শহীদজায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী লিখিত ও সম্পাদিত এবং মানসী কায়েস ও ফারাহ নাজ অনুদিত ‌‘Dr. Alim A Martyr of 1971’ বইটির মোড়ক উন্মোচন করা হয়।

 


মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৫টায় জাতীয় যাদুঘরের সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে এ উপলক্ষে এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- শিক্ষা মন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমপি।

 

অনুষ্ঠানে মুখ্য আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিল-এর চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী।

আলোচক হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন- সাংসদ এরোমা দত্ত এমপি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মোঃ শারফুদ্দিন আহমেদ,  নির্মূল কমিটির সভাপতি লেখক সাংবাদিক বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহরিয়ার কবির, সম্প্রীতি বাংলাদেশ-এর আহবায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং নির্মূল কমিটির সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী মুকুল।

 

অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন শহীদ সন্তান অধ্যাপক ডা. নুজহাত চৌধুরী, চক্ষু বিজ্ঞান বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়।

 

প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষা মন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, ‘একাত্তরে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীদের মানবতাবিরোধী অপরাধ আজকের প্রজন্ম এবং দেশের বাইরে বাংলাদেশী ডায়াসপোরা ও বিশ্ব সম্প্রদায়ের সামনে তুলে ধরায় বইটি একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল হিসেবে কাজ করবে। তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, একাত্তরের সঠিক ইতিহাস ইংরেজীতে পাওয়ায় যে ঘাটতি আছে তা পূরণেও বইটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষ্য হিসেবে শহীদজায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী লিখিত ও সম্পাদিত মূল বাংলা বইটি যে বিবেচিত হয়েছিল সেই প্রসঙ্গটিও ডা. দীপু মনির বক্তব্যে উঠে আসে।’

 

বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিল-এর চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী বলেন, ‘শহীদ ডা. আলীম চৌধুরীর সাথে বিলেতে তার ঘনিষ্ঠ সাহচার্যের স্মৃতি তুলে ধরেন। প্রবাসে বাঙালীদের বাঙালী জাতীয়তাবাদের চেতনায় সংগঠিত করায় শহীদ আলীম চৌধুরীর ভূমিকাও তার বক্তব্যে উঠে আসে।’

 

শহীদ কন্যা সাংসদ সদদ্য এ্যারোমা দত্ত এম.পি বলেন, 'শহীদজায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরীর এই বইটি লিখতে যে কি পরিমান কষ্ট হয়েছে তা আমি একটু হলেও অনুভব করতে পারি। আমকে যখন শহীদ ধীরেন্দ্র নাথ দত্তের উপর বাংলা একাডেমি থেকে বই লিখতে বলা হয়েছিল, কি যে কষ্ট তা বলে বোঝানো যাবেনা। যারা প্রথম সারি থেকে ভাষা আন্দোলনের মুহুর্ত থেকে এই দেশের জন্য কাজ করে শহীদ হয়েছেন, তাঁদের কি পরিমান যন্ত্রনা দিয়ে হত্যা করা হয়েছিল, তাঁদের সকলের উপর একটি সিরিজ প্রকাশ করা হোক।'

 

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মোঃ শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘তৎকালীন মেডিকেল এসোসিয়েশনের মহাসচিব হিসেবে বাংলাদেশের স্বাধিকার আন্দোলনে এবং স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য একটি জনমুখী স্বাস্থ্যনীতির রূপরেখা প্রণয়নে শহীদ ডা. আলীম চৌধুরীর অসামান্য অবদানের কথা উল্লেখ করেন।’

বইটির লেখিকা শহীদজায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী আশা প্রকাশ করেন যে, সামনে ইংরেজীতে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বইগুলো আরও ব্যাপকভাবে অনুবাদ করা হবে। কারণ শুধুমাত্র সেক্ষেত্রেই বিশ্ববাসী একাত্তরে পাকিস্তানিরা এদেশে যে বর্বরতা চালয়েছিল সে বিষয়ে জানতে পারবে। পাশাপাশি যুদ্ধ অপরাধীদের বিচার সম্পন্ন করা এবং রাজনৈতিক দল হসেবে জামায়াতে ইসলামের বিচারের উপর গুরুত্ব আরোপ করেন কারণ এই কাজগুলো যতদিন না সম্পন্ন হচ্ছে ততদিন দেশের ভিতরে সাম্প্রদায়িক উস্কানী আর দেশে দেশে গনহত্যার মতো ঘটনাগুলো ঘটতেই থাকবে।

 

৭১-এর গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জনের ক্ষেত্রে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির নেত্রী শহীদজায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরীর ইংরেজি বই গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে উল্লেখ করে নির্মূল কমিটির সভাপতি লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বরেণ্য বুদ্ধিজীবী ডাঃ আলিম চৌধুরীর সহধর্মিণী শিক্ষাবিদ শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী গত ৫০ বছর ধরে ’৭১-এর গণহত্যাকারী ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে রাজপথে আন্দোলন ও সংগ্রাম করছেন। ১৯৯৪ সালে নির্মূল কমিটির প্রতিষ্ঠাতা আহবায়ক শহীদজননী জাহানারা ইমামের অকালমৃত্যুর পর আন্দোলনে নেতৃত্বের শূন্যতা পূরণ করার ক্ষেত্রে শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী অসামান্য অবদান রেখেছেন। ডাঃ আলিম চৌধুরী সম্পর্কে তাঁর মূল গ্রন্থটি নির্মূল কমিটি প্রতিষ্ঠার আগে প্রকাশিত হয়েছিল। পাকিস্তানের কলোনিকালে প্রগতিশীল বুদ্ধিজীবী ও সংগঠক ডাঃ আলিম চৌধুরীর যোগ্য সহধর্মিণী হিসেবে শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ ৩০ লক্ষ শহীদের স্বপ্নের বাংলাদেশ নির্মাণে যে অবদান রেখেছেন তার উল্লেখ এই গ্রন্থে নেই। আমরা আশা করব এই গ্রন্থের ২য় খন্ডে আমাদের নেত্রী শহীদজায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী তাঁর সেই সংগ্রামের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করবেন। যার প্রেরণা তিনি পেয়েছেন শহীদ ডাঃ আলিম চৌধুরীর নিকট থেকে।’

 

সম্প্রীতি বাংলাদেশ-এর আহবায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, এদেশটি মুক্তিযুদ্ধের দেশ, বাঙালি জাতিয়তাবাদের দেশ।  বাংলাদেশের অনেক বই পূর্বে ইংরেজীতে অনবাদ করা হয়েছে, কিন্তু শহীদজায়াব শ্যামলী নাসরিন চৌধুরীর এই বইটি বাংলা বা ইংরেজীতে পড়তে খুব বেশি কষ্টের প্রয়োজন হয় না। তিনি জানান, তার সংগঠন সম্প্রীতি বাংলাদেশ এর পক্ষ থেকে সামনে এ ধরনের বই অনুবাদের উদ্যোগ নেয়া হবে, কারণ এইটি আমাদের জাতীয় দায়।

 

নির্মূল কমিটির সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী মুকুল তার বক্তব্যে বইটির ইংরেজি সংস্করণের গুরুত্ব তুলে বলেন, ‘একাত্তরের গণহত্যা কিংবা নৃশংসতার বিষয়টি আজও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পূর্ণাঙ্গভাবে উঠে আসেনি। কাজেই বইটির ইংরেজি রূপান্তরের মধ্য দিয়ে গণহত্যার বিষয়টি বিস্তৃত পরিসরে পাঠকদের কাছে পৌঁছতে পারবে। গত কয়েক দশকে মুক্তিযুদ্ধের অনেক ধরনের ‘ন্যারেটিভ’ তৈরি হলেও এই বইটি বুদ্ধিজীবী হত্যাকান্ড নিয়ে প্রত্যক্ষদর্শীর অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে রচিত এক ঐতিহাসিক দলিল। অনাবাসী তরুণ প্রজন্মের জন্য শ্যামলী নাসরীন চৌধুরীর এই বইটির ইংরেজি অনুবাদ একটি অসামান্য কাজ হয়ে থাকলো।’ ইংরেজি ভাষায় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রকাশনার অপ্রতুলতার বিষয়টি উল্লেখ করে বাতিঘর প্রকাশন-এর এই উদ্যোগকে অভিনন্দন জানান তিনি।

 

অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন  বইটির অনুবাদক ফারাহ নাজ, খাদিজা রহমান, বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র ইউকে এবং জাফর আহমেদ রাশেদ, সিইও, বাতিঘর প্রকাশনী।

 


সিলেটভিউ২৪ডটকম/ডেস্ক/এসডি-৩০