সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে জমে উঠেছে পূজার আমেজ।পূজাকে কেন্দ্র করে মণ্ডপ গুলোর আশেপাশে জমে উঠেছে মেলা। রাস্তার দুই পাশে গড়ে উঠেছে অসংখ্য খেলনার দোকান। ঘুরতে আসা শিশুদের আকর্ষণও থাকে সেগুলোর প্রতি। এই অস্থায়ী দোকানগুলোর মধ্যে আকর্ষণ কাড়ছে মাটির তৈরি খেলনা।

 


সরেজমিনে দেখা গেছে- পৌর সদরের পূজা মণ্ডপ গুলোকে ঘিরে  জমে উঠেছে মেলা রাস্তার দুই পাশে গড়ে উঠেছে অসংখ্য দোকান। পূজায় আসা শিশু ও কিশোর-কিশোরী কিনছেন নানা জিনিস।এর মধ্যে হারনপুর এলাকার রাস্তার পাশে দুর্গাপূজার বাজারে বিক্রির জন্য পোড়া মাটির তৈরি খেলনায় দোকান নিয়ে বসেছে এক দোকানি। মাটির নানা খেলনা সাজিয়ে বসেছেন সেই দোকানি। রয়েছে নানান রঙের মাটির পুতুল, কলস, থালা-বাসন, বাঘ, হাতি,মাছ, গরু, ঢেগ,মাটির ব্যাংকসহ বিভিন্ন রকম পাখি। তাকে ঘিরে মাটির তৈরি জিনিস কিনতে ভিড় করছে শিশুরা। মাটির পুতুল প্রতি পিস ৫ থেকে ১০ টাকা, ঢেগ সরা ১৫ টাকা, গরু ১০ থেকে ২০ টাকা, কলস ৪০ থেকে ৬০ টাকা, মাটির বাঘ ১০০ থেকে ১৫০ টাকা, রান্না করার সেট ১০০ টাকা, মাটির ব্যাংক ৩০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি করছেন।

 

মাটির খেলনা বিক্রেতা দেবতুষ পাল বলেন- ‘ছোট ছোট সোনামণিদের মা-বাবা এসেছে মেলায়। একটা জিনিস আমার খুব ভালো লাগে, ছোট শিশুদের মা-বাবা অন্য জিনিসপত্র কিনতে চাচ্ছে কিন্তু শিশুরা জোর করে নিয়ে আসছে মাটির খেলনার দোকানে।’

 

তিনি আরও বলেন- আমাদের বাপ, দাদার আদি পেশা এখন প্রায় ছাড়ার পথে। আমি কৃষি কাজ করি এখন কাজ না থাকায় মাটির তৈরি খেলনা কিনে দোকান নিয়ে বসেছি। আমার বাড়ী ভাটিপাড়া ইউনিয়নের শরীফপুর গ্রামে আমরা বংশগত ভাবে পাল সম্প্রদায়। আমাদের পাল পাড়ায় ৯৫ টি পরিবারের মধ্যে এখন ৬/৭ টি পরিবার মাটির  জিনিস তৈরি করে।

 


পুতুল নিতে আসা শিশু সৌরভ এর মা নমিতা তালুকদার বলেন- স্মৃতির পাতায় কত ছবি ভেসে উঠে। আমি ছোটবেলা থেকে খুব পুতুল খেলাপ্রিয় বাচ্চা ছিলাম। খুব অল্প বয়সে রান্না-বাটি খেলা খুব প্রিয় ছিল। যেখানেই যেতাম, কাছাকাছি বয়সী সবার সাথে খেলায় মেতে উঠতাম। আমাদের ছেলেবেলা তো গ্রামে কেটেছে, তাই আমরা মাটির হাঁড়ি-পাতিল, চুলা দিয়েই খেলা করতাম। সেই মাটির বানানো হাঁড়ি-পাতিল দিয়ে খেলেই দিব্যি কাটিয়েছি ছেলেবেলা।

 

ক্রেতা পপি মজুমদার বলেন- আমার মেয়ে  মাটির খেলনা কিনতে আমাকে টেনে নিয়ে আসছে মাটির খেলনার দোকানে। আমার ভালোই লাগছে। আমার ছেলের জন্য বাংলার ঐতিহ্য মাটির খেলনা কিনেছি।

 

দিরাই উপজেলা খেলাঘরের সভাপতি সুধাসিন্ধু রানা বলেন- মাটির খেলনা বাঙালির অন্যতম প্রাচীন ঘরোয়া শিল্পকর্ম। সুপ্রাচীন কাল থেকেই বাংলার ঘরে ঘরে মাটির খেলনা তৈরি করা হতো। মায়েরা বালিকাদের খেলার জন্য মাটির পুতুল তৈরি করে দিতেন। 

 

তিনি বলেন- আমার কাছে মাটির জিনিসপত্র ভালো লাগে। আমি আমার বাসা মাটির জিনিসপত্র দিয়ে সাজিয়ে রেখেছি। আজ অনেক দিন পর মাটির ছোট ছোট খেলনা দেখে খুব ভালো লেগেছে।

 


সিলেটভিউ২৪ডটকম/হিল্লোল/মুন্না