মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস বা এমএফএস ব্যবহার করে ডিজিটাল হুন্ডির মাধ্যমে একটি চক্রের বিরুদ্ধে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগ তুলেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

 


গতকাল বুধবার (২৭ মার্চ) রাতে ঢাকা ও চট্টগ্রামে অভিযান চালিয়ে ওই চক্রের পাঁচ সদস্যকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। সিআইডির দাবি, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ তিন মাসে জেট রোবটিক নামের একটি বিশেষ অ্যাপস ব্যবহার করে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা পাচার করা হয়। এ কাজে তারা বিকাশের ১৫০টি এজেন্ট সিম ব্যবহার করে। তবে এসব কাজ দুবাই বসে নিয়ন্ত্রণ করা হয়।


বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) মালিবাগ সিআইডি সদর দপ্তরে সংবাদ সম্মেলন করে এসব কথা বলেন সিআইডির প্রধান ও অতিরিক্ত আইজি মোহাম্মদ আলী মিয়া। এ ঘটনায় গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন নাসিম আহেমেদ, ফজলে রাব্বি সুমন, কামরুজ্জামান, জহির উদ্দিন ও খায়রুল ইসলাম পিয়াস। তাঁদের কাছ থেকে ছয়টি মোবাইল, ১৮টি সিম কার্ড, একটি ল্যাপটপ, ছয়টি মডেম ও নগদ ২৮ লাখ ৫১ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়।


মোহাম্মদ আলী মিয়া বলেন, এই ডিজিটাল হুন্ডি চক্রটির হোতা শহিদুল ইসলাম মামুন। তিনি ২০২০ সাল থেকে দুবাই অবস্থান করছেন। সেখানে মামুনসহ পাঁচজন জেট রোবটিক অ্যাপসের নিয়ন্ত্রক। তাঁরা মালয়েশিয়ান একজন সফটওয়্যার ডেভেলপারের মাধ্যমে তৈরি করা অ্যাপসটিকে কাস্টমাইজ করে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখেন। চট্টগ্রামের তাসমিয়া অ্যাসোসিয়েট নামে বিকাশ ডিস্ট্রিবিউশন হাউসের এজেন্ট সিমগুলো বাংলাদেশে থাকলেও মূলত সেগুলোর নিয়ন্ত্রণ করা হয়ে থাকে দুবাই থেকে। দুবাই থেকে তাঁরা বাংলাদেশের নগদ, বিকাশসহ বিভিন্ন এমএফএস সার্ভিসে ক্যাশ ইনের মাধ্যমে টাকা পাঠাতে পারেন। 

 

সিআইডি প্রধান বলেন, এই হুন্ডির কাজে তারা বিশ্বস্ত এজেন্টের মাধ্যমে প্রবাসী বাংলাদেশিদের কাছ থেকে বৈদেশিক মুদ্রা সংগ্রহ করে। সংগ্রহকৃত অর্থ কোন নম্বরে বা কোন ব্যাংক হিসাবে পাঠাতে হবে, সেটা নিশ্চিত হয়। তখন বাংলাদেশ থেকে সংগ্রহ করা এজেন্ট সিম থেকে অ্যাপস ব্যবহার করে প্রবাসীদের আত্মীয়দের নম্বরে টাকা পাঠিয়ে দেয়।

 

চট্টগ্রামের বিকাশ ডিস্ট্রিবিউশন হাউস তাসমিয়া অ্যাসোসিয়েটস যে ভাড়ায় এজেন্ট সিম ব্যবহারে বিকাশ দায় এড়াতে পারে কি না—জানতে চাইলে পুলিশের এ অতিরিক্ত মহাপরিচালক বলেন, ‘অবশ্যই বিকাশ দায় এড়াতে পারে না। বিকাশের এজেন্ট সিম, শুধু অ্যাজেন্টরাই পাবেন, যারা ভেরিফাইড শুধু বিকাশের নয়, বিকাশ ডিস্ট্রিবিউশন হাউস তাসমিয়া অ্যাসোসিয়েটসেরও ভেরিফাইড। যদি তারা এজেন্টদের নিয়ন্ত্রণ করতে না পারে তাহলে তার দায়-দায়িত্ব তাদের ওপর বর্তায়। আমরা তাসমিয়ার মালিককেও তুলে এনেছি। গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে আমরা যে তথ্য পেলাম এককথায় তা ভয়াবহ।’

 

জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্যের বরাতে মোহাম্মদ আলী বলেন, যেসব এজেন্ট তাঁদের লিমিট টার্গেট পূরণ করতে পারে না, তাঁদের ছাঁটাই বা বাদ দিয়ে দেওয়া হয়। ছাঁটাইকৃত এজেন্ট সিম এই জেট রোবোটিক অ্যাপসে ভাড়া দেওয়া হয় একটা নির্ধারিত সময় পর্যন্ত। ডিস্ট্রিবিউশন হাউস তাসমিয়ার এসও (সেলস অফিসার) ও ডিএসও (ডিস্ট্রিবিউশন সেলস অফিসার) তাঁরা পারসেন্টের পেতেন। এই কারণে এটা খুব গোপনভাবেই চলছিল। এটা যেহেতু এখন ধরা পড়েছে সিআইডির জালে, সে জন্য এটার কার্যক্রম যাতে বন্ধ হয়ে যায়—সে জন্য বিটিআরসিকেও জানিয়ে এটা ব্লক করা হয়। 

 

নতুন নতুন অ্যাপসের মাধ্যমে নতুন কৌশলে এই ধরনের ডিজিটাল হুন্ডি কার্যক্রম চলতে পারে উল্লেখ করে সিআইডির প্রধান বলেন, এ ধরনের কার্যক্রম রোধে সিআইডিসহ সব দায়িত্বরত প্রতিষ্ঠানকে ইন্টেলিজেন্স, মনিটরিং আরও বাড়াতে হবে।

 

সিলেটভিউ২৪ডটকম/ আজকের পত্রিকা/ নোমান