মেহেদী হাসান অমি ওরফে রাফি। বাড়ি সিলেটের আম্বরখানায়। ২৪ বছর বয়সী এই তরুণ আনসার আল ইসলামে রাফি নামেই বেশি পরিচিত। 

শুরুতে তিনি হিযবুত তাহরিরের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এরপর আনসারুল্লাহ বাংলা টিমে যোগ দেন, যা পরবর্তীতে আনসার আল ইসলাম নাম ধারণ করে। খবর ‘নিউজবাংলা২৪’র।


গত ২০ নভেম্বর ঢাকায় আদালতের সামনে থেকে দুই ‘জঙ্গি’ ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় সিলেটের এই রাফিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পরে তাকে ৭ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। 

সিটিটিসির কর্মকর্তারা জানান, রাফি ২০০৯ সাল থেকে হিযবুত তাহরিরের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্রে যুক্ত থাকার অভিযোগে ২০১০ সালে গ্রেপ্তার হন তিনি। ২০১১ সালে জামিনে বের হয়ে আনসার আল ইসলামের ‘আদর্শে’ উজ্জীবিত হন এবং এই সংগঠনের আরেক নেতার সঙ্গে পরিচয়ের সুবাধে ২০১৩ সালে আনসার আল ইসলামে যোগ দেন।

তখন সংগঠনের নাম ছিল আনসারুল্লাহ বাংলা টিম-এবিটি। অল্প কিছুদিনের মধ্যে নিজেকে দক্ষ সংগঠক হিসেবে প্রমাণ করেন রাফি। সে সুবাধে জঙ্গি সংগঠনটির শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের নজরে আসেন।

সিটিটিসি জানায়, সাংগঠনিক দক্ষতার পরিচয় দেয়ায় রাফিকে সিলেট অঞ্চলের দাওয়া বিভাগের প্রধান করা হয়। তিনি সিলেট অঞ্চল থেকে বেশ কিছু সদস্যকে দলে টানেন। সংগঠনটির মূল ব্যক্তি বরখাস্তকৃত মেজর মৌলভীবাজারের জিয়ার নজরেও আসেন তিনি। মেজর জিয়াই রাফিকে সংগঠনের আশকারি বিভাগে (সামরিক শাখা) নিয়োগ দেন।

রাফির মাধ্যমেই আশকারি বিভাগে বেশ কিছু সদস্য নিয়োগ দেয়া হয়। সুনামগঞ্জের মাইনুল হাসান শামিমকেও আশকারি বিভাগে নিয়ে আসেন রাফি। ঢাকা ‘জঙ্গি’ ছিনতাই মামলার আরেক আসামি সায়মুম শাহরিয়ারকেও আশকারি বিভাগে নিয়ে আসেন তিনি।

সিটিটিসি সূত্রে জানা যায়, রাফি ২০১৭ সালে জামিনে বের হওয়ার পর থেকে নিয়মিত হাজিরা দিচ্ছিলেন আদালতে। ২০ নভেম্বর দুই জঙ্গি ছিনিয়ে নেয়ার আগে ১ নভেম্বরও তিনি আদালতে হাজিরা দেন। আদালতে হাজিরা দেয়ার সুবাধে কারাবন্দি জঙ্গিদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ হতো তার। আর এই রাফির মাধ্যমেই জঙ্গি ছিনিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা সম্পর্কে অবগত হয় কারাবন্দি চারজন।

দুই জঙ্গি ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনার দিনও আদালতে হাজিরা দিতে এসেছিলেন রাফি। শুনানি শেষে আদালত চত্বর থেকে বেরিয়ে যান তিনি। এর আগে চার জঙ্গির হাতে তুলে দেন বেশকিছু নগদ টাকা। পালিয়ে যাওয়ার পর তাৎক্ষণিক ব্যয় নির্বাহের জন্যই তাদেরকে ওই টাকা দেয়া হয়।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মইনুল হাসান শামীম ওরফে সামির ওরফে ইমরান এবং আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিব ওরফে সাজিদ ওরফে শাহাবকে ছিনিয়ে নেয়ার মামলায় রাফিকে বুধবার যাত্রাবাড়ী থেকে গ্রেপ্তার করে সিটিটিসি। 

সিটিটিসি প্রধান মো. আসাদুজ্জামান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘২০১৬ সালে আনসার আল ইসলাম বেশ কিছু ঘটনা ঘটায়। সিটিটিসি অভিযান শুরুর পর রাজধানীর মোহাম্মদপুর ও বাড্ডায় তাদের বড় আস্তানার সন্ধান পায়। সেই আস্তানায় অভিযান চালাতে গিয়ে রাফির নাম উঠে আসে। ওই সময়ে সিলেট থেকে তাকে সিটিটিসি গ্রেপ্তার করে। ২০১৭ সালের মাঝামাঝি সময়ে জেল থেকে জামিনে বের হন তিনি। যে মামলার হাজিরা দিতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জঙ্গিদের আদালতে আনা হয় সেই মামলায় রাফিও আসামি। ২০১৭ সালে জামিন পাওয়ার পর থেকে তিনি নিয়মিত হাজিরা দিয়ে আসছিলেন। জামিন পাওয়ার পরও এই সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিল।

আসাদুজ্জামান আরও বলেন, ‘জঙ্গিদের ছিনিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা রাফির মাধ্যমেই কারাবন্দি জঙ্গিদের জানিয়ে দেয়া হয়। রাফি নিয়মিত আদালতে হাজিরা দিতেন। অপরদিকে কারাবন্দি জঙ্গিদের মামলার হাজিরা ও শুনানির জন্য আদালতে আনা হতো। এই সময়ে রাফির সঙ্গে বন্দি জঙ্গিদের  পরিচিতি গড়ে ওঠে। দুই গ্রুপের মধ্যে রাফি সমন্বয় করতেন। তিনি বাইরের থেকে সংগঠনের ম্যাসেজগুলো কারাবন্দি জঙ্গিদের দিতেন। অপরদিকে বন্দি জঙ্গিদের তথ্য বাইরের জঙ্গিদের এনে দিতেন। তারই অংশ হিসেবে ২০ তারিখের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাটি ঘটে।


সিলেটভিউ২৪ডটকম / ডালিম