রবিবার দুপুরে হকারমুক্ত বন্দরবাজার এলাকার ফুটপাত ও রাস্তার দৃশ্য। ছবি : সিলেটভিউ

সিলেট মহানগরের অন্যতম তিন সমস্যা হকার, নড়কে অবৈধ পার্কিং-স্ট্যান্ড ও যানজট। আরিফুল হক চৌধুরী গত দুই মেয়াদে সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) মেয়র থাকাকালে বার বার উদ্যোগ নিয়েও এই তিন সমস্যার সমাধান করতে পারেননি। গত সিটি নির্বাচনের আগে বর্তমান মেয়র মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর নির্বাচনী ইশতেহারে ছিলো এসব সমস্যা সমাধারেন প্রতিশ্রুতি। নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর এবার সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে প্রথমে তিনি উদ্যোগ নিয়েছেন মহানগরের সড়ক-ফুটপাত হকারমুক্ত করে তাদের পুনর্বাসনের।

 


 

 


এ লক্ষ্যে রবিবার (১০ মার্চ) সকালে নগরভবন-সংলগ্ন লালদিঘির পাড় মাঠে পুনবার্সন কার্যক্রম প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এ কাজের উদ্বোধন করেছেন সিসিক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। এর আগে তিনি এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন- এবারের রমজানের আগেই সিলেট মহানগরের রাস্তা ও ফুটপাত দখলমুক্ত করা হবে।

 

 

 


সিলেট নগরের প্রথম মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরান থেকে শুরু করে গত মেয়াদের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর সময়েও বড় চ্যালেঞ্জ ছিল- হকার উচ্ছেদ। কিন্তু কেউই সমাধান করতে পারেননি। অবশ্য আরিফুল হক চৌধুরী লালদিঘীর পাড়ে ‘হলিডে’ মার্কেট চালু করেছিলেন। সেখানে হকারদের পুনর্বাসনও করা হয়েছিলো। কিন্তু কয়েক মাসের মাথায় তারা চলে আসেন ফের সড়ক ও ফুটপাতের উপর। আরিফের দায়িত্ব পালনের শেষ সময় থেকে সড়ক ও ফুটপাতে হকারদের উৎপাত আরও বেড়ে যায়। বর্তমান মেয়র আনোয়ারুজ্জামানের দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই সে মাত্রা আরও বাড়ে। 

 

 

 

প্রতিদিনই সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত মহানগরের প্রাণকেন্দ্র বন্দরবাজার-জিন্দাবাজার-চৌহাট্টার বিভিন্ন সড়কে ফুটপাত ছাড়িয়ে সড়কের অর্ধেকেরও বেশি অংশ হকারদের দখলে থাকতো। ভ্রাম্যমাণ কাপড় বিক্রেতা ছাড়াও মাছ ও সবজি বিক্রেতারাও বসতেন সড়ক-ফুটপাতে। খোদ নগরভবনের সামনের অংশ সবজি ও মাছ বিক্রেতারা দখল করে রাখরতেন প্রতিদিন। রাতের বেলা বিদ্যুতের আলোরও সুবিধা পেতেন এসব অবৈধ ব্যবসায়ী। তবে এ সমস্যা সমাধানে অবশেষে নির্বাচনি ইশতেহারের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে কাজ শুরু করেছেন মেয়র আনোয়ারুজ্জামান। ফলে আজ সকাল থেকে বন্দর, জিন্দাবাজার ও চৌহাট্টা এলাকার চিত্র ভিন্নরকম। রাস্তা ও ফুটপাত হকাররা দখল করে না রাখায় মানুষ চলাচল করতে পারছেন স্বস্তিতে।

 

 

 


সিসিক সূত্র জানিয়েছে, লালদিঘির পাড় মাঠে প্রায় সাড়ে ৪ একর জায়গা নিয়ে হতে যাওয়া এই মাকের্টে থাকবে প্রায় আড়াই হাজার দোকানঘর। সেখানেই সিলেট মহানগরের ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীরা (হকার) থাকবেন। প্রত্যেক হকারের জন্য ৭ ফুট/৩ ফুট জায়গা বরাদ্ধ দেয়া হবে। মাঠটিতে ইতোমধ্যে মাটি ভরাট করা হয়েছে। কাদা-পানি যাতে না জমে এ জন্য ইট ও বালু ফেলা হয়েছে। তৈরি করা হবে গলি। শেড তৈরি করে দোকানকোটাগুলো ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীদের মাঝে বরাদ্দ দেওয়া হবে। ঈদের আগেই এ কাজ সম্পন্ন হবে। লালদিঘির পাড় মাঠে আড়াই থেকে ৩ হাজার হাকারকে পুনর্বাসন করা হবে। 

 

 

 


রবিবার সকালে পুনর্বাসন কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সিসিক মেয়র মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বলেছেন, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা ছোট ছোট ব্যবসা করে তাদের পরিবার-পরিজন নিয়ে জীবন-যাপন করেন। তারা চুরি-ডাকাতি করেন না। এজন্য তাদেরকে সম্মানের চোখে দেখতে হবে। তারাও আমাদের সমাজের একজন। 

 

 

 


ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে মেয়র বলেন- ক্রেতাদের সাথে সুন্দর আচরণের মাধ্যমে তাদের মন জয় করতে হবে, তবেই এখানে ক্রেতারা আসবে। ক্রেতারা আসলে ব্যবসা ভালো হবে। পরিবার-পরিজন নিয়ে চলতে পারবেন। 

 

 

 


উদ্বোধন শেষে মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী পুরো মাঠ পরিদর্শন এবং কয়েকটি দোকান থেকে কিছু কেনাকাটাও করেন।

 

 

 


হকার পুনর্বাসন প্রক্রিয়া নিয়ে পরে সিলেট জেলা প্রেসক্লাব নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনা মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। তিনি এসময় বলেন- একজনও হকারও কোনো রাস্তা বা ফুটপাতে থাকতে দিবো না আমি। এটি আমার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা। আমি নগরবাসীর এ দাবি পুরণ করবো। পুনর্বাসন প্রক্রিয়া পুরো শেষ হয়ে গেলে কোনো হকার যদি রাস্তা বা ফুটপাতে বসেন তবে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। 

 

 

 


রবিবার দুপুরে সিলেট জেলা প্রেসক্লাব মিলনায়তনে আয়োজিত দেশের সর্বাধিক প্রচারিত সংবাদপত্র ‘বাংলাদেশ প্রতিদিন’র প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলপাকালে মেয়র এ কথাগুলো বলেন। 

 

 

 


এদিকে, সচেতন নগরবাসীর প্রত্যাশ্যা-  বিগত সময়গুলোর মতো হকাররা যাতে আর ফের ফুটপাত বা রাস্তায় দখল করতে না পারেন। তাদের যেন স্থায়ী পুনর্বাসন হয় লালদিঘির পাড়ে। তাতেই বেশ স্বস্তিতে থাকবেন নগরবাসী ও নগরে কাজে আসা মানুষজন। আর এমন হলেই নগরবাসীর প্রশংসায় ভাসবেন আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী।

 

 

 

সিলেটভিউ২৪ডটকম / ডি.আর