সিলেট নগরীর অভিজাত আবাসিক এলাকা হিসেবে পরিচিত ‘উপশহর’। জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ ১৯৮২ সালে ১৮৮ একর জায়গার উপর সিলেটের নতুন এই আবাসিক এলাকাটি গড়ে তুলে। পরিকল্পিত এই আবাসিক এলাকায় একসময় বাস করতেন নগরের অভিজাত শ্রেণির লোকজন।

শহরের অন্য যে কোন এলাকা থেকে উপশহরের জায়গার দাম ও বাসা ভাড়াও ছিল বেশি। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ের বন্যায় ভয়াবহ জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ায় অভিজাত এই এলাকাটি এখন অভিশাপে পরিণত হয়েছে। অল্প বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা, সুরমায় পানি বৃদ্ধি পেলে বন্যা, রাস্তাঘাট ও বাসার নিচতলা তলিয়ে যাওয়া এসব বিড়ম্বনায় এখন অভিশপ্ত হয়ে ওঠা অভিজাত এলাকা উপশহর ছাড়তে শুরু করেছেন লোকজন।


গেল দু’মাসে উপশহর এলাকা থেকে কয়েক শ’ পরিবার বাসা পরিবর্তন করে অন্যত্র চলে গেছেন বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। ছড়া-খাল খনন, ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন, শহররক্ষা বাঁধ নির্মাণ ও স্লুইস গেট স্থাপন ছাড়া উপশহরের বিরাজমান সমস্যা সমাধান দু:সাধ্য বলে মনে করেন জনপ্রতিনিধিরা।

সিলেট নগরীর আবাসন সমস্যার সমাধানে উপশহর আবাসিক এলাকা গড়ে তোলা হয়। ১৯৮২ সালে জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ ১৮৮ একর জায়গাকে ১০টি ব্লকে ভাগ করে প্লট তৈরি করে জনসাধারণকে বরাদ্দ দেয়। বর্তমানে উপশহর আবাসিক এলাকায় অন্তত ২৫ হাজার মানুষ বসবাস করছেন। পরিকল্পিত আবাসিক এলাকা হওয়ায় উপশহর সিলেটের অভিজাত এলাকা হিসেবে খ্যাতি লাভ করে। সিলেটের অভিজাত শ্রেণির লোকজন ও প্রবাসীরা প্লট ক্রয় করে বাসা করেন উপশহরে। পেশাজীবীদেরও বসবাসের প্রথম পছন্দ হয়ে ওঠে উপশহর। যে কারণে উপশহর আবাসিক এলাকার জায়গার মূল্যও বেড়ে দাঁড়ায় কয়েকগুণ। প্লটের মূল্য ও বাসা ভাড়া নগরের অন্য যে কোন জায়গার তুলনায় বেশি ছিল উপশহরের।

কিন্তু গত মে ও জুন মাসে দুই দফা বন্যায় মারাত্মক সমস্যায় পড়েন উপশহরবাসী। আবাসিক এলাকাটির ৯৭টি সড়ক ডুবে বিচ্ছিন্ন দ্বীপে পরিণত হয় উপশহর। বেশিরভাগ বাসার নিচতলায় পানি উঠে যায়। বন্যার কারণে বন্ধ করে দেয়া হয় বিদ্যুৎ সংযোগ। এসময় খাবার পানিরও তীব্র সংকট দেখা দেয়। বিদ্যুৎ না থাকায় মোটর দিয়েও পানি উঠানো সম্ভব হয়নি।

সর্বশেষ গত ১৬ জুলাই ভারিবর্ষনে ফের জলাবদ্ধতা দেখা দেয় উপশহর এলাকায়। অনেকের বাসাবাড়িতে উঠে যায় পানি। এই অবস্থায় অভিজাত এই আবাসিক এলাকা ছাড়তে শুরু করেছেন মানুষ।

উপশহর আই ব্লকের বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন জানান, তার তিনটি বাসায় ২২টি ফ্ল্যাট রয়েছে। বৃষ্টি ও বন্যায় উপশহর আবাসিক এলাকার রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে যাওয়ার কারণে ৯টি ফ্লাটের ভাড়াটেরা বাসা ছেড়ে দিয়েছেন। এখন নতুন ভাড়াটিয়াও মিলছে না।

উপশহর ই ব্লকের বাসিন্দা শরফ উদ্দিন জানান, এক যুগের বেশি সময় ধরে তিনি উপশহরে থাকছেন। কিন্তু বন্যা ও জলাবদ্ধতার কারণে তিনি এবার বাসা ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন।

সিলেট সিটি করপোরেশনের স্থানীয় কাউন্সিলর এডভোকেট সালেহ আহমদ সেলিম বলেন, ‘বন্যায় প্রায় পুরো উপশহর এলাকা তলিয়ে গিয়েছিল। পানি নামার পর মানুষ বিছানা-বালিশ থেকে শুরু করে এমন কোন জিনিস নেই যেটি ড্রেনে ফেলেনি। তাই পরবর্তীতে বৃষ্টি হলেই উপশহর এলাকায় ভয়াবহ জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হতো। এখন ড্রেন পরিস্কার করায় কিছুটা স্বস্তি মিলছে। কিন্তু সুরমায় পানি বৃদ্ধি পেলে বন্যার আশঙ্কা রয়ে গেছে। ছড়া-খাল খনন, স্লুইস গেট স্থাপন ও শহর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ ছাড়া এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান হবে না।’


সিলেটভিউ২৪ডটকম / শাদিআচৌ