আসরে টানা চার ম্যাচে চার জয়। পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে অবস্থান। একমাত্র অপরাজিত দল। রীতিমতো উড়ছিল খুলনা টাইগার্স। অবশেষে থামলো তাদের জয়রথ। মেহেদী হাসান মিরাজ আর শোয়েব মালিকের ব্যাটিং ঝড়ে ফরচুন বরিশালের কাছে ৫ উইকেটে হেরেছে খুলনা টাইগার্স।

বিপিএলের সিলেট পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচে টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নামা খুলনা টাইগার্সের শুরুটা ছিল হতশ্রী। তবে শেষ ৪ ওভারের ঝড়ে তারা বোর্ডে জমা করে ৮ উইকেটে ১৫৫ রান। শেষের ঝড় তুলে ম্যাচ জিতেছে ফরচুন বরিশালও। শেষ ২২ বলে ওভারে মিরাজ ও মালিকের তাণ্ডবে ৫৪ রান তুলে নেয় তারা।


পাকিস্তানি তারকা শোয়েব মালিক ২৫ বলে এক চার আর তিন ছয়ে করেন ৪১ রান। মেহেদী হাসান মিরাজ ছিলেন আরও ভয়ংকর। ১৫ বলে এক চার আর তিন ছয়ে করেন ৩১ রান। ষষ্ঠ জুটিতে ২৩ বলে ৫৫ রান তুলে দলকে জয়ের বন্দরে ভিড়িয়ে মাঠ ছাড়েন মালিক-মিরাজ।

তবে লক্ষ্য তাড়ায় শুরুটা ভালো হয়নি ফরচুন বরিশালের। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই আঘাত হানে খুলনা টাইগার্স। ডাউন দ্য উইকেটে খেলতে গিয়ে নাহিদুল ইসলামের বলে স্টাম্পড পাকিস্তানি আহমেদ শেহজাদ (৩)। ফাহিম আশরাফের বলে ডিপ স্কয়ার লেগে সোহানের হাতে ক্যাচ দিয়ে শেষ তামিম ইকবাল (১৮ বলে ২০)।

বড় ইনিংসের ইঙ্গিত দিয়েও ২৬ রানে আটকে যান সৌম্য সরকার। তার ২৩ বলের ইনিংসে ছিল চারটি চার ও একটি ছয়ের মার। পাকিস্তানি অলরাউন্ডার ফাহিমের লেন্থ বলে লং অনে সৌম্যর ক্যাচ নেন আরেক পাকিস্তানি অলরাউন্ডার মোহাম্মদ নাওয়াজ। ম্যাচে দারুণ বোরিং করা নাসুমের বলে জয়ের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিম। ২৫ বলে ২৭ রান করার তার ব্যাট থেকে আসে দুটি চার। আরেক অভিজ্ঞ মাহমুদউল্লাহ কিছু করার আগেই ফাহিম আশরাফের বলে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন।

১৬ ওভার শেষে বরিশালের রান ছিল ৫ উইকেটে ১০২। সেখান থেকেই ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেন মালিক ও মিরাজ। তাদের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে টুর্নামেন্টে প্রথম পরাজয়ের বিস্বাদ পায় খুলনা টাইগার্স।

খুলনার ফাহিম আশরাফ ব্যাটে-বলে এ ম্যাচে ছিলেন দুর্দান্ত। বোলিংয়ে ৪ ওভারে ১৮ রান দিয়ে নিয়েছেন ৩ উইকেট। নাসুম ৪ ওভারে ২৪ রান দিয়ে ১ উইকেট, নাহিদুল ৩ ওভারে ৩০ রানে ১ উইকেট নিয়েছেন।

এর আগে টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে ধাক্কা খেতে দেরি হয়নি খুলনা টাইগার্সের। আকিফ জাভেদের খানিকটা অ্যাঙ্গেলে ঢোকা বলে বোল্ড এনামুল হক বিজয় (১৩ বলে ১২)। ষষ্ঠ ওভারের প্রথম বলেই শেষ হাবিবুর রহমান সোহান (৭ বলে ২)। তিন রান কিছুতেই হয় না; সেখানে তিন রান নিতে গিয়ে কাটা পড়েন সোহান।

দারুণ খেলছিলেন পারভেজ হোসেন ইমন। তার ব্যাটে চড়ে বড় ইনিংসের দিকে যাওয়ার পথ খোঁজছিল খুলনা। কিন্তু বিপিএলে ফের এসে যোগ দেওয়া পাকিস্তানি তারকা শোয়েব মালিকের খানিকটা নিচু হওয়া বলে এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়ে শেষ হয় ইমনের ২৪ বলে চারটি চার ও একটি ছয়ে করা ৩৩ রানের সম্ভাবনাময় ইনিংস। ইমনের পর একই ওভারেরে পরের বলে আফিফ হোসেনকেও তুলে নেন শোয়েব মালিক। মিড উইকেটে খেলতে গিয়ে সোজা মিরাজের হাতে ক্যাচ তুলে দেন আফিফ (০)।

টিকতে পারেননি মাহমুদুল হাসান জয়ও (১৯ বলে ১৩)। তাইজুল ইসলামের টসড আপ ডেলিভারিতে বিভ্রান্ত হন খানিকটা এগিয়ে যাওয়া জয়, মিস করেন বল। সেটি ধরে স্টাম্প ছত্রখান করতে সমস্যা হয়নি মুশফিকুর রহিমের। নিজের পরের ওভারে শ্রীলঙ্কান দাসুন শানাকার (১৩ বলে ৬) স্টাম্প ভেঙে দেন তাইজুল। নাহিদুল ইসলামকে (৫) বোল্ড করে ফেরান মোহাম্মদ ইমরান।

১৬ ওভার শেষে খুলনা ৭ উইকেটে হারিয়ে ৮৮ রান নিয়ে ধুঁকছিল। এরপরই মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া ব্যাটিং মোহাম্মদ নাওয়াজ ও ফাহিম আশরাফের। ১৭তম ওভারে ১৩ রান, ১৮তম ওভারে ১৮ রান, ১৯তম ওভারে ১৮ রান ও শেষ ওভারে ১৮ রান তুলে নেন দুজন মিলে। অষ্টম জুটিতে এ দুজন মাত্র ২৪ বলে তুলেন ৬৭ রান। বোলিং অলরাউন্ডার ফাহিম আশরাফ ছিলেন বেশি বিধ্বংসী। ২৪৬ স্ট্রাইক রেটে ১৩ বলে ৩২ রান করার পথে মেরেছেন পাঁচটি চার ও একটি ছক্কা। চারের দিকে ‘মনোযোগ’ দেননি নাওয়াজ। তার ২৩ বলে ৩৮ রানের ইনিংসে ছক্কা চারটি!

শেষ ওভারের শেষ বলে রান আউট হন ফাহিম আশরাফ। ৮ উইকেটে ১৫৫ রানে শেষ হয় খুলনার ইনিংস।

অবিশ্বাস্য কৃপণতায় তাইজুল ইসলাম ৩ ওভারে মাত্র ৭ রান দিয়ে তুলে নেন ২ উইকেট। শোয়েব মালিক ৪ ওভারে ২৪ রানে ২টি উইকেট নেন। উইকেট না পেলেও ৪ ওভারে ২২ রান দেন মিরাজ।

পাঁচ ম্যাচে ৪ জয় ও এক পরাজয়ে ৮ পয়েন্ট নিয়ে এখনও টেবিলের শীর্ষে খুলনা। ৬ ম্যাচে সমান ৩টি করে জয়-পরাজয়ে টেবিলের পঞ্চম স্থানে বরিশাল।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/আরআই-কে