উজানের পানি ও টানা বৃষ্টিতে প্লাবিত হয়েছে সিলেট সদর উপজেলার নিম্নাঞ্চল । ডুবে গেছে বাড়িঘর ও রাস্তাঘাট, স্কুল, কলেজ, মাদরাসা, মসজিদ। পাহাড়ি ঢল আর টানা বর্ষণে সিলেটের বড় দুই নদী সুরমা-কুশিয়ারার পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বন্যা পরিস্থিতি আরো অবনতি হয়েছে। নতুন নতুন এলাকা প্রলাবিত হয়েছে। লাখো মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। 

উপজেলার খাদিমনগর, খাদিমপাড়া, টুকেরবাজার, জালালাবাদ, মোগলগাঁও, কান্দিগাঁও, হাটখোলা ইউনিয়নের প্লাবিত।  বিভিন্ন হাট-বাজার, মসজিদ, স্কুল-মাদ্রাসাসহ ভিটে বাড়ী  পানিতে ডুবে গেছে। বন্যার পানি থৈ থৈ করে বাড়ছে। যানবাহন ছেড়ে নৌকাই হয়েছে মানুষের চলাচলের ভরসা। অনেকের খাবার সংকটের পাশাপাশি বন্যার পানিতে অনেক স্থানে টিউবওয়েল তলিয়ে যাওয়ায় বিশুদ্ধ পানিরও সংকট দেখা দিয়েছে।


অনেকের টয়লেট পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় দুর্ভোগ মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। ঘরে পানি ঢুকে পড়ায় সাপের আতঙ্কও দেখা দিয়েছে জনমনে।

খাদিমনগর ইউনিয়নের ১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭, ৮ সহ বেশ কিছু এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে মাছের খামার, ঘরবাড়ি, স্কুল, মসজিদ, রাস্তাঘাট,  ক্ষেত, বীজতলা।

খাদিমপাড়া মুরাদপুর, সোনাপুর, মিরের চক, নয়া মসজিদ, মুক্তির চক,  ধনকান্দি, পাচঘরি, কল্লোগ্রামের একাংশ, ইসলামাবাদ, বালুটিকর, বংশিধর, পলিয়া, দেওয়ানের চক, মাজরগাঁও, সুরমা আদর্শ গুচ্ছগ্রাম, হাতুড়া, শ্যামপুরসহ বিভিন্ন এলাকা ডুবে গেছে। 

টুকেরবাজার, সাহেবেরগাঁও, চরুগাঁও, শেখ পাড়া, ওয়ার্ডের হায়দরপুর, পীরপুর, শাহপুর, ওয়ার্ডের টুকেরগাঁও, গরীপুর, শাহপুর, ওয়ার্ডের নোয়াগাঁও, ওয়ার্ডের শাহপুর তালুকদার পাড়া, নওয়াপাড়া, মইয়ারচর, খুরুম খলাও। মোগলগাঁও ইউনিয়নের  প্রায় ঘর-বাড়ী রাস্তাঘাট স্কুল, মাদ্রাসা, মসজিদ ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ডুবে গেছে। 

কান্দিগাঁও ইউনিয়নের ঘোপাল, জাংগাইল, মিরপুর, গোবিন্দপুর, মিরের গাও, চামাউরাকান্দি, নীলগাঁও, নলকট। জালালাবাদ ইউনিয়ন, হাটখোলা ইউনিয়ন পানী বন্ধি। 

কান্দিগাঁও ইউনিয়নের জমির উদ্দিন বলেন, ‘বন্যার  কারণে রাস্তা ডুবে গেছে এখন দিয়ে  নৌকা চলাচল করতে হচ্ছে। 
খাদিম নগর ইউনিয়নের জয়নাল বলেন, ‘ঘর-দুয়ারে পানি। সন্তানদের নিয়ে অনিরাপদ অবস্থায় আছি। কাজে যাওয়াও দুষ্কর হয়ে পড়েছে।

জালালাবাদ ইউনিয়নের আশ্রয়কেন্দ্র আলীনগর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, দাবাদা কান্দি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, পূর্ব কালারুকা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, জালালাবাদ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, নোয়াগাঁও সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, শাহজালাল বাজার উচ্চ বিদ্যালয়, হাটখোলা ইউনিয়নের আশ্রয়কেন্দ্র হাটখোলা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, উমাইরগাঁও সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, ভাদেশ্বর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, পাগইল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, রাজারগাও উচ্চ বিদ্যালয়, খাদিমনগর ইউনিয়নের আশ্রয়কেন্দ্র বাইশ টিলা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, পীরের গাও সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, আব্দুল কাদির সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, সাহেবের বাজার উচ্চ বিদ্যালয়, টুকেরবাজার ইউনিয়নের আশ্রয়কেন্দ্র টুকেরবাজার সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, শাহপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, শাহখুররুম ডিগ্রী কলেজ, মোগলগাও ইউনিয়নের আশ্রয়কেন্দ্র লামাগাঁও সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, মোগলগাঁও সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, লামাগাও তালুকদারপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, দশগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়, অমানতপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, লামা আকিলপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, ফতেপুর কামিল মাদ্রাসা, আউসা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, কান্দিগাও ইউনিয়নের আশ্রয়কেন্দ্র ঘোপাল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, মীরপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, চামারা কান্দি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, সোনাতলা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, বলউর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়।

সদর উপজেলা স্পোর্টস একাডেমীর সভাপতি ইকলাল আহমদ বলেন, সরকারের পাশাপশি দেশ এবং প্রবাসে থাকা সকল বিক্তবানরা বন্যা কবলিত এলাকার মানুষের পাশে দাড়াই। সদর উপজেলা ইউনিয়ন পুরোটাই পানিবন্দী। মানুষ অসহায় হয়ে পড়েছে। কিছু মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ে গিয়েছেন, বাকিরা গবাদি পশুসহ আতঙ্কে রয়েছেন। তাদের এখন জরুরি ত্রাণের প্রয়োজন।

সিলেট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুসরাত আজমেরী হক জানান, বন্যা কবলিত এলাকায় ২টন করে ১৪ টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আজকের মধ্যে আরো বরাদ্দ দেওয়া হবে। বিদ্যালয়গুলোকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহারের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।  আমাদের  মনিটরিং সেল থেকে ওই এলাকাগুলোর খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।

সিলেটের জেলা প্রশাসক মজিবর রহমান বলেন, বন্যা কবলিত উপজেলায় নির্বাহী কর্মকর্তাদের খোজখবর রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সবকটি উপজেলায় কন্টোল রুম খোলা হয়েছে। পর্যাপ্ত ত্রাণ বিতরণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।


সিলেটভিউ২৪ডটকম / ইদ্রিছ / ডি.আর