হাওর বেষ্টিত একটি জেলা হবিগঞ্জ। এ জেলায় এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বাম্পার ফলন হয়েছে বোরো ফসলের। দিগন্তজুড়া বিস্তৃর্ণ হাওরে এখন দোলছে কৃষকের সোনালী স্বপ্ন। তবে ধান কাটার শ্রমিকের জন্য বিপাকে পড়তে হচ্ছে কৃষকদের। বাড়তি মজুরি দিয়ে ধান কাটার কারণে দুশ্চিতায় অনেকে। অনেকে আবার উৎপাদন খরচ না উঠা নিয়েও রয়েছেন শঙ্কায়। বৈশাখের শুরুতে আগে আবাদ করা ধানের জমিগুলো কাটা শুরু হলেও এখন পুরোদমে চলছে ধান কাটার উৎসব। তীব্র গরমেও গোলায় ধান তুলতে পেরে যেন একটু খানি স্বস্থির নিশ্বাস নিচ্ছেন কৃষকরা। তবে কৃষকরা বলছেন, অন্যান্য বছরের মতো এবারও যদি জেলা প্রশাসন দেশের অন্য প্রান্ত থেকে শ্রমিক এনে ধান কাটার ব্যবস্থা করে দিতো তা হলে ভালো হতো।

 



জেলা কৃষি অফিসের দেয়া তথ্যমতে এবার জেলায় ১ লাখ ২৩ হাজার ৭শত ৩৭ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করা হয়। ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫ লাখ ২০ হাজার ৬৬৫ টন। এ বছর ধানের দাম প্রতি কেজি ত্রিশ টাকার বেশি হতে পারে। সে হিসাবে ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকার ধান গোলায় ওঠার সম্ভাবনা আছে। ইতোমধ্যে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ১৭ হাজার ৬শ ৩০ হেক্টর জমির ধান কাটা শেষ হয়েছে। তবে শ্রমিক সংকট মোকাবেলায় হাওরে হারভেস্টার মেশিনের মাধ্যমে ধান কাটা হচ্ছে। কৃষি অফিস বলছে, এখনও তেমন শ্রমিক সংকট পড়েনি। তবে বিষয়টি আমরা জেলা প্রশাসনের সাথে সমন্বয় করছি।

 


বানিয়াচং উপজেলার মুরাদপুর গ্রামের কৃষক রাফিউর রহমান বলেন, শ্রমিক সংকটের কারণে হাওরের পাকা ধান কাটতে পারছি না। এখন নগদ টাকা দিয়ে ধান কাটতে হচ্ছে। ধান কাটা পর্যন্ত যে টাকা খরচ হয়েছে তা দিয়ে উৎপাদন খরচ বাদ দিয়ে কত টাকা লাভবান হব তা বলা যাচ্ছে না।

 


আজমিরীগঞ্জ উপজেলার হিলালপুর গ্রামের কৃষক ওয়ারিশ মিয়া জানান, গেল ক’দিন যাবত জমিতে ধান কাটা শুরু করেছি। ভালো ফলন হয়েছে। সামনের দিনে আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবার বোরোতে লোকসান গুণতে হবে না। তবে শ্রমিক না থাকায় পাকা ধান কাটতে পারছি না আমরা। লাখাই উপজেলার কৃষক সুশীল চন্দ্র দাস বলেন, শ্রমিকের বিপরীতে এখন মাঠে মেশিনের মাধ্যমে ধান কাটা হচ্ছে। তবে নিচু জমিগুলোতে ওই মেশিন নামানো যাচ্ছে না।

 


সরেজমিনে হাওরে ঘুরে দেখা যায়, দিগন্তজুড়া বিস্তৃর্ণ হাওরে এখন কৃষকের সোনালী ধান দোলছে। তীব্র গরম উপেক্ষার করে ভোর রাত থেকেই ধান কাটায় দলে দলে নেমে পড়ছেন শ্রমিকরা। রোদের তীব্রতা বাড়ার সাথে সাথে অনেক শ্রমিক ধান কাটা শেষে তা পক্রিয়াজাত করণে ব্যস্ত হয়ে পড়ছেন। শিশু থেকে বৃদ্ধ সব বয়সী লোকজন মেতেছেন এখন ধান গোলায় তোলার উৎসবে। তবে হাওরে শ্রমিক সংকট থাকলেও বাম্পার ফলন যেন হাসি ফুঠাচ্ছে কৃষকদের। কৃষকরা বলছেন, এবার ধানে কোন ধরণের পোকা মাকড় আক্রমন করেনি। সময়মতো বৃষ্টি হওয়ায় বোরো ফসলের ফলন ভালো হয়েছে।

 


হবিগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ নূরে আলম সিদ্দিকী জানান, গরমের কারণে ধান কাটার শ্রমিকরা মুজুরি বেশি চাচ্ছে। তবে এ সমস্যাটা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে সমাধান করতে হনে। তিনি বলেন, যেসব এলাকায় ধান বেশি পেকেছে সেই সব এলাকায় আমরা অন্য এলাকা থেকে হারভেস্টার মেশিন এনে ধান কাটার ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। তিনি বলেন, কৃষি বিভাগ সবসময় জেলার কৃষকদের পাশে থেকে সহযোগিতা ও পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে।

 

সিলেটভিউ২৪ডটকম / জাকারিয়া / মাহি