সিলেট-ঢাকা রুটে তিনটি এয়ারলাইন্স ফ্লাইট চলাচল করে থাকে। এরমধ্যে রয়েছে সরকারি এয়ারলাইন্স বিমান বাংলাদেশসহ বেসরকারি এয়ারলাইন্স ইউএস বাংলা ও নভোএয়ার। সবচেয়ে কম মূল্যে আকাশ পথে সিলেট-ঢাকা ও ঢাকা-সিলেট যাতায়াত করা যায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে। এ এয়ারলাইন্সের সর্বনিম্ন ভাড়া ৩ হাজার ৫ শত টাকা আর বেসরকারি এয়ারলাইন্স দুটির ভাড়া কমপক্ষে ৪ হাজার ৫শত টাকা। এমতাবস্থায় সিলেটের লোকজন কম টাকায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স দিয়ে ঢাকায় যাতায়াত করেন। ফলে দিন দিন ইউএস বাংলা ও নভোএয়ারের যাত্রী সংখ্যা কমতে থাকে। এমন পরিস্থিতি বেসরকারি এ দুটি এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ বেধে বসে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলীর কাছে নিজেদের লস (ক্ষতি) কথা তুলে ধরেন। তাদের কথা শুনে জরুরি মিটিংয়ে বসেন বিমান প্রতিমন্ত্রী। তিনি বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষকে ইউএস বাংলা ও নভোএয়ার এয়ারলাইন্স-এর সমন্বয় করে ভাড়া নির্ধারণ করতে বলেন। ফলে বেসরকারি এ দুটি এয়ারলাইন্সের কারণে বাড়তে যাচ্ছে বিমান বাংলাদেশের ভাড়া। এতে সাধারণ যাত্রীরা বেসরকারি এয়ারলাইন্স কোম্পানির স্বার্থে বাড়তি ভাড়া দিতে যাচ্ছেন।

এমনটাই শুক্রবার (১২ আগস্ট) সকালে সিলেট এমএজি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ‘ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতা নিরসন’ নিয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী ইঙ্গিত করেছেন।


প্রতিমন্ত্রী বলেন- ‘আপনারা জানেন বিমান বাংলাদেশ ছাড়াও ইউএস বাংলা ও নভোএয়ার সিলেটে ফ্লাইট অপারেট করছে। কিন্তু বেসরকারি এয়ারলাইন্স দুটি অভিযোগ করে তাদের সঙ্গে বিমানের ভাড়া সমন্বয় করার দাবি জানান। পাশাপাশি কোনো এক মাসে নভোএয়ারের লস (ক্ষতি) ২০০ কোটি টাকা হয়েছে বলে জানান তারা। আমরা মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে ও ফ্লাইট চালু রাখতে দ্রুত একটি বৈঠক করি। বৈঠক শেষে বিমান বাংলাদেশকে বিমানের ভাড়া যাতে বেসরকারি বিমান সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে ভাড়া নির্ধারণ করতে বলেছি। যাতে বেসরকারি বিমান সংস্থাগুলো ঠিকে থাকতে পারে।’

সিলেট-নিউইয়র্কে সরাসরি ফ্লাইট চালু করার চিন্তা করছে সরকার। এমন তথ্য দিয়ে তিনি আরও বলেন- ‘আমরা ঢাকা থেকে সরাসরি টরেন্টো (কানাডা) ফ্লাইট চালু করেছি। গত পরশু দিন ২৯৭ জনের ক্যাপাসিটির এ বিমানের ৭৫ জনই ভারতের যাত্রী ছিলেন। এছাড়া আমরা নেপাল, ভুটান ও কলকাতার যাত্রী পেয়েছি। আমাদের প্রধানমন্ত্রী যে চিন্তা করেন সিলেট, কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম বিমানবন্দরকে যাতে রিজিওনাল হাব হিসেবে আমরা ব্যবহার করতে পারি। সেই চিন্তাভাবনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আমরা রানওয়ের ক্যাপাসিটি বৃদ্ধি করেছি। আর আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন করতে নতুন টার্মিনাল ভবনের কাজ চালু করেছি। আমরা আমরা এতদূর অগ্রসর হয়েছি যে- হয়তো কিছুদিনের মধ্যে সিলেট থেকে নিউইয়র্কে সরাসরি ফ্লাইট চালু করতে যাবো।’

আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের ভাড়া বৃদ্ধি প্রসঙ্গে মাহবুব আলী বলেন- ‘বিমানের ভাড়া সবসময় রিজনেবল। কিছুদিন আগে কোভিড পরবর্তী সময়ে বিপুল সংখ্যক লোক বিদেশে গেছেন। যার কারণে প্রত্যেকটা এয়ারলাইন্সেন চাহিদা বেশি। ফলে বিমানের ভাড়া বৃদ্ধি পেয়েছে। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে আমি প্রত্যেকটা দেশের রাষ্ট্রদূতদের নিয়ে বৈঠক করেছি। বৈঠক করে তাদের জানিয়েছি আমাদের লোকজন খুব কষ্টে করে বিদেশে যায়। যে হারে ভাড়া নেওয়া হচ্ছে সেভাবে মানন সহি নয়। তাই বিমানের ভাড়া কমিয়ে আনতে আহ্বান করেছি।’

শাহজালাল বিমানবন্দরের নির্মিতব্য টার্মিনালের কাজ শেষ হলে বিমানের ভাড়া কমার আশা প্রকাশ করে মন্ত্রী বলেন- ‘এখন আমাদের দেশে সামান্য বিমান ফ্লাইট অপারেট করছে। এজন্য বিমান যাত্রীদের ভাড়া বেশি দিতে হচ্ছে। তবে যাত্রীদের সুবিধার কথা চিন্তা করে ও বিমান ভাড়া কমিয়ে আনতে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নতুন টার্মিনাল নির্মাণ করা হচ্ছে। এ টার্মিনালের কাজ শেষ হলে নতুন করে অনেক এয়ারলাইন্স ফ্লাইট অপারেট করবে। ফলে একটা প্রতিযোগিতা সৃষ্টি হবে। এতে করে বিমানের ভাড়াও কমবে। আমরা সে লক্ষে কাজ করছি। যাতে আমাদের মানুষ রিজেনেবল ও কম টাকা ভাড়া দিয়ে বিদেশে যেতে পারেন।

এসময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন এমপি, বিমান মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোকাম্মেল হোসেন, সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার ড. মোশাররফ হোসেন, সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) সাবেক সাংসদ শফিকুর রহমান চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দীন খান, সিলেট মহনগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।


সিলেটভিউ২৪ডটকম/মুন্না