(প্রতীকি ছবি)

উদ্বেগ-শঙ্কা কাটিয়ে অবশেষ আজ রবিবার (৭ জানুয়ারি) অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচনটি বর্জন করেছে বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি। এর সঙ্গে রয়েছে সমমনা ছোট দলগুলো। 


বিএনপিবিহীন এ নির্বাচনে সিলেটের ১৯টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ১০৫ প্রার্থী। বিএনপি না থাকায় সিলেটের বেশিরভাগ আসনে নৌকার প্রার্থী জয়ী হবে। কয়েকটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সঙ্গে হবে লড়াই। তবে এসব প্রার্থীও বেশিরভাগ আওয়ামী লীগ নেতা, ভোটে দাঁড়িয়েছেন স্বতন্ত্রের ব্যানারে।  



দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত টানা চলবে। এ লক্ষ্যে শনিবার বিকেলের মধ্যে সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন সংশ্লিষ্টরা। শনিবার দুপুরে বিভাগের প্রত্যেক জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও বিভিন্ন উপজেলায় স্থাপিত সহকারী কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে নির্বাচনি সরঞ্জামাদি পৌছানোর কার্যক্রম শুরু হয়। বিকেলের মধ্যে সব কেন্দ্রে এসব সরঞ্জাম গিয়ে পৌঁছায় এবং প্রিজাইটিং ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংশ্লিষ্ট টিম নির্ধারিত কেন্দ্রে রাতযাপন করছেন।


এদিকে, দূরত্ব বিবেচনায় কিছু কেন্দ্রে শনিবার দুপুরে নির্বাচনি সরঞ্জামাদির পাশাপাশি ব্যালট প্যাপারও পাঠানো হয়েছে। বাকিগুলোতে শনিবার দিবাগত ভোররাত ৩টায় ব্যালট পাঠানো শুরু হবে এবং সকাল ৬টার মধ্যে গিয়ে পৌঁছবে। 


সিলেটে ভোটগ্রহণ নির্বিঘ্ন ও সুষ্ঠু করতে সেনাবাহিনী, বিজিবি, র‍্যাব, পুলিশ ও আনসার বাহিনী মাঠে রয়েছে। এছাড়া নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের অধীনস্থ স্ট্রাইকিং টিমও মাঠে রয়েছে।


বিভাগের কোন আসনে প্রার্থী কারা :
সিলেট-১ আসনে ড. এ কে আব্দুল মোমেন ও ইমরান আহমদ সিলেট-৪ আসনে নৌকা প্রতীকে ফাঁকা মাঠে গোল দিতে যাচ্ছেন। তাদের প্রতিদ্বন্দ্বিরা কেবল নামকাওয়াস্তে।


সিলেট-২ আসনে এবার নৌকার শক্ত মাঝি আওয়ামী লীগের প্রার্থী শফিকুর রহমান চৌধুরী। তার সঙ্গে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় স্বতন্ত্র প্রার্থী ট্রাক প্রতীকে পৌর মেয়র মহিবুর রহমান, লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির ইয়াহইয়া চৌধুরী এবং বর্তমান এমপি মোকাব্বির খান। আসনটিতে ১০ বছর পর নৌকার কান্ডারি বিজয়ী হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।


সিলেট-৩ আসনে সাতজন প্রার্থী থাকলেও হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা ও বিএমএর মহাসচিব ডা. ইহতেশামুল হক দুলাল, নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান হাবিব এবং লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী আতিকুর রহমান। তবে সংসদে বিদ্যুৎ বিল বাড়ানোর হাবিবের দাবি ইস্যুতে ধাক্কা এখন নৌকায় লাগছে।  


সিলেট-৫ আসনে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে এগিয়ে আছেন আঞ্জুমানে আল ইসলাহ’র সভাপতি মাওলানা হুছামুদ্দিন চৌধুরী, তার শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নৌকার প্রার্থী আওয়ামী লীগ মনোনীত মাসুক উদ্দিন আহমদ ও ট্রাক প্রতীকে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী ড. আহমেদ আল কবীর। তবে এ দুই নেতাকে পাশ কাটিয়ে কেটলী জয়ী হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।  


সিলেট-৬ আসনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে তিন প্রাথী। তারা হলেন, নৌকার কান্ডারি সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এমপি, সোনালী আঁশ প্রতীকে তৃণমূল বিএনপির চেয়ারপার্সন শমসের মবিন চৌধুরী ও ঈগল প্রতীকে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী সরওয়ার হোসেন। আসনটিতে স্বতন্ত্রের সামনে কঠিন চ্যালেঞ্জে নৌকা।


মৌলভীবাজার-১ আসনে বন ও পরিবেশ মন্ত্রী শাহাব উদ্দিনের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছেন লাঙ্গল প্রতীকে জাপার আহমেদ রিয়াজ। তবে আওয়ামী লীগ দুর্গ বড়লেখা জুড়িতে নৌকার বিজয় নিশ্চিত ধরে নিচ্ছেন জনতা।


মৌলভীবাজার-২ আসনে নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী দলটির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল। তার শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী নিজ দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী এ কে এম শফি আহমদ ছলমান এবং সাবেক এমপি তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী এম এম শাহীন। এ আসনে চা শ্রমিক জনগোষ্ঠীর ভোটে নৌকার বিজয় নিশ্চিত করতে পারে। এছাড়া আল ইসলাহ’র ভোট ব্যাংকও নাদেলকে পছন্দ করে।


মৌলভীবাজার-৩ আসনে নৌকা প্রতীকে অলীলা গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. জিল্লুর রহমান ও মৌলভীবাজার-৪ আসনে নৌকার প্রার্থী উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহীদকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন ধরা হচ্ছে।


সুনামগঞ্জ-১ আসনে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রণজিত সরকার নৌকা নিয়ে দুই কোটিপতি স্বতন্ত্র প্রার্থীর চাপে আছেন। তারা হলেন কেতলি প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী বর্তমান এমপি মোয়াজ্জেম হোসেন রতন এবং জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি মো. সেলিম আহমদ (ঈগল)। তিনজনই একদলের হওয়াতে আওয়ামী লীগে বিভক্তি রয়েছে। তবে আমজনতার সমর্থন সেলিমের পক্ষে থাকায় তার বিজয়ের সম্ভাবনা দেখছেন স্থানীয়রা।


সুনামগঞ্জ-২ আসনে আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থী চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ ও বর্তমান এমপি সুরঞ্জিত পত্মী জয়া সেন গুপ্তা কাঁচি প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে লড়ছেন। তবে উন্নয়ন বঞ্চনায় চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ আছেন সুবিধাজনক অবস্থানে।  


সুনামগঞ্জ-৩ আসনে নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান এমপি ও পরিকল্পনা মন্ত্রী এ এম মান্নান ভোটে অপ্রতিদ্বন্দ্বী। যদিও আসনটিতে মূল প্রতিদ্বন্দ্বী জমিয়ত ছেড়ে তৃণমূলের ব্যানারে আসায় শাহিনুর পাশা বিতর্কিত অবস্থানের কারণে পিছিয়ে আছেন।  


সুনামগঞ্জ-৪ আসনে আসনটিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ড. সাদিকুর রহমানকে নৌকা প্রতীকে বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন। তার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বী বর্তমান এমপি জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকে পীর ফজলুর রহমান। কিন্তু স্থানীয় আওয়ামী লীগ একাট্টা হওয়ায় তার বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।


সুনামগঞ্জ-৫ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক আবারো নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়েছেন। এ আসনে তার শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী ঈগল প্রতীকে দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী শামীম আহমদ চৌধুরী। আসনটিতে আরও সাতজন প্রার্থী থাকলেও তারা আলোচনায় নেই। তবে বিগত দিনে নির্বাচনী এলাকা দোয়ারা বাজারে উন্নয়নের ছোঁয়া না লাগায় নৌকা ডোবার কারণ হতে পারে আসনটিতে।


হবিগঞ্জের চারটি আসনে ২৯ জন প্রার্থী রয়েছেন ভোটের মাঠে। হবিগঞ্জ-১ আসনটি আওয়ামী লীগ জোটের ভাগে জাতীয় পার্টিকে দেওযা হয়েছে। এ আসনে জাপার লাঙ্গল প্রতীকে এম এ মুনিম চৌধুরী বাবু’র প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ঈগল প্রতীকে সাবেক সংরক্ষিত আসনের এমপি আমাতুল কিবরিয়া চৌধুরী কেয়া। গত ৫টি বছর তিনি মানুষের কাছাকাছি ছিলেন, যে কারণে ভোটের মাঠে তার আধিপত্যের কাছে জোটের প্রার্থী হারতে পারেন।


হবিগঞ্জ-২ আসনে নৌকার প্রার্থী ময়েজ উদ্দিন শরীফ। তার বাবা বঙ্গবন্ধুর সহচর ও একাধিকবারের এমপি ছিলেন। যে কারণে তাকে ঘিরে একাট্টা আওয়ামী লীগ। এ আসনে ঈগল প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী বর্তমান এমপি আব্দুল মজিদ খান প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ভোটের বাজারে আসনটিতে নৌকাকে এগিয়ে রাখছেন জনতা।


হবিগঞ্জ-৩ আসনে অনেকটা অপ্রতিদ্বন্দ্বী বর্তমান এমপি আওয়ামী লীগ মনোনীতে নৌকার প্রার্থী আবু জাহিদ। তার বিপক্ষে আরও ৮ প্রার্থীর ভিড়ে লাঙ্গল প্রতীকে জাপার ইঞ্জিনিয়ার এসএম মনিম চৌধুরী প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী। তবে এলাকায় জনপ্রিয় হিসেবে আবু জাহিদকে বেছে নেবেন ভোটাররা, এমনটি জানা গেছে।


হবিগঞ্জ-৪ আসনে ৮ প্রার্থীর মধ্যে নৌকার প্রার্থী বর্তমান এমপি বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী খানের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী ঈগল প্রতীকে ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। আসনটিতে ব্যারিস্টার সুমনের জনপ্রিয়তা রয়েছে। এ আসনে ভোটের মাঠে চা শ্রমিকরা মূল ফ্যাক্টর। আর চা শ্রমিকদের আন্দোলনে অগ্রভাবে ছিলেন সুমন।


সিলেট জেলার ভোটার সংখ্যা:
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে সিলেটের ছয়টি আসনে মোট ২৭ লাখ ১৫ হাজার ৩৩১ ভোটার রয়েছেন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১৩ লাখ ৯২ হাজার ৩৯৫ ও মহিলা ভোটার রয়েছেন ১৩ লাখ ২২ হাজার ৯২৬ জন। তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছেন ১০ জন। এবারের নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র রয়েছে এক হাজার ১৩টি ও ভোট কক্ষ রয়েছে ছয় হাজার ছয়টি।


সিলেট-১ : সিলেটের ছয়টি আসনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভোটার রয়েছে সিলেট-১ আসনে।   সিলেট সিটি করপোরেশনের ৩৬টি ওয়ার্ড, সাত ইউনিয়ন ও একটি ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড নিয়ে গঠিত সিলেট-১ আসন। এই আসনে স্থায়ী ভোটকেন্দ্র রয়েছে ২১৫টি। এর মধ্যে মহানগরীতে ১৫২টি ও ইউনিয়নে আরও ৬৩টি স্থায়ী ভোটকেন্দ্র রয়েছে। একইসঙ্গে এ আসনে ভোট কক্ষ রয়েছে ১৩৬৮টি। এর মধ্যে মহানগরীতে রয়েছে ৯৬৭টি ও ইউনিয়নে রয়েছে আরও ৪০১টি। এ আসনে ভোটার রয়েছেন ছয় লাখ ৩৪ হাজার ২১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার তিন লাখ ৩০ হাজার ৮৩৩ জন এবং নারী ভোটার রয়েছেন তিন লাখ ৩১ হাজার ৮১ জন।


মহানগরেতে মহিলা-পুরুষ মিলিয়ে চার লাখ ৫৩ হাজার ৪৮৬ জন ও ইউনিয়নে রয়েছেন এক লাখ ৮০ হাজার ৫৩৫ জন ভোটার রয়েছেন। এ ছাড়া মহানগরী এলাকায় ছয় ও ইউনিয়নে আরও ১ জন তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছেন।


সিলেট-২ : বিশ্বনাথ আর ওসমানীনগর উপজেলা নিয়ে গঠিত সিলেট-২ আসন। এই দুই উপজেলায় রয়েছে ১৬টি ইউনিয়ন। এর মধ্যে বিশ্বনাথে আটটি ওয়ার্ড ও ওসমানীনগরে রয়েছে আরও আটটি ইউনিয়ন। এই আসনে ভোটকেন্দ্র রয়েছে ১২৮টি। এর মধ্যে বিশ্বনাথ উপজেলায় স্থায়ী ভোটকেন্দ্র রয়েছে ৭৪টি ও ওসমানীনগরে রয়েছে ৫৩টি। ওসমানীনগরে রয়েছে অস্থায়ী ভোটকেন্দ্র আরও একটি। একইসঙ্গে ভোট কক্ষ রয়েছে ৭৭৩টি। এর মধ্যে বিশ্বনাথে ৩৯২টি ও ওসমানীনগরে ৩৫২টি স্থায়ী ভোটকেন্দ্র রয়েছে। বিশ্বনাথে আরও ২৯টি অস্থায়ী ভোটকেন্দ্র রয়েছে। এ আসনে ভোটার রয়েছেন তিন লাখ ৪৪ হাজার ৭২৯ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার এক লাখ ৭৬ হাজার ১৪৭ এবং নারী ভোটার এক লাখ ৬৮ হাজার ৫৮২ জন।


বিশ্বনাথে নারী-পুরুষ মিলিয়ে ভোটার রয়েছেন এক লাখ ৮৪ হাজার ১৪৯ জন ও ওসমানীনগরে এক লাখ ৬০ হাজার ৫৮০ জন।    
 

সিলেট-৩ : সিসিকের আটটি ওয়ার্ড, দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত সিলেট-৩ আসন। এখানে সিসিকের আটটি ওয়ার্ড ও ১১টি ইউনিয়ন রয়েছে। এই আসনে ভোটকেন্দ্র রয়েছে ১৫১টি। এর মধ্যে সিসিকের ওয়ার্ডগুলোতে রয়েছে ১৬টি ভোটকেন্দ্র, দক্ষিণ সুরমা উপজেলায় রয়েছে ৬৩টি, ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলায় রয়েছে ৩৬টি ও বালাগঞ্জ উপজেলায় রয়েছে আরও ৩৬টি ভোটকেন্দ্র। একইসঙ্গে এখানে ভোট কক্ষ রয়েছে ৮৭৬টি।


এর মধ্যে সিসিকের আট ওয়ার্ডে ৭৮টি স্থায়ী ও ৫টি অস্থায়ী ভোটকেন্দ্র রয়েছে। এ ছাড়া দক্ষিণ সুরমায় ৩৫৮টি স্থায়ী ও ১৬টি অস্থায়ী ভোটকেন্দ্র আছে। ফেঞ্চুগঞ্জে রয়েছে ১৭০টি স্থায়ী ও ২৯টি অস্থায়ী ভোটকেন্দ্র। বালাগঞ্জে রয়েছে ১৮৫টি স্থায়ী ও ৩৫টি অস্থায়ী ভোটকক্ষ রয়েছে। এ আসনে ভোটার আছেন তিন লাখ ৮৬ হাজার ৪১২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার এক লাখ ৯৬ হাজার ১৪২ জন এবং মহিলা ভোটার এক লাখ ৯০ হাজার ২৬৯ জন। এ আসনে তৃতীয় লিঙ্গের একজন ভোটার রয়েছেন।


সিলেট-৪ : কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট ও জৈন্তাপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত সিলেট-৪ আসন। এখানে ২৫টি ইউনিয়ন রয়েছে। এর মধ্যে কোম্পানীগঞ্জে রয়েছে ছয়টি, গোয়াইনঘাটে ১৩ ও জৈন্তাপুরে রয়েছে আরও ছয়টি ইউনিয়ন। এই তিন উপজেলায় ১৬৯টি স্থায়ী ভোটকেন্দ্র রয়েছে। এর মধ্যে কোম্পানীগঞ্জে ৪০টি, গোয়াইনঘাটে ৮৩টি ও জৈন্তাপুরে ৪৬টি। একইসঙ্গে ভোট কক্ষ রয়েছে এক হাজার ২৯টি। কোম্পানীগঞ্জে ২৩৮টি, গোয়াইনঘাটে ৪৭১টি ও জৈন্তাপুরে ২৫১টি স্থায়ী ভোটকেন্দ্র রয়েছে। এ ছাড়া কোম্পানীগঞ্জে রয়েছে অস্থায়ী ভোটকেন্দ্র পাঁচটি, গোয়াইনঘাটে ৩৩টি ও জৈন্তাপুরে ৩১টি।


সবমিলিয়ে কোম্পানীগঞ্জে রয়েছে ২৪৩টি ভোটকেন্দ্র, গোয়াইনঘাটে রয়েছে ৫০৪টি ও জৈন্তাপুরে রয়েছে ২৮২টি। এ আসনে ভোটার সংখ্যা চার লাখ ৭৫ হাজার ১২১। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার দুই লাখ ৪৬ হাজার ১০৭ ও নারী ভোটার দুই লাখ ২৯ হাজার ১৩ জন। এ আসনে তৃতীয় লিঙ্গের একজন ভোটার রয়েছেন। এখানে কোম্পানীগঞ্জের নারী-পুরুষ মিলিয়ে ভোটার রয়েছেন এক লাখ ১৭ হাজার ৭১৮ জন। গোয়াইনঘাটের নারী-পুরুষ মিলিয়ে ভোটার রয়েছেন দুই লাখ ২৫ হাজার ৪৫৫ জন। এ ছাড়া জৈন্তাপুরে মহিলা-পুরুষ মিলিয়ে ভোটার রয়েছেন এক লাখ ৩১ হাজার ৯৪৮ জন।


সিলেট-৫ : কানাইঘাট ও জকিগঞ্জ নিয়ে গঠিত সিলেট-৫ আসন। ৯টি করে এই দুটি ওয়ার্ডে রয়েছে ১৮টি ওয়ার্ড। এখানে ভোটকেন্দ্র রয়েছে ১৫৮টি। এর মধ্যে কানাইঘাটে রয়েছে ৮১টি ও জকিগঞ্জ রয়েছে ৭৭টি স্থায়ী ভোটকেন্দ্র। একই সাথে এই দুটি পৌরসভায় রয়েছে ৮৭১টি ভোট কক্ষ। এর মধ্যে জকিগঞ্জে রয়েছে ৪০৯টি স্থায়ী ভোটকেন্দ্র ও ৩৬টি অস্থায়ী ভোটকেন্দ্র। এ ছাড়া কানাইঘাট পৌরসভায় রয়েছে ৪০৯টি স্থায়ী ভোটকেন্দ্র ও ১৭টি অস্থায়ী ভোটকেন্দ্র। এ আসনে ভোটার রয়েছেন চার লাখ ২২ হাজার ৯৯ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার দুই লাখ ৫৬ হাজার ৫৭ এবং নারী ভোটার এক লাখ ৯৬ হাজার ৬৪২ জন। এখানে কানাইঘাটের নারী-পুরুষ মিলিয়ে ভোটার রয়েছেন দুই লাখ ১৪ হাজার ২৯৫ জন। জকিগঞ্জের নারী-পুরুষ মিলিয়ে ভোটার রয়েছেন ৯৬ হাজার ৬৬৩ জন।


সিলেট-৬ : বিয়ানীবাজার ও গোলাপগঞ্জ নিয়ে গঠিত সিলেট-৬ আসন। বিয়ানীবাজার পৌরসভায় রয়েছে ১০টি ও গোলাপগঞ্জ পৌরসভায় রয়েছে ১১টি ওয়ার্ড। এখানে ভোটকেন্দ্র রয়েছে ১৯২টি। এর মধ্যে বিয়ানীবাজারে রয়েছে ৮৯টি ও গোলাপগঞ্জে ১০৩টি স্থায়ী ভোটকেন্দ্র। একইসঙ্গে এই দুটি পৌরসভায় রয়েছে এক হাজার ৮৯টি ভোট কক্ষ। এর মধ্যে বিয়ানীবাজারে রয়েছে ৪৮০টি স্থায়ী ও ৯টি অস্থায়ী ভোটকেন্দ্র। গোলাপগঞ্জে রয়েছে ৬০০টি স্থায়ী ও ৩৫টি অস্থায়ী ভোটকেন্দ্র। এ আসনে ভোটার রয়েছেন চার লাখ ৭২ হাজার ৭৪৯ জন। এর মধ্যে বিয়ানীবাজার পুরুষ ভোটার এক লাখ ২৫ হাজার ৮৩ ও নারী ভোটার এক লাখ ৩৪ হাজার ৫৫ জন। সবমিলিয়ে বিয়ানীবাজারে নারী-পুরুষ ভোটার রয়েছেন দুই লাখ ৬০ হাজার ৩৮ জন। এ ছাড়া গোলাপগঞ্জে পুরুষ ভোটার রয়েছেন এক লাখ ৩৪ হাজার ৯২৬ ও নারী ভোটার রয়েছেন এক লাখ ৩১ হাজার ৭৮৪ জন। এখানে নারী-পুরুষ মিলিয়ে ভোটার রয়েছেন দুই লাখ ৬৬ হাজার ৭১১ জন।


সিলেটের ৬টি আসনে ১৭ সহস্রাধিক ফোর্স :
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেটের ছয় আসনের এক হাজার ১৩ কেন্দ্রের ৬৪৯টিকে ঝুঁকিপূর্ণ মনে করা হচ্ছে। এসব কেন্দ্র বিবেচনায় নিয়ে নিরাপত্তা ছক করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।


সিলেটে ভোটের মাঠে নিরাপত্তায় থাকবে আইন শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর সব ইউনিটের ১৭ সহস্রাধিক জনবল।


সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. জাকির হোসেন খান এসব তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, মহানগর এলাকায় ২৯৪টি ভোট কেন্দ্রের ২০৫টি ঝুঁকিপূর্ণ ও ৮৯টি সাধারণ কেন্দ্র রয়েছে। এসব কেন্দ্রে ২ সহস্রাধিক ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে।


সহকারী পুলিশ সুপার (মিডিয়া) সম্রাট তালুকদার জানিয়েছেন, সিলেট জেলায় ৭১৯টি কেন্দ্রের ৪৪৪টি ঝুঁকিপূর্ণ এবং ২৭৫টি সাধারণ কেন্দ্র রয়েছে। কেন্দ্রগুলোর গুরুত্ব বিবেচনা করে ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে।


সিলেটের রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ের তথ্যমতে, জেলার ছয়টি আসনে ১২ হাজার ২৮৬ জন আনসার-ভিডিপি ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে। প্রতি কেন্দ্রে একজন করে পিসি ও এপিসি ২০২৬ জন, প্রতি কেন্দ্রে ৬ জন করে ৬ হাজার ৭৮ পুরুষ আনসার, কেন্দ্রপ্রতি চারজন করে ৪ হাজার ৫২ জন নারী ভিডিপি, প্রতি ১০ কেন্দ্রে দশ সদস্য করে ব্যাটালিয়ন আনসারের স্ট্রাইকিং ফোর্সে থাকবে ১৩০ সদস্য।


র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব-৯) ১০৮ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। এরমধ্যে দুটি করে ১২ টহল টিমে রয়েছেন ৭২ জন; ছয় জনের তিনটি টহল টিমে রিজার্ভে ১৮ জন, বোম্ব ডিসপোজালের দুটি টিমে সদস্য ১২ ও অধিনায়কের ১২ জনের একটি স্কট।


সিলেট মহানগর এলাকায় ভোটের নিরাপত্তায় মোতায়েন করা হয়েছে মেট্রোপলিটন পুলিশের ২ হাজার ৫০ জন ফোর্স। সাধারণ কেন্দ্রে তিনজন করে ২৬৪; ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে চারজন করে ৮২৪; মোবাইল টিমে ৩৬০; প্রতি থানায় তিনটি করে স্ট্রাইকিং ফোর্সে মোট ১৮টি টিমে ১২৬; ম্যাজিস্ট্রেট, পর্যবেক্ষক, রিটার্নিং অফিসার, নির্বাচন অফিসারসহ ৪৭৬ জন দায়িত্ব পালন করবেন।


এছাড়া জেলা পুলিশের ৭১৯টি ভোট কেন্দ্রে দুজন করে এক হাজার ৪৩৮ জন মোতায়েন করা হয়েছে। ৯৬টি মোবাইল টিমে পাঁচজন করে ৪৮০ জন, চারজন করে ১১টি স্ট্রাইকিং টিমে ৪৪ জন। একইভাবে অফিস ডিউটিতে ৪৪ জন, ১১টি উপজেলায় কন্ট্রোল রুমে একজন করে এগার জন, সাদা পোশাকে ডিবির আটটি টিমে পাঁচজন করে ৪০ জন, এছাড়া আরও ৩৪ জন, এগার জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, তিনজন করে ১১টি টিমে তেত্রিশ; ৩ জন করে তদারকি অফিসার দশটি টিমে ৩০ জন এবং চারজনের একটি মেডিকেল টিম।


এছাড়া নির্বাচনে ২৮ প্লাটুন বিজিবি ও একই সংখ্যক সেনাবাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে। সেই সঙ্গে ৪৫ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, সতেরজন বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট নির্বাচনী মাঠ চষে বেড়াবেন।


নির্বাচনী মাঠে বিজিবি ৪৮ ব্যাটালিয়নের জওয়ানরা সিলেট-১ আসনে চার প্লাটুন; সিলেট-২ আসনে পাঁচ প্লাটুন মোতায়েন করা হয়েছে। বিজিবি-১৯ ব্যাটালিয়নের সদস্যদের সিলেট-২ আসনে তিন টিম, এরমধ্যে একটি সংরক্ষিত থাকবে। সিলেট-৩ আসনে ৭ প্লাটুন, সিলেট-৫ আসনে চার প্লাটুন এবং বিজিবি-৫২ ব্যাটালিয়নের পাঁচটি প্লাটুন সিলেট-৬ আসনে মোতায়েন করা হয়েছে। এরমধ্যে এক প্লাটুন সংরক্ষিত থাকবে।


জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা শেখ রাসেল হাসান শনিবার বিকালে সিলেটভিউ-কে বলেন- সিলেটের ৬টি আসনে ভোটগ্রহণের সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। শনিবার বিকালের মধ্যে ব্যালট প্যাপার ছাড়া বাকি সব সরঞ্জাম গিয়ে প্রতিটি কেন্দে পৌঁছেছে। আর ব্যালট পৌঁছবে রবিবার সকাল ৬টার মধ্যে। তবে দূরত্ব বিবেচনায় সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে সিলেটের ৬টির মধ্যে ৪টি আসনের ৭ উপজেলার ৭৫টি কেন্দ্রে শনিবার অন্যান্য সরঞ্জামের সঙ্গে ব্যালট প্যাপারও পৌঁছানো হয়েছে। কারণ- এসব কেন্দ্রে ভোররাত ৩টায় পাঠানোর আগে সকাল ৮টার আগে গিয়ে পৌঁছাবে না।


শেখ রাসেল হাসান আরও বলেন- সিলেটে ভোটগ্রহণ নির্বিঘ্ন ও সুষ্ঠু করতে সেনাবাহিনী, বিজিবি, র‍্যাব, পুলিশ ও আনসার বাহিনী মাঠে রয়েছে। এছাড়া নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের অধীনস্থ স্ট্রাইকিং টিমও মাঠে রয়েছে। আমাদের বিবেচনায় সিলেটের সবগুলো কেন্দ্রগুলো গুরুত্বপূর্ণ। তবে পরিবেশ-পরিস্থিতি ও ভৌগলিক অবস্থা বিবেচনায় ৬৫৩টি কেন্দ্রে বাড়তি নিরাপত্তাব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এর মধ্যে সিলেট মহানগর এলাকার ২০৬ ও জেলার ৪৪৭টি। এগুলোতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বিভিন্ন বাহিনীর বাড়তি সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।

 

সিলেটভিউ২৪ডটকম /  ডি.আর