কতদূর এগুলো মানুষ ! মানবিক বোধসম্পন্ন মানুষ সম্পর্কে জানার আগ্রহ থেকে কবি আল মাহমুদের এ উক্তি। মুনীর চেীধুরী তাঁর বিখ্যাত রক্তাক্ত প্রান্তর নাটকে বলেছেন- ‘মানুষের রক্তে পিয়াস মেটায় মানুষ, জানোয়ার চাটে জানোয়ারের রক্ত’। আমরা কি তবে এগিয়েছি ? নাকি অন্ধকার পথে যাত্রা করছে আমাদের বিবেক।
 

আমাদেরকে বলা হচ্ছে সৃষ্টির শ্রেষ্ট জীব। আমরা দাবি করছি- এই একুশ শতকের আধুনিক মানুষ আমরা, কিন্তু প্রতিদিন প্রত্যক্ষ করছি জানোয়ার রুপী মানুষের আস্ফালন। পশুর মতো আচরণ করছি। বুদ্ধি- বিবেক লোপ পাচ্ছে দিন দিন। ঠুনকো বিষয়ে একজন আরেক জনকে খুন করছে অবলীলায়। যেন আমরা মধ্যযুগে বাস করছি। আমরা যারা মানবতাবাদী দাবি করছি তাদেরও অনুভূতি ভোতা হয়ে গেছে। এসব খবর আমাদের নাড়া দেয়না, স্পর্শ করে না।
 


দেশে শিশু খুনের মহোৎসব শুরু হয়েছে। এটা কোনো অবস্থাতেই স্বাভাবিক বিষয় হতে পারে না। এতকাল একটা সয়ে যাওয়া বিষয় ছিল যে, ক্ষমতাশীল রাষ্ট্র আরেকটা দেশ আক্রমণ করে বোমা ছুঁড়লে সেখানে খুন হয় শিশুরা। দেশে দেশে যুদ্ধ যখন চলে, খাবার সংকটে ঘাস, মাটি লতাপাতা এমনকি নিজের শরীরের মাংস খায় শিশুরা। তারপর বোমা এসে তার শরীর উড়িয়ে দিয়ে মুক্তি দিয়ে যায়। ঘর নাই, বাড়ি নাই, আশ্রয়ের সন্ধানে এখানে ওখানে সীমান্তে সীমান্তে ঘুরে  মরে। ধর্ষণের শিকার হয় শিশুরা। কিন্তু ফুলের মতো শিশুরা এখন প্রতিবেশির  হাতে খুন হয়। আপন মানুষের কাছেও তারা আর নিরাপদ নয়। গত পাঁচ বছরে দেশে দুই হাজারেরও বেশি শিশুকে হত্যা করা হয়েছে। চলতি বছরেই হত্যার স্বীকার হয়েছে শতাধিক শিশু।
 

সিলেটের কানাইঘাটের শিশু মুনতাহাকে (৬) কে হত্যা করেছে তার গৃহশিক্ষিকা মার্জিয়া আক্তার। তাকে সহযোগিতা করেন তার মা আলিফজান। গলা চেপে হত্যা করা হয় নিস্পাপ মুনতাহাকে। কত নিষ্টুরতা, কত পাপ বহন করলে মানুষ এ কাজ করতে পারে। এ ঘটনায় শোকে স্কব্ধ গোটা দেশ।

১০ নভেম্বর রোববার ভোরে মার্জিয়ার মা আলিফজান মুনতাহার মরদেহ অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার সময় হাতেনাতে ধরা পড়ে। পূর্ব শত্রুতার জেরে মুনতাহার সাবেক গৃহশিক্ষিকা তাকে হত্যা করেন। মুনতাহার গৃহ শিক্ষকা মার্জিয়াকে শিক্ষকতা থেকে অব্যাহতি দেওয়ায় ক্ষোভ ছিল মুনতাহার পরিবারের উপর। এছাড়া মার্জিয়ার উপর চুরির অপবাদ দেওয়ার ক্ষোভ থেকে এই হত্যাকাণ্ড ঘটতে পারে।
 

এর আগে গত ৩ নভম্বের দুপুর থেকে নিখোঁজ ছিলো সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার এই শিশু। মুনতাহা উপজেলার সদর ইউনিয়নের বীরদলের ভাড়ারিফৌদ গ্রামের শামীম আহমদের মেয়ে। মুনতাহার নিখোঁজের ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক তোলপাড় হয়। তার সন্ধান চেয়ে দেশ-বিদেশে অনেকে পুরষ্কারও ঘোষণা করেন।

স্থানীয়রা বলেছেন, ছোট্ট ফুটফুটে বাচ্চাকে কিভাবে হত্যা করল ? একবার ফাঁসি হলেও তো এই নিষ্ঠুর ভয়ংকর হত্যার বিচার সঠিক হবে না। ফাঁসির থেকেও ভয়ংকর বিচার হতে হবে তবে। যাতে আর কোন মানুষ এ ঘৃণ্য কাজ করতে না পারে।

 

লেখক: সাংবাদিক ও শিক্ষক