বন্যার কবলে পড়া সিলেটে হাজার হাজার একর চারণভূমি প্লাবিত হয়েছে। পানিতে তলিয়ে বিনষ্ট হয়েছে ঘাস, খড়। ক্ষতি ও সংকটের মুখে পড়েছেন কৃষক ও খামারিরা। প্রাণিসম্পদ খাতে এই ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১২ কোটি টাকা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, এবারের বন্যায় সিলেট জেলায় প্রায় ৮০ ভাগ এলাকাই তলিয়ে যায়। বন্যার পানিতে হাজার হাজার হাঁস-মুরগি এবং বেশ কয়েকটি গরু-ছাগল মারা পড়েছে। হাজার হাজার টন খড় হয় ভেসে গেছে, না হয় পচে বিনষ্ট হয়েছে।


সিলেট জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বন্যায় সিলেটে প্রাণিসম্পদ খাতে ১১ কোটি ৮১ লাখ ৪৪ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে। ৭ হাজার ৩৫৪ একর চারণভূমি প্লাবিত হয়েছে বন্যায়। এখনও সিংহভাগ চারণভূমি তলিয়ে আছে পানিতে।

বন্যায় ৭২১টি গবাদিপশুর খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সিলেট জেলায়। এক্ষেত্রে ক্ষতি হয়েছে ৬ কোটি ৩৬ লাখ ৬০ হাজার টাকা। এদিকে, ৩৬৮টি হাঁস-মুরগির খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ক্ষতির পরিমাণ ২ কোটি ৭৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা।

জেলায় ২ হাজার ৯১ মেট্রিক টন খড় বিনষ্ট হয়েছে বন্যার পানিতে; যেখানে ক্ষতির পরিমাণ ১ কোটি ৪ লাখ ৫৫ হাজার টাকা। ২ হাজার ৯৮২ মেট্রিক টন ঘাস পচে বিনষ্ট হয়ে গেছে; এখানে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় দেড় কোটি টাকা।

এদিকে, বন্যার কারণে ১১টি গরু, ৬টি মহিষ, ২১টি ছাগল ও ১৬টি ভেড়া অসুস্থ হয়ে মারা গেছে। এ ছাড়া ৪ হাজার ৯৬৩টি মুরগি ও ১ হাজার ২৮৪টি হাঁস মারা গেছে এবারের বন্যার কবলে পড়ে। এ বাবদ ১৮ লাখ ৮৯ হাজার ৩৫০ টাকার ক্ষতি হয়েছে।

প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা বলছেন, বন্যায় অসুস্থ হয়ে পড়া ৯ হাজার ১৫৪টি গবাদিপশু এবং ১২ হাজারের বেশি হাঁস-মুরগিকে টিকা দেওয়া হয়েছে। অন্যান্য প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়াহয়েছে ১০ সহস্রাধিক গবাদিপশু এবং ২৭ সহস্রাধিক হাঁস-মুরগিকে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিস্তীর্ণ গোচারণভূমি এখনও পানিতে নিমজ্জিত থাকায় গবাদিপশুর মালিকেরা সমস্যার মধ্যে পড়েছেন। পর্যাপ্ত গোখাদ্য পাওয়া যাচ্ছে না। কচুরিপানা খাইয়ে গবাদিপশুকে বাঁচিয়ে রাখা হচ্ছে।

সিলেট জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. রুস্তম আলী বলেন, ‘পর্যাপ্ত ঘাস মিলছে না। কারণ বন্যাকবলিত এলাকায় বিস্তীর্ণ গোচারণ ভূমি আর গবাদিপশুর আবাসস্থল তলিয়ে গেছে। যেসব ঘাস চাষ করা হয়েছিল, সেগুলোও রক্ষা করা যায়নি। বিপুল পরিমাণ খড় বিনষ্ট হয়ে গেছে। সংকটের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট মহলকে অবহিত করা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘গবাদিপশুর মড়ক ও মৃত্যু প্রতিরোধে টিকাদান ও চিকিৎসার বিষয়টি আমরা চালিয়ে যাচ্ছি। এ কারণেই মড়ক ও মৃত্যু রোধ করা সম্ভব হয়েছে।’

সিলেটভিউ২৪ডটকম/আরআই-কে