সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে গ্রামের পর গ্রাম বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। এখনো লাখো মানুষ ঘর-বাড়ী ছাড়া। এসব মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রে মানবেতন জীবন যাপন করছেন।

 


এরমধ্যে বন্যার পানিতে স্রোতের কবলে পরে উপজেলার এরালিয়া গ্রামের ফল ব্যবসায়ী আনহার মিয়া (২৮) মারা গেছেন।

জগন্নাথপুরের ইছগাঁও গ্রামের সানুর মিয়া নামের এক বৃদ্ধ বন্যার তোড়ে ডুবে গত ৩দিন ধরে নিখোঁজ রয়েছেন।

 

শনিবার পর্যন্ত তাঁর সন্ধান পাওয়া যায়নি। কবর দেওয়ার মাটি না পেয়ে পানিতে লাশ ভাসিয়ে দিচ্ছেন আত্মীয় স্বজনরা। জগন্নাথপুর-সিলেট সড়ক, জগন্নাথপুর-সুনামগঞ্জ সড়কসহ উপজেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগের সব কটি সড়ক পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে।কিছু কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হলেও উপজেলার অধিকাংশ গ্রামে গত ৯ দিন ধরে বিদ্যুৎ চালু করা সম্ভব হয়নি।

 

উপজেলা সদরে পানি কমতে শুরু করলেও উপজেলার নিন্মাঞ্চলের হাজার হাজার বাড়ী-ঘরে এখনো উরু থেকে হাটু সমান পানি রয়েছে। উপজেলা সদরের প্রধান ব্যবসা কেন্দ্র জগন্নাথপুর বাজারের বিভিন্ন গলি পানিতে তলিয়েছে। বন্যা দুর্গতদের মাঝে খাবারের জন্য হাহাকার চলছে। সরকারের বরাদ্দকৃত ত্রাণ চাহিদার তুলনায় খুবই অপ্রতুল।

বন্যা কবলিত এলাকা ঘুরে দেখা যায়, পৌরএলাকার জগন্নাথপুর সদর, ইকড়ছই, ভবানীপুর, খালিকনগর, আলখানাপাড, মোমিনপুর, হাসিনাবাদসহ জগন্নাথপুর পৌরসভার বিভিন্ন এলাকাসহ উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের প্রায় সবকটি গ্রাম বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। এসব গ্রামের সিংহভাগ মানুষের বসতঘরে পানি উঠে যাওয়ায় বাড়ীঘর তালাবদ্ধ রেখে লোকজন স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসা, কমিউনিটি সেন্টার, পৌরভবন, সরকারী-বেসরকারি ভবন ও উঁচু স্থানে উঠেছেন। ফলে বহু গ্রাম লোক শুন্য হয়ে পড়েছে। এরমধ্যে রয়েছে ডাকাত আতঙ্ক। রাত হলেই ডাকাতদের উপদ্রব শুরু হয়। জগন্নাথপুর পৌর এলাকাসহ ভাটি এলাকার মানুষ ডাকাতদের সাথে যুদ্ধ করে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন।

 

জগন্নাথপুর গ্রামের আবু মিয়া জানান, বন্যার শুরু থেকেই ডাকাতরা আমাদের বাড়ীতে হানা দেওয়ার চেষ্টা করছে আমরা রাত জেগে প্রতিরোধ করছি।

নলুয়া হাওর ব্যস্টিত চিলাউড়া হলদিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম বকুল বলেন, ইউনিয়নের সর গ্রামের বাড়ী-ঘরে পানি। শ’ শ’ পরিবার এখনো আশ্রয় কেন্দ্রে আছেন। পানি কিছুটা কমলেও দুর্ভোগের শেষ নেই মানুষের। বন্যা দুর্গতরা প্রয়োজনীয় ত্রান পাচ্ছে না। অন্যদিকে ডাকাতের অত্যাচারে মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে।

 

জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাজেদুল ইসলাম জানান, ভারতের উজান থেকে নেমে আসা ভয়াবহ তম বন্যার ফলে ১৪০টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এ পর্যন্ত ৮৫ মেট্রিকটন চাল বন্যাদুর্গত দের মধ্যে বিতরন করা হয়েছে। খাবার স্যালাইন সহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সাধ্যমত দিচ্ছি।

 

জগন্নাথপুর থানার ওসি মিজানুর রহমান বলেন, ডাকাতদের বিরুদ্ধে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি। তবে প্রয়োজনীয় নৌযান না থাকায় হাওর এলাকায় দ্রুত ব্যবস্থা খুবই কষ্টকর তবে আমাদের লজিস্টিক সাপোর্ট জরুরী।

 

সিলেটভিউ২৪ডটকম/এসএইচএস/এসডি-৩৭