আফগানিস্তান ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের পাশে থাকার জন্য পাকিস্তানকে চড়া মূল্য দিতে হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। সম্প্রতি রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশন চ্যানেল রাশিয়া টুডেকে একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন তিনি।

সাক্ষাৎকারে ইমরান বলেন, ‘আফগানিস্তান ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রকে সমর্থন করা পাকিস্তানের একটি বড় ধরনের ভুল সিদ্ধান্ত ছিল এবং এ জন্য আমাদের চড়া মূল্য দিতে হয়েছে।’


আফগানিস্তান তালেবানের দখলে চলে যাওয়ার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিবিদদের একাংশ। তাদের বক্তব্য- প্রতিবেশী পাকিস্তানের সহযোগিতা ছাড়া এত দ্রুত ও অল্প সময়ের মধ্যে আফগানিস্তানে আসীন হতে পারত না তালেবানগোষ্ঠী।

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্ট কংগ্রেসের ‍উচ্চকক্ষ সিনেটের পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটির শুনানি হয়েছে। সেখানে কমিটির সদস্যরা অভিযোগ করেছেন- তালেবানগোষ্ঠী আফগানিস্তান থেকে উৎখাতের পর থেকে তাদের গোপনে মদত দিয়ে এসেছে পাকিস্তান।

সাক্ষাৎকারে রাশিয়া টুডের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একজন পাকিস্তানি হিসেবে মার্কিন সিনেটরদের বক্তব্য আমরা ভালো লাগেনি। আমি গভীরভাবে আহত।’

‘আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের পরাজয়ের দায় পাকিস্তানের ওপর চাপানো হচ্ছে- এটা খুবই যন্ত্রণাদায়ক ব্যাপার।’

সাক্ষাৎকারে ইমরান জানান, আফগানিস্তান ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রকে দু’দফায় সহযোগিতা করেছে পাকিস্তান। প্রথম দফা সহযোগিতা ছিল আশির দশকে, যখন তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন আফগানিস্তানে আগ্রাসন চালিয়েছিল।

সে সময় তৎকালীন সোভিয়েত বাহিনীর বিরুদ্ধে যেসব মুজাহিদিন দল যুদ্ধ করেছিল, যুক্তরাষ্ট্রের আহ্বানে তাদের প্রশিক্ষণ দিয়েছিল পাকিস্তানের গোয়েন্দা আইএসআই।

‘সে সময় আমরা তাদের (আফগান মুজাহিদিন) বিদেশী আগ্রাসন রুখতে প্রশিক্ষন দিয়েছিলাম। তাদেরকে আমরা বলতাম- এটি একটি পবিত্র যুদ্ধ, এটি জিহাদ।’

তারপর ২০০১ সালে যখন আফগানিস্তানে যখন অভিযান শুরু করল যুক্তরাষ্ট্র, সেসময় পাকিস্তানের ক্ষমতায় ছিলেন দেশটির সাবেক সেনাপ্রধান পারভেজ মুশাররফ। সেনাপ্রধানের পদ ছেড়ে সদ্য তিনি আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন হয়েছিলেন এবং সে সময় আন্তর্জাতিক মহলে কোনঠাসা অবস্থায় থাকা পাকিস্তানের নতুন সরকারের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনের প্রয়োজন ছিল দেশটির।

অন্যদিকে, অভিযান সফল করার জন্য ইসলামাবাদের সহযোগিতা প্রয়োজন ছিল ওয়াশিংটনের।

ইমরান খান বলেন, ‘এখানেই ছিল সবচেয়ে বড় গলদ। কারণ, যে মুজাহিদিনদের আইএসআই জিহাদি প্রশিক্ষণ দিয়েছিল, তাদেরকেই যখন ফের আইএসআইয়ের পক্ষ থেকে বলা হয় – যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা হলো সন্ত্রাসবাদ- তখন মুজাহিদিনরা পাকিস্তান থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং আমাদেরকে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগী হিসেবে গণ্য করা শুরু করে।’

‘অর্থাৎ, আমি বলতে চাইছি- যুক্তরাষ্ট্রকে এই ইস্যুতে সহযোগিতা করার জন্য বিপদে পড়েছে পাকিস্তান। এবং এ জন্য এখনও পাকিস্তান ভুগছে।’


সিলেটভিউ২৪ডটকম/ডেস্ক/এসডি-১২


সূত্র : ঢাকাপোস্ট