বসন্ত এলেই প্রকৃতির উজ্জ্বলতায় উজ্জীবিত হয় চারপাশের বৃক্ষরাজি।বাতাসে আরামদায়ক আমেজে শামিয়ানা হয় মানবমনের নানা অলি-গলি। বসন্তকে বলা হয় ঋতুরাজ। বসন্তের স্নিগ্ধ দুপুরে দমকা হাওয়ার ঝরে পড়া, বৃক্ষের শেষ পাতায় যে বন্দনা প্রকৃতির মুখকে স্পর্শ করে, তার অপরূপ সৌন্দর্য্যের বশীভূত হয়ে যুগে যুগে কতো কবি সাহিত্যিকরা তাদের কাব্যজননীকে সমৃদ্ধ করেছেন।
তেমনি রবীন্দ্রনাথ তার গীতবিতান কাব্যে "মায়ার খেলা" নামক কবিতাটিতে লিখেছেন—
আহা, আজি এ বসন্তে এত ফুল ফুটে,
এত বাঁশি বাজে, এত পাখি গায়,
সখীর হৃদয় কুসুম-কোমল--
কার অনাদরে আজি ঝরে যায়।
বসন্তের প্রাকৃতিক প্রতিচ্ছবি পূর্ণরূপে সজ্জ্বিত করে বিভিন্ন ধরণের ফুল। কৃষ্ণচূড়া, চাঁপা বা ‘চম্পক’, কনকচাঁপা, কাঁঠাল চাঁপা, দোলনচাঁপা, নয়নতারা, নাগেশ্বর, পলাশ, বেলী ফুল। তাছাড়া শাল, শিমুল, স্বর্ণশিমূল, ক্যামেলিয়া, মণিমালা, মহুয়া, মাদার, মুচকুন্দ ইত্যাদি ফুল ফুটতে দেখা যায়।
বসন্তে যেনো কোকিলের ডাকে মিশে যায় শিশুর সব দুরন্তপনা। ধুলিমাখা পথের পাশে বনফুলের বাগানে লুকোচুরি খেলে অলির গুঞ্জন। আমের বউলে মৌমাছির অবসাদ কখনো কখনো জীবনানন্দের কবিতার ন্যায় মরে পরে থাকে ঘাসের উপর।
বসন্তবাউরি, টিয়া, ভীমরাজ, শালিকসহ অসংখ্য পাখির কলরবে মুখরিত হয়ে পথঘাটে সময়ের আওয়াজে ফুটিয়ে তুলা বসন্তের নবগান চেতনতাকে স্পষ্ট করে শীষকাগজের মতো। জীর্ণদিনের আবছায়াকে দূরে ঠেলে দূর্বার নূতনত্বে সবুজের খোলা হাওয়া দিক পাল্টায় বারবার।
বসন্ত আমাদের কালবৈশাখে মাথা না নোয়াতে শেখায়, বসন্ত আমাদের ভাষা-বুলির স্বাভাবিক স্বাধীনতাকে বর্ধিত করে অগ্রগতির পথে দৃঢ়তা বয়ে আনে কেননা এই ফাল্গুনেই রক্তমাখা লাশের বিনিময়ে অর্জিত হয় বাংলামায়ের প্রথম জবানি, আমাদের ভাষার স্বীকৃতি।
প্রতিবছরের মতো এবছরও আদি ও অকৃত্রিম হৃদয়ের ছোঁয়ায় বসন্তকে বরণ করতে প্রস্তুতি নিয়েছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সাংস্কৃতিক সংগঠন, পৃথক পৃথক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে তারা। মঙ্গলবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) সিলেটে এমসি কলেজ মোহনা সংগঠনের উদ্যোগে নেওয়া হয়েছে বসন্তকে বরণ করার জন্য মোহনা বসন্ত উৎসব।
তাদের রয়েছে দিনব্যাপী নানা আয়োজন, পরতে পরতে থাকছে বসন্তকে আবাহন আর উপভোগের নানা উপকরণ।
সিলেটভিউ২৪ডটকম/পল্লব-৩