২০০৭ সালের ১/১১ এর সেনা সমর্থিত অবৈধ সরকারের মূল উদ্দেশ্যই ছিল শেখ হাসিনাকে মাইনাস করে নির্বাচন করা। মূলত মাইনাস ওয়ান ফর্মুলা নিয়েই ফখরুদ্দিন-মঈনুদ্দিন সরকার এদেশকে একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করতে চেয়েছিল। সারাদেশে আওয়ামী লীগের অগুনতি অজস্র নেতাকর্মী আর দলমত নির্বিশেষে সাধারণ মানুষের ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধের মধ্য দিয়েই সেদিন গণবিচ্ছিন্ন সরকার শেখ হাসিনার কাছে পরাভূত হয়। ২০০৭ সালের ১৪ ই মে আলোচিত ১/১১ এর সময় তৎকালীন সেনাশাসিত সরকারের নির্দেশে সিলেটের বটেশ্বর (চাঁদবাগান) থেকে ৪০ জন নেতাকর্মীর নির্মম কারাবরণের ১৫তম বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা ও স্মরণসভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।

শনিবার (১৪ মে) দুপুর বারোটায় সিলেট জেলা পরিষদ মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সিলেট জেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি, সাবেক সংসদ সদস্য শফিকুর রহমান চৌধুরীর সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট নাসির উদ্দিন খানের সঞ্চালনায় এ স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়।


 

স্মরণসভায় কারা নির্যাতন ভোগের দুঃসহ স্মৃতিতর্পণ করেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ। সম্মানিত অতিথির বক্তব্য রাখেন সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন ও জেলা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি এডভোকেট শাহ মোশাহিদ আলী, যুক্তরাজ্য আওয়ামীলীগের সহসভাপতি হরমুজ আলী, আওয়ামী লীগের জাতীয় পরিষদ সদস্য এডভোকেট রাজ উদ্দিন জিপি।

 

কারা নির্যাতিতদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল খালিক, সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি সৈয়দ আবুল কাশেম, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক জগলু চৌধুরী, মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য প্রিন্স সদরুজ্জামান চৌধুরী, সিলেট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক সভাপতি এটি এম সোয়েব, মহানগর যুবলীগ জেতা আসাদুজ্জামান আসাদ, ওসমানীনগর উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা টিটু ওসমানী, ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা শামসুল ইসলাম মিলন।

 

এসময় বক্তারা কারানির্যাতনের দুঃসহ দিনের স্মৃতিচারণ করেন। তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাক্ষাত লাভের অভিপ্রায় ব্যক্ত করেন। কারানির্যাতিত নেতাকর্মীরা তাদের বক্তব্যে শফিক চৌধুরীর পরিবারের আন্তরিকতা তুলে ধরে বলেন, কারাবরণের খবর পেয়ে শফিক চৌধুরীর পরিবারের সদস্যরা যুক্তরাজ্য থেকে ছুটে আসেন। কারান্তরীন সময়ের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত শফিকুর রহমান চৌধুরী এবং তার পরিবারের সদস্যরা সকল নেতাকর্মীর পাশে ছিলেন। আইনী সহায়তা থেকে শুরু করে প্রত্যেকের পরিবারের খোঁজখবর রাখতেন  শফিক চৌধুরীর পরিবার।

 

সভাপতির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান শফিকুর রহমান চৌধুরী। তিনি বলেন,

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ ঘটনা সম্পর্কে সেদিন বলেছিলেন, ‘চাইনিজ রেস্টুরেন্ট থেকে শুরু করে বিভিন্ন জায়গায় অন্যান্য দল সভা-সমাবেশ করলে কোন বাঁধা পায় না, কিন্তু আমার দলের নেতাকর্মীরা সামাজিক অনুষ্ঠান করলে তাদের গ্রেফতার করা হয়।’

শফিক চৌধুরী আরও বলেন, ‘উদ্দিন’ সরকার মাইনাস-২ নয়, মূলতঃ আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনাকে মাইনাস করতে চেয়েছিল। কারাগারে আমাদের বিভিন্ন সংস্থা বারবার ওই সরকারকে সমর্থনের বিনিময়ে মুক্তির প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু আমরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বুকে নিয়ে নিজেদের সিদ্ধান্তে অনঢ় থাকি। শেখ হাসিনার পাশ থেকে কেউ কোন কিছুর বিনিময়ে আমাদের সরাতে পারেনি কোনদিন, ভবিষ্যতেও পারবে না।

 

অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জেলা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক শামীম রশীদ চৌধুরী, কৃষকলীগের জেলা সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ শামসুল ইসলাম, জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সালমা বাছিত, জেলা যুবলীগের সভাপতি শামীম আহমদ ভিপি, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নাজমুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক রাহেল সিরাজ, জেলা তাঁতীলীগের সভাপতি আলমগীর হোসেন, জেলা মৎস্যজীবি লীগের সাধারন সম্পাদক মৃদুল কান্তি দাস।

অনুষ্ঠানে অন্যদের মাঝে উপস্থিত ছিলেন সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের আইন সম্পাদক এডভোকেট আজমল আলী, শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক রায়হান উদ্দিনর আহমদ, কোষাধ্যক্ষ শমসের জামাল, কার্যকরী সদস্য এডভোকেট বদরুল ইসলাম জাহাঙ্গীর, মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য রোকসানা পারভীন, মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী হেলেন আহমদ, জাতীয় পার্টির নেতা ইফতেখার আহমদ মিলন, নির্যাতিত যুবলীগ নেতা কবিরুল ইসলাম কবির, সাবেক ছাত্রনেতা ইউসুফ আলী, সেলিম রেজা, অজয় দেব, শফিকুল ইসলাম চৌধুরী টুনু, জহিরুল হক চৌধুরী মাছুম, মুহিবুর রহমান লাভলু, সৈয়দ শাফকাত আজিজ প্রমুখ।

 

কোরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া আলোচনা সভায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারবর্গসহ জাতীয় এবং স্থানীয় নেতৃবৃন্দসহ ১/১১ এর কারানির্যাতিত যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের তৎকালীন সহসভাপতি মরহুম ফারুক চৌধুরীর সম্মানে দাঁড়িয়ে ১ মিনিট নিরবতা পালন কার হয়। সভা শুরুর আগে কারানির্যাতিত নেতৃবৃন্দ জেলা পরিষদ প্রাঙ্গনে স্থপিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করেন। সিলেটের বটেশ্বর (চাঁদ বাগান) থেকে ৪০ জন নেতাকর্মীর গ্রেফতার ও কারানির্যাতনের ১৫ বছর উপলক্ষে স্মৃতিচারণমূলক একটি প্রকাশনা উন্মোচন করা হয়।

 

সিলেটভিউ২৪ডটকম/পিডি