যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আদালতে রগরগে সাক্ষ্য দিলেন সাবেক পর্নো তারকা স্টর্মি ডানিয়েলস। ২০০৬ সালে তার সঙ্গে ট্রাম্প কী কী করেছিলেন সবিস্তারে তার বর্ণনা দিলেন তিনি আদালতে। এতটাই খোলামেলা বর্ণনা দিচ্ছিলেন তিনি যে, বার বার তাকে থামিয়ে দিতে বাধ্য হন বিচারক।
 

ডানিয়েলের অভিযোগ, ২০০৬ সালে ট্রাম্প তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করেছিলেন। মঙ্গলবার আদালতে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, একটি সেলিব্রেটি গলফ টুর্নামেন্টে ট্রাম্পের সঙ্গে তার সাক্ষাৎ হয়েছিল। সেখানে লেক টাহোই’তে নিজের হোটেলকক্ষে স্টর্মি ডানিয়েলকে ডেকে নেন ট্রাম্প। স্টর্মি ডানিয়েলের বর্ণনায় তখন ট্রাম্প ছিলেন সিল্ক বা সাটিনের পায়জামা পরিহিত। তা নিয়ে ডানিয়েল কৌতুক করেছিলেন। তিনি ট্রাম্পের কাছে জানতে চেয়েছিলেন- হিউ হেফনার (প্লেবয়ের প্রতিষ্ঠাতা) কি জানেন যে, তুমি তার পায়জামা চুরি করেছ? এমনি করে ট্রাম্পের হোটেলকক্ষের মেঝে থেকে সেখানকার আসবাবপত্র এমনকি বাথরুমে কী কী হয়েছিল তার বিস্তারিত বর্ণনা দেন। এক পর্যায়ে তিনি নিজের বাহু প্রসারিত করে দিয়ে সাক্ষীর নির্ধারিত বক্সে পা তোলেন। এর মধ্য দিয়ে ট্রাম্প হোটেলের বেডে তাকে কিভাবে আহ্বান করেছিলেন সেই দৃশ্য ফুটিয়ে তোলেন।
 


তার বর্ণনা অনুযায়ী, ট্রাম্প তখন তার আন্ডারওয়্যার খুলে ফেলেন।

কিন্তু স্টর্মি ডানিয়েল এত খোলামেলা বর্ণনা দিচ্ছিলেন যে, কয়েকবার তাকে থামিয়ে দিতে বাধ্য হন বিচারক হুয়ান মারচান। এ সময় ট্রাম্পের আইনজীবিরা যুক্তি দেন যে, স্টর্মি ডানিয়েল বিচারকদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করছেন, যাতে তারা তার পক্ষে রায় দেয়। কিন্তু তাদের এই আহ্বানকে প্রত্যাখ্যান করেন বিচারক। বলেন, স্টর্মি ডানিয়েলের আরও অনেক কিছু আছে, যা বলেননি।
 

আগামী ৫ই নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। সেই নির্বাচনে রিপাবলিকান দলের মনোনয়ন পেতে যাচ্ছেন ট্রাম্প। কিন্তু তাকে বেশ কয়েকটি মামলা আষ্টেপৃষ্ঠে আটকে ধরেছে। তার মধ্যে স্টর্মি ডানিয়েলের সঙ্গে তার সম্পর্কের কথা অর্থের বিনিময়ে গোপন করার অভিযোগ অন্যতম। ২০১৬ সালে প্রথম প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করেন ট্রাম্প। কিন্তু তার আগেই তিনি নিজের সাবেক আইনজীবী মাইকেল কোহেনকে দিয়ে স্টর্মি ডানিয়েলের মুখ বন্ধ করানোর উদ্যোগ নেন।
 

স্টর্মি ডানিয়েলের মতে, তাকে এক লাখ ৩০ হাজার ডলার দেয়া হয়েছিল এবং বলা হয়েছিল, তিনি যেন ট্রাম্পের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়টি প্রকাশ না করেন। কিন্তু ওই নির্বাচনের আগে ‘এক্সেস হলিউড’ টেপ ফাঁস হওয়ার পর একে একে বেরিয়ে আসতে থাকে ট্রাম্পের নারী সংসর্গের কথা। সামনে আসেন স্টর্মি ডানিয়েল। তিনি পরিষ্কার ভাষায় বলে দেন, ট্রাম্প তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করেছিলেন। মুখ বন্ধ করতে অর্থ দিয়েছিলেন। এ নিয়ে মামলার বিচার চলছে। পর্নো তারকা স্টর্মি ডানিয়েলের আবার সাক্ষীর কাঠগড়ায় দাঁড়ানোর কথা বৃহস্পতিবার। এদিন আবার শুনানি হবে।
 

ওদিকে মঙ্গলবার প্রায় ৯০ মিনিট আদালতে সাক্ষ্য দেয়ার পর তাকে বিকেলে ক্রস-চেক করার জন্য ট্রাম্পের আইনজীবী সুসান নিচেলেসের জিজ্ঞাসাবাদ করার কথা ছিল। তবে তা হয়েছে কিনা তা পরিষ্কার জানা যায়নি।

এর আগে মঙ্গলবার স্থানীয় সময় সকালে স্টর্মি ডানিয়েলে আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়ান। একে একে বলতে থাকেন সব। বলতে থাকেন, ট্রাম্পের সঙ্গে কোথায় শয্যাসঙ্গী হয়েছিলেন। বলেছেন, ট্রাম্প যে রুমে ছিলেন হোটেলের তার মেঝে ছিল সাদা-কালো টাইলের। মাঝখানে ছিল মেহগিনি কাঠের বড় একটি টেবিল। তিনি রাতের খাবারের সময়কার কথোপকথন সম্পর্কে বর্ণনা দেন। এ সময় ট্রাম্প তার সঙ্গে শুধু যৌনতা নিয়ে নয়, একই সঙ্গে পর্নো ছবির শিল্পের ব্যবসা নিয়ে আলোচনা করেন। এক পর্যায়ে তিনি একটি ম্যাগাজিন নিয়ে ট্রাম্পের পশ্চাৎদেশে আঘাত করেন। ডানিয়েল বলেন, তিনি বাথরুম থেকে বেরিয়ে দেখতে পান ট্রাম্প বিছানার ওপর বক্সার এবং টি-শার্ট পরে অবস্থান করছেন।
 

স্টর্মি ডানিয়েল বলেন, প্রথমে আমি থতমত খেয়ে গিয়েছিলাম। যেমন করে মানুষ ভয় পেয়ে লাফিয়ে ওঠে। কারণ, আমি আশা করিনি এখানে কেউ এভাবে থাকবে, বিশেষ করে কাপড়চোপড় খুলে। এরপর দরজা এবং আমার মাঝখানে দাঁড়িয়ে গেলেন ট্রাম্প। হুমকি হওয়ার ভঙ্গিতে নয়। তিনি আমার দিকে অগ্রসর হননি। আমার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েননি। এমন কিছু না। স্টর্মি ডানিয়েল বলেন, এরপর তারা শারীরিক সম্পর্কে মিলিত হন। তিনি বলেন, আমি পোশাক এবং জুতা খুলে ফেলি। আমার অন্তর্বাস খুলে ফেলি। তারপর আমরা ছিলাম মিশনারি পজিশনে।

এ অবস্থায় আর বিস্তারিত বর্ণনা দেয়া থেকে বিরত রাখেন স্টর্মি ডানিয়েলকে। পরে ডানিয়েল বলেন, এরপর তিনি যখন পোশাক পরেন তখন কাঁপছিলেন। ট্রাম্পের সঙ্গে ভবিষ্যতে সাক্ষাৎ হবে এটা নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, বহু মানুষকে তিনি বলেছেন, ট্রাম্পের সঙ্গে তার সাক্ষাৎ হয়েছে। তার সঙ্গে হোটেলরুমে ছিলেন। তবে খুব অল্প মানুষের কাছেই শারীরিক সম্পর্কের কথা বলেছেন। কারণ, তিনি বিষয়টি প্রকাশ করতে লজ্জা পাচ্ছিলেন।
 

স্টর্মি ডানিয়েল বলেন, এরপরও ট্রাম্পের সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিল। ট্রাম্প টাওয়ারে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য গিয়েছিলেন। সেখানে ‘সেলিব্রেটি অ্যাপ্রেন্টিস’ রিয়েলিটি শো নিয়ে আলোচনা করতে গিয়েছিলেন। স্টর্মি ডানিয়েল বলেন, ২০১৫ সালে প্রথম প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারণা শুরু করেন ট্রাম্প। তখন এই পর্নো তারকার পাবলিসিস্ট গিনা রড্রিগুয়েজ তার কাহিনী বিক্রি করে দেয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু ২০১৬ সালের অক্টোবরে ট্রাম্পের ‘এক্সেস হলিউড’ টেপ ফাঁস হয়। তার আগে পর্যন্ত রড্রিগুয়েজ খুব একটা আগ্রহ দেখাচ্ছিলেন না। এরই এক পর্যায়ে মাইকেল কোহেন তাকে এক লাখ ৩০ হাজার ডলার দেন মুখ বন্ধ রাখতে।

 


সিলেটভিউ২৪ডটকম/ডেস্ক/এসডি-২০২৩