভাজন। যদিও ভোট এলে এসব দলও তাদের ভোট চায়, কিন্তু ভোটের পরে হেনস্থার চেষ্টাও করা হয়। অন্যদিকে, তাদেরকে ‘নিজস্ব ভোট ব্যাংক’ ধরে নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা অনেকটা নিশ্চিন্ত। বাস্তব চিত্র হচ্ছে, নির্বাচন আসে, ভোট হয়, তবে চা জনগোষ্ঠীর মধ্যে থাকে না উৎসব, আমেজ। কারণ, তাদের মধ্যে ভীতি কাজ করে, হেনস্থা হওয়ার ভয় থাকে। ফলে রাজনৈতিক দিগুলো নিয়ে প্রকাশ্যে কেউ মুখ খুলতে চান না।

নাম গোপন রাখার শর্তে সিলেটের মালনীছড়া চা বাগানের ৬২ বছর বয়সী এক পুরুষ চা শ্রমিক বলেন, “আমাদের তো সীমাবদ্ধতার জীবন। অধিকারের কথা বলতে গেলেই হয়রানির শিকার হতে হয়। আওয়ামী লীগের প্রতি আমাদের টান আছে, ভোটও দেই তাদেরকে, কিন্তু তারা সরকারে থাকলেও আমাদের জীবনমান কতোটা বদলায় সেটা তো দেখতেই পাচ্ছেন। আমাদের ন্যুনতম মজুরির দাবিও বাস্তবায়ন হয় না, অন্য সব দাবির কথা তো বাদই দিলাম!

দৈনিক মজুরি ১২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০০ টাকা করার দাবিতে ২০২২ সালের ৯ আগস্ট প্রায় দেড় লাখ চা শ্রমিক আন্দোলন শুরু করেন। প্রায় দুই সপ্তাহের আন্দোলন শেষ হয় ২৭ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে চা শ্রমিক নেতাদের বৈঠকের মধ্য দিয়ে। শ্রমিকদের মজুরি ১৭০ টাকা নির্ধারণ করে দেন প্রধানমন্ত্রী।

(মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে ২০২২ সালে চা ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর আন্দোলন। ফাইল ছবি।)

২০১৬ সালের ৪ এপ্রিল বাংলাদেশ আদিবাসী সমাজ উন্নয়ন সংস্থার তৎকালীন সভাপতি ও চা শ্রমিক ইউনিয়নের তৎকালীন উপদেষ্টা স্বপন কুমার সাঁওতালের একটি সাক্ষাৎকার প্রকাশ করে জার্মানভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ডয়েচে ভেলে। ‘ভূমির অধিকার চান যাঁরা....’ শীর্ষক সেই সাক্ষাৎকারে স্বপন কুমার সাঁওতাল বলেছিলেন, “চা বাগানের বাইরে যে রাজনৈতিক নেতারা আছেন, তাঁদের কারণে আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগি। রাজনীতির সঙ্গে চা বাগানের শ্রমিকরা বিশেষভাবে জড়িত না। এই সব নেতারা নারী-পুরুষ উভয়ের ওপর অত্যাচার করে। বিশেষ করে নারীরা গ্রামে কাজ করতে গেলে, তাঁদের ওপর অত্যাচার, নির্যাতন, এমনকি ধর্ষণের মতো ঘটনা ঘটে।”

তিনি আরও বলেছিলেন, “নির্বাচনের সময় রাজনৈতিক নেতারা আমাদের আশ্বাস দেন। কিন্তু নির্বাচন যখন শেষ হয়ে যায়, অর্থাৎ যখন তাঁরা পাশ করে যান, তখন কিন্তু আমাদের কথায় কান-মাথা নাড়েন না। বরং তাঁরা আমাদের ক্ষতি-ই করেন। যেমন ধরেন, চা বাগানের মধ্যে ছোট ছোট ছড়া আছে। সেগুলো থেকে তাঁরা ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করেন। পাশাপাশি চা বাগানে যে ছায়াবৃক্ষ থাকে, সেগুলো তাঁদের মাস্তান বাহিনী এসে কেটে নিয়ে যায়।”

দাবির বিনিময়ে কেবলই আশ্বাস

রাজনীতিতে না জড়ালেও রাজনৈতিক নেতৃত্বের কাছে দাবির ঢালি আছে চা শ্রমিক জনগোষ্ঠীর। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় দাবি, ভূমির অধিকার। দেড়শ বছরেরও বেশি সময় ধরে চা শ্রমিকরা নিজেদের ভূমির দাবি জানিয়ে আসছেন। স্বাধীতাত্তোর সময়ে এ দাবির পালে নতুন হাওয়া লাগে। বিভিন্ন সরকারের কাছে নিজেদের দাবি উপস্থাপন করেছেন তারা। কিন্তু মিলেছে শুধু আশ্বাস। এখন আশ্বাসে আশ্বাসে চা শ্রমিকদের বিশ্বাসে ধরছে ফাটল।

২০২২ সালের ৩ সেপ্টেম্বর চা শ্রমিকদের সাথে এক ভার্চুয়াল সভায় বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে তিনি বলেন, “চা শ্রমিকরা যাতে প্রত্যেকে ঘর পায়, বিশেষত মাটির অধিকার যেনো তারা পায় সেটার ব্যবস্থা আমি অবশ্যই করে যাব। কারণ ভূমির অধিকার না থাকলে একজন মানুষের সম্মান থাকে না।”

তবে আওয়ামী লীগ সরকারের চলমান মেয়াদে চা শ্রমিকদের এই দাবি পূর্ণতা পায়নি।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নিপেন পাল সিলেটভিউকে বলেন, “আমাদের অবস্থা কতোটা নাজুক দেখুন, শ্রম আইনের ৩২ ধারা অনুসারে কোনো শ্রমিকের চাকরি গেলে, চাকরি ছাড়লে তাকে বরাদ্দকৃত ঘরটিও ছেড়ে দিতে হয়। এ ছাড়া ইচ্ছে করলেই বরাদ্দকৃত জায়গায় আমরা নির্মাণকাজ করতে পারি না।”

তিনি বলেন, “রাজনৈতিক নেতৃত্বের কাছে, সরকারের কাছে আমাদের মূল দাবি ভূমির অধিকার। আমরা চাই আমাদের ভূমির অধিকারের বিষয়টি এবার রাজনৈতিক দলগুলোর ইশতেহারে সুস্পষ্টভাবে থাকবে।”

বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক রাজু গোয়ালা সিলেটভিউকে বলেন, “বাংলাদেশে চায়ের ইতিহাস ১৭০ বছরের। এটা কিন্তু অনেক দীর্ঘ একটা সময়। অথচ এখনও আমরা ভূমির অধিকার থেকে বঞ্চিত। এই বঞ্চনার অবসান হোক, এটা আমরা মনেপ্রাণে চাই। একইসাথে আমরা চাই বাজারের সাথে সামঞ্জস্য রেখে আমাদের মজুরি বাড়ুক, মৌলিক অধিকার বাস্তবায়ন হোক।”


(এরকম ঝুপড়ি ঘরই সিংহভাগ চা শ্রমিকদের আবাস)

চা সম্প্রদায়ের লোকজন জানান, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ক্ষেত্রেও তারা ধুঁকছেন। বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও সরকারের তরফ থেকে নানা আশ্বাস দেওয়া হলেও চা শ্রমিক জনগোষ্ঠী বারবারই প্রবঞ্চনার শিকার হচ্ছেন। তাদের মৌলিক সুযোগ-সুবিধা থেকেও তারা বঞ্চিত।

চা শ্রমিক ও শ্রমিক নেতারা বলছেন, বাংলাদেশ শ্রম বিধিমালা ২০১৫ এর বিধি ৯৬, তফসিল ৫ চা বাগানের লোকদের জন্য চিকিৎসাসেবা সম্পর্কিত সব নির্দেশনাই দেওয়া আছে। প্রত্যেক বাগানে ক্লিনিক বা হাসপাতাল, চিকিৎসক, মেডিকেল অ্যাসিসট্যান্ট, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ধাত্রী, ইনডোর ও আউটডোর চিকিৎসা সুবিধার কথা বলা হয়েছে। তবে বাস্তবে সিংহভাগ বাগানেই চিকিৎসাসেবা অপ্রতুল।

চা শ্রমিক ইউনিয়ন সিলেট ভ্যালির সাবেক সভাপতি শ্রীবাস মাহালি বলেন, “দুনিয়া এগিয়ে যাচ্ছে, দেশ এগোচ্ছে, সবকিছু বদলাচ্ছে। কিন্তু এই একুশ শতকেও শিক্ষা, বাসস্থান, চিকিৎসার মতো মৌলিক অধিকার থেকে আমাদের সিংহভাগ লোক বঞ্চিত। অশিক্ষা, অপুষ্টি, দারিদ্রতার সঙ্গে তাদের নিত্যবাস। আজকের (১৩ ডিসেম্বর) কথা যদি বলি, পেঁয়াজের কেজি ২০০ টাকা, আমাদের মজুরি ১৭০ টাকা; আমরা বাঁচি কি করে?”

“যদি রাজনৈতিক নেতৃত্ব চায়, উদার হয়, তবে এই অবস্থার পরিবর্তন সম্ভব।”

জরিপ-গবেষণায় যে চিত্র

চা জনগোষ্ঠীর অভিযোগের সত্যতা খোদ সরকারি জরিপেই প্রমাণিত হয়েছে। সিলেট অঞ্চলের চা বাগানগুলোতে স্বাস্থ্য পরিস্থিতি নিয়ে ২০১৯ সালে প্রথম জরিপ চালায় বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো। সেই জরিপে দেখা যায়, চা শ্রমিকদের সন্তানেরা তীব্র অপুষ্টির শিকার। অপুষ্টির কারণে বাগানের শিশুদের ৪৫ শতাংশই খর্বাকার, ২৭ শতাংশ শীর্ণ। ৪৭ দশমিক ৫ শতাংশই শিশু স্বল্প ওজনের। একই জরিপে ওঠে আসে, চা বাগানের ৬৭ শতাংশ পরিবারেরই নূন্যতম স্যানিটেশন সুবিধা নেই।

বেসরকারি উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ বাংলাদেশ (সিআইপিআরবি) ২০১৮ সালে মৌলভীবাজার জেলার চা বাগানগুলোর নারীদের ওপর একটি গবেষণা চালায়। তাতে দেখা যায়, বাগানের প্রায় ১৫ শতাংশ নারী জরায়ু ক্যান্সারে ভুগছেন।

শিক্ষার ক্ষেত্রেও আশায় বসতি গড়ার কিছু নেই চা শ্রমিক জনগোষ্ঠীর। এই জনগোষ্ঠীর মতে, শিক্ষার মানবিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়ায় তাদের অগ্রগতি রুদ্ধ হচ্ছে।

২০২১ সালের ১১ নভেম্বর এডুকো বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশ ইসিডি নেটওয়ার্ক ‘চা বাগান ও হাওরাঞ্চলের শিশুদের বিকাশ: সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক একটি গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশ করে। প্রবন্ধে বলা হয়, চা বাগানের শিশুদের শিক্ষার সুযোগ সুবিধা পর্যাপ্ত নয়। সারাদেশে প্রাথমিক শিক্ষার হার যেখানে ৯৫ শতাংশের ওপরে, সেখানে চা বাগানে এই হার ৭৫ শতাংশ।

গ্লোবাল মাল্টিপল ইনডিকেটর ক্লাস্টার সার্ভের (এমআইসিএস) অংশ হিসেবে ২০১৯ সালে বাংলাদেশ অংশের জরিপ সম্পন্ন করে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। এতে কারিগরি সহযোগিতা দেয় জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ, অর্থায়ন করে জাতিসংঘের জনসংখ্যা তহবিল (ইউএনএফপিএ)। এই জরিপ অনুসারে, হবিগঞ্জে চা বাগানের শিশুদের ২৯ দশমিক ৮ শতাংশ শিশুশ্রমে জড়িত। এই হার সিলেটের চা বাগানে ১৯ দশমিক ৩ শতাংশ এবং মৌলভীবাজারে ১৫ দশমিক ৬ শতাংশ।

চা শ্রমিক নেতারা জানান, বাংলাদেশ সরকার সবার জন্য শিক্ষার কথা বলে। এর মধ্যে প্রাথমিক শিক্ষাকে সবার জন্য বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। কিন্তু চা গোষ্ঠীর জন্য নেই শিক্ষা গ্রহণের উপযুক্ত পরিবেশ, ব্যবস্থা। একদিকে সুযোগ-সুবিধা কম, অন্যদিকে একেবারে কম মজুরির কারণে চা শ্রমিকদের সংসারে অভাব নিত্যসঙ্গী। ফলে অনেক বাবা-মা সন্তানকে শিশু বয়সেই কাজে লাগিয়ে দেন সামান্য বাড়তি উপার্জনের আশায়।

এরকমই একজন লাক্কাতুরা চা বাগানের শ্রমিক কাকলী পাল, যিনি দুই ছেলেকে প্রাথমিকের পরেই কাজে লাগিয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, “প্রাথমিকের পর সম্পূর্ণ নিজের খরচে সন্তানদের পড়াশোনা করাতে হয়। আমরা খরচ কোথায় পাবো। তাই প্রাথমিকের পর ছেলেদের কাজে দিয়েছি।”

“আমরা তো খেটেখাওয়া মানুষ, প্রতিদিন পরিশ্রম করছি। আমাদের দাবি, সরকার আমাদের দিকে একটু সুনজর দিক। আমাদের জীবন তো হাড়ভাঙা খাটুনিতে শেষ হয়ে যাবে, পরের প্রজন্ম যেন একটা সুন্দর জীবন পায়, সেটা যেন সরকার ব্যবস্থা করে দেয়।”

গত সেপ্টেম্বরের শুরুতে চা খাতে নিয়োজিত নারী শ্রমিকদের অধিকার ও শোভন কাজের বিদ্যমান পরিস্থিতি নিয়ে একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ (বিলস)। অক্সফ্যামের সহায়তায় এ বছরই এই গবেষণা সম্পন্ন হয়।

গবেষণা প্রতিবেদনের বরাতে বিলস’র উপ-পরিচালক মনিরুল ইসলাম জানান, সামগ্রিকভাবে চা শ্রমিকদের জন্য বিদ্যমান আইনি মানদন্ডের তুলনায় প্রকৃত শ্রমিক অধিকার পরিস্থিতি অসন্তোষজনক, চা বাগানে কর্মসংস্থানের সুযোগ খুবই সীমিত এবং চাকরির নিরাপত্তা সুরক্ষিত নয়। চা শ্রমিকদের ৯৫ ভাগ স্থায়ী এবং পাঁচ ভাগ অস্থায়ী শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। শতকরা ৯৭ ভাগ নারী শ্রমিকের কোন নিয়োগপত্র নেই, শতকরা ৮৭ ভাগ শ্রমিকের কোন পরিচয়পত্র নেই। শতকরা ১০ ভাগ নারী শ্রমিক পরিচয়পত্র কি, তা জানেন না। শতকরা শতভাগ শ্রমিক বলেছেন, চা বাগানে তাদের কোনো সার্ভিস বুক নেই।

রাজনৈতিক নেতৃত্বের দায়, চিন্তায় বদল

বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নিপেন পাল বলেন, “শিক্ষা, স্বাস্থ্য যেটাই বলুন, আমরা একেবারেই পিছিয়ে আছি। প্রত্যেক বাগানে প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকার কথা, কিন্তু তা নেই। হাতেগোণা কয়েকটিতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে, কয়েকটিতে মালিকপক্ষ বিদ্যালয় করে দিয়েছে, কিছু বাগানে বেসরকারি সংস্থার উদ্যোগে বিদ্যালয় চালু আছে। কিন্তু সিংহভাগ বাগানেই বিদ্যালয় নেই। কোন কোন বাগানে প্রাথমিক বিদ্যালয় নেই, এর তালিকা করে আমরা সরকারের কাছে দিয়েছি।”

নিজেদের অধিকার বঞ্চনার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক নেতৃত্বের দায় দেখছেন শ্রমিক নেতা নিপেন পাল। তিনি বলেন, “সবই তো রাজনীতিকদের দায়। নির্বাচন হয়, আমরা ভোট দেই, তারা নেতা হয়, এমপি-মন্ত্রী হয়। কিন্তু এরপর তারা আমাদের কথা সংসদে বলে না, উচ্চপর্যায়ে বলে না।”

এরকম পরিস্থিতিতে চা জনগোষ্ঠীর চিন্তাভাবনা বদলাচ্ছে। সংসদে নিজেদের অবস্থানের জন্য ধীরে হলেও সোচ্চার হচ্ছেন তারা। এক্ষেত্রে পার্বত্য চট্টগ্রামের উদাহরণকে সামনে রাখছেন তারা।

নিপেন পাল বলছিলেন, “পার্বত্য চট্টগ্রামের জন্য সংসদে তিনটি আসন আছে, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক পৃথক মন্ত্রণালয় আছে। আমরাও তো সংখ্যায় বিপুল। আমাদের জন্য সংসদে সংরক্ষিত আসন প্রয়োজন। আমাদের কেউ যদি সংসদে থাকে, তাহলে কথা বলতে পারবে, দাবির বিষয়গুলো স্পষ্ট করতে পারবে। আমরা আসনের দাবি জানাচ্ছি, এগুলো নিয়ে কথা বলছি।”

বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক রাজু গোয়ালা বলেন, “রাজনৈতিকভাবে অগ্রসর হওয়ার চিন্তা আমাদের আছে। তবে শুরুটা হয়তো ধীরে, নিচ থেকে হবে।”

রাজনৈতিক নেতৃত্ব যা বলছে

সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী সিলেটভিউকে বলেন, “ধর্ম, বর্ণ, গোষ্ঠী নির্বিশেষে বিএনপি সব মানুষের সমানাধিকারে বিশ্বাস করে। চা শ্রমিক, নৃগোষ্ঠীর লোক এরা তো পৃথক কেউ নয়। বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল, তাদের জন্য আন্তরিকভাবে কাজ করেছে, তারা যাতে বঞ্চনার শিকার না হন সেদিকে দৃষ্টি ছিল। কিন্তু বিগত পনেরো বছরে তাদের জীবনমানের উন্নতি হয়নি। তাই কিছু দিন পরপর তারা মজুরিবৃদ্ধির আন্দোলন করেন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাসস্থানের অধিকারের জন্য আন্দোলন করেন।”

তিনি বলেন, “বিএনপি এখন দেশ ও জাতির জন্য গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে আছে। মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় দেশের বৃহৎ এই রাজনৈতিক দলটি কাজ করছে। ভবিষ্যতে যদি দেশে নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও অবাধ নির্বাচন হয় এবং মানুষের ভোটে বিএনপি ক্ষমতায় আসে, তবে নৃগোষ্ঠী, চা জনগোষ্ঠী সবার কল্যাণে আন্তরিকতার সাথে কাজ করা হবে। বিশেষ করে তাদের ভূমির অধিকারের বিষয়টিতে অবশ্যই জোর দেওয়া হবে।”

সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী সিলেটভিউকে বলেন, “জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান চা জনগোষ্ঠীকে ভোটাধিকার দিয়েছিলেন। তাঁর সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের মজুরি বাড়িয়ে দিয়েছেন। তাদের জন্য শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ সব খাতে সরকারের সুনজর রয়েছে। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, চা শ্রমিক কারো প্রতিই আমাদের ভিন্ন দৃষ্টি নেই। এ দেশ সবার, অধিকারও সবার সমান।”

তিনি বলেন, “সামনে আরেকটি জাতীয় নির্বাচন আসছে। মানুষের ভোটে আওয়ামী লীগ আবারও সরকার গঠন করতে আশাবাদী। আওয়ামী লীগ যদি সরকার গঠন করে, তবে তাদের অন্যান্য দাবিদাওয়ার বিষয়েও গুরুত্ব দেবে। বিশেষ করে ভূমির অধিকারের বিষয়টি তো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগেই স্পষ্ট করে দিয়েছেন। আর তিনি যা বলেন, তা বাস্তবায়ন করেন।”

সুশীল সমাজের পরামর্শ

এথনিক কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (একডো) এর নির্বাহী পরিচালক লক্ষীকান্ত সিংহ সিলেটভিউকে বলেন, “আগে ছিল সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা, এখন চলছে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা। কিন্তু সরকারের এই যে উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা, এগুলোর বিষয়ে চা জনগোষ্ঠী জানেই না। তাদেরকে যদি জানানো হতো, সচেতন করা হতো, তাহলে কথা বলতে পারতো। না জানায়, না বোঝায় তাদের দরকষাকষি সক্ষমতাও নাই। বস্তুত, তাদেরকে বাইরে রেখে উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে সরকারকে ভূমিকা নিতে হবে।”

“দ্বিতীয়ত, এই জনগোষ্ঠীর মধ্যে শিক্ষার হার বাড়াতে হবে। সিংহভাগ বাগানেই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নেই। কিন্তু সরকার বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষার কথা বলেছে। কিন্তু যেখানে শিক্ষা গ্রহণের সুবিধাই নেই, সেখানে বাধ্যতামূলক কথাটাই তো অবান্তর। শিক্ষা কিন্তু টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার বাইরে নয়। এক্ষেত্রে সরকারের বেশি করে গুরুত্ব দেওয়া উচিত।”

তিনি আরও বলেন, “উন্নয়নের যে মহাসড়কের কথা সরকার বলে, সেই মহাসড়কে ওঠতে গেলে তো লিংক রোডও লাগবে। হোক চা শ্রমিক বা নৃগোষ্ঠী, কাউকে বাইরে রেখে উন্নয়নের রোডম্যাপ কিন্তু পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন সম্ভব নয়।”

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন), সিলেট শাখার সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী সিলেটভিউকে বলেন, “বাংলাদেশের সংবিধানে সব নাগরিকের মধ্যে আর্থিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে অসাম্য বিলোপ তথা সমান সুযোগ নিশ্চিত করার অঙ্গীকার করা হয়েছে। কিন্তু চা জনগোষ্ঠী অসাম্যতার শিকার। আমরা কৃতজ্ঞ যে, জাতির জনক তাদেরকে ভোটাধিকার দিয়েছিলেন। তবে অন্য ক্ষেত্রে তারা তেমন কিছু পাচ্ছে না। অথচ মুক্তিযুদ্ধেও তাদের অবদান ছিল, এখন অর্থনীতিতেও তাদের অবদান আছে। কিন্তু শিক্ষা, স্বাস্থ্য সবক্ষেত্রেই তারা পিছিয়ে। আর আমাদের জন্য লজ্জাজনক বিষয় হচ্ছে, কোনো সরকারই মুক্তিযুদ্ধে তাদের অবদানকে স্বীকৃতি দেয়নি।”

“রাজনীতিবিদরা বা রাজনৈতিক নেতৃত্ব দেশ পরিচালনা করেন। সুতরাং কোনো জনগোষ্ঠী পিছিয়ে থাকার দায়ও তাদের। এটা রাজনীতিবিদদের উপলব্ধি করতে হবে।”

ফারুক মাহমুদ চৌধুরী আরও বলেন, “আরেকটি নির্বাচনকে সামনে রেখে ২০ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিলেট সফর করবেন। তিনি ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে সিলেটের উন্নয়নের সব দায়িত্ব নিজের কাঁধে নিয়েছিলেন, তিনি অনেক কিছু করেছেনও, চা শ্রমিকদের মজুরিও কিছুটা বাড়িয়েছেন। তবে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য বহু কিছু করার সুযোগ আছে।”

“আমরা মনে করি, সরকার যদি চায়, তারা যদি আন্তরিক হয়, তবে কোনো জনগোষ্ঠীই পিছিয়ে থাকবে না। প্রকৃতপক্ষে সংবিধানে সমতার যে বিধান আছে, সেটা প্রতিপালন করলেই কিন্তু সব জনগোষ্ঠী সমান সুযোগ নিয়ে এগিয়ে যেতে পারবে।”

সিলেটভিউ২৪ডটকম/আরআই-কে