আমি একজন চা প্রেমী মানুষ।চা ছাড়া আমার চলেনা। আমার মতো এদেশে কোটি মানুষ রয়েছেন যারা চা প্রেমী।রাজনীতির টেবিল থেকে শুরু করে সবখানে চলে চা। কিন্তু একবার কি ভেবে দেখেছেন এই এক কাপ চায়ের পেছনে রয়েছে হাজার হাজার চা শ্রমিকের কঠোর পরিশ্রম? চা-বাগানগুলোতে প্রতিদিন হাজারো নারী-পুরুষ শ্রমিক সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত কাজ করেন। তারা শুধু আমরা চা প্রেমীদের চাহিদা পূরণ করেন না, রাখেন দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।


বাংলাদেশ চা বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী ২০২৩ সালে  ২৪.৫ লাখ কেজি চা বিদেশে রপ্তানি করা হয়েছে এবং আয় হয়েছে প্রায় ৩৮ কোটি ২৫ লাখ টাকা। অথচ তাদের জীবন এখনও ঘিরে আছে দারিদ্র্য, বঞ্চনা আর অমানবিক বাস্তবতা।
 


বর্তমানে একজন চা শ্রমিকের দৈনিক মজুরি ১৭৮ টাকা ৫০ পয়সা। বিভিন্ন সময়ে আমরা দেখি সরকারি চাকুরীজীবিদের মহার্ঘ্য ভাতা দেওয়া হয়। মহার্ঘ্য ভাতা দেওয়ার কারণ হচ্ছে সময়ের সঙ্গে জিনিসপত্রের দাম বাড়ে (যেমন চাল, ডাল, ভাড়া ইত্যাদি)। বেতন একই থাকলে কর্মীদের বাস্তব আয় কমে যায়। মহার্ঘ্য ভাতা এই ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে দেয়। জিনিসপত্র এর দাম কি শুধু সরকারি চাকুরীজীবিদের জন্য বাড়ে নাকি সকলের জন্য বাড়ে?অবশ্যই সকলের জন্য বাড়ে। ১৭৮টাকা ৫০ পয়সা যাদের মজুরি তাদের জন্য মহার্ঘ্য ভাতা আগে জরুরি নাকি অন্যদের জন্য। যদি কাউকে দিতে হয় তাহলে আগে চা শ্রমিকদের নাম থাকার কথা। দুঃখের বিষয় হচ্ছে দেশ স্বাধীন হওয়ার ৫৪ বছর পরেও চরম বৈষম্যের শিকার চা শ্রমিকরা। তাদের জীবনযাপন হয় মাত্র কয়েক টাকার মজুরির ওপর নির্ভর করে। তাদের শ্রমে দেশের অর্থনীতি লাভবান হলেও তার ফল তারা ভোগ করতে পারেন না।এটা শুধু অবিচার নয়, মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন।
 

চা শ্রমিকদের অধিকাংশই আদিবাসী বা সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী, যাদের রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্ব প্রায় নেই। শ্রমিকদের দাবি-দাওয়া সবসময় উপেক্ষিত হয়। রাষ্ট্র তাদের অবদানের কথা প্রচারে ব্যবহার করলেও, নীতিগত সুবিধা দেওয়ার ক্ষেত্রে বিচারহীনতা ও অবহেলার শিকার।
 

মহান মে দিবস এর শপথ হোক চা শ্রমিক কেবল শ্রমের বাহক নন, তারা স্বপ্ন ও মর্যাদার দাবিদার।এক কাপ চায়ের মূল্য নিরূপিত হোক ন্যায্যতা ও মানবিকতার প্রেক্ষাপটে।

 

 

লেখক: আরিফ রশিদ (শিক্ষার্থী), আইন ও বিচার বিভাগ, মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটি সিলেট।