শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তঃবিভাগ ফুটবল প্রতিযোগিতায় দুই বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে।
বৃহস্পতিবার বিকালে পরিসংখ্যান বিভাগ ও লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে এ ঘটনা ঘটে বলে জানান প্রক্টর অধ্যাপক কামরুজ্জামান চৌধুরী।
আহতরা হলেন- পরিসংখ্যান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী অনন্য ও প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী রাজি নামে দুজন আহত হয়েছে। প্রথমে তাদেরকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেলে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয় এবং পরবর্তীতে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেলে পাঠানো হয়েছে।
ডাক্তারের বরাত দিয়ে প্রক্টরিয়াল বডির এক সদস্য জানান, তাদের অবস্থা ভালো আছে। মাথায় ও হাতে তারা আঘাত পেয়েছে।
অপর দিকে লোক প্রশাসনের বিভাগের তিনজন আহত হয়েছেন।
আহতরা হলেন- ওই বিভাগের ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী সুজাত আলী, ২০১৮-১৯ সেশনের বেনজির আহমেদ নাহিদ। আরেকজনের নামের তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায় নি। তারা বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন মাউন্ড এডোরা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
শিক্ষার্থীরা জানান, বৃহস্পতিবার বিকালে পরিসংখ্যান বিভাগ ও লোক প্রশাসন বিভাগের মধ্যে সেমি ফাইনাল খেলা চলছিল।
খেলায় কোনো পক্ষরেই গোল না হওয়াতে শেষে টাই-ব্রেকার হয়। এক পর্যায়ে পরিসংখ্যান বিভাগ জয়লাভ করে। টাই ব্রেকারে লোক প্রশাসনের ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী সুজাত শেষ শুট করেন।
শুট করে ফেরার পথে সুজাতের গায়ে ধাক্কা দেন পরিসংখান বিভাগের একজন খেলোয়াড়।
এতে সুজাত মাঠিতে পড়ে গেলে, মাটি থেকে উঠে পরিসংখ্যানের শিক্ষার্থীদের কাছে জানতে চান 'আমাকে মারলি কেন'।
এসময় উভয় বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে হট্রগোল বেঁধে যায়। হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। পরে দু'পক্ষকে আলাদা করে দেয় প্রক্টরিয়াল বডি ও উপস্থিত শিক্ষকরা।
শিক্ষার্থীরা আরও জানান, দুই পক্ষকে আলাদা করে দেয়ার পর লোকপ্রশাসন বিভাগের আমিনুল ইসলাম তামিম, বেনজির আহমেদ নাহিদসহ কয়েকজন শিক্ষার্থীরা হাতে বাঁশ নিয়ে পরিসংখ্যানের শিক্ষার্থীদেরকে ধাওয়া দেন।
এসময় দু'পক্ষের মধ্যে আবারো হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর কামরুজ্জামান চৌধুরীও শারীরিকভাবে হেনস্তার শিকার হয়েছেন বলে শিক্ষার্থীরা জানান।
এ বিষয়ে লোকপ্রশাসন বিভাগের ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী সুজাত আলী বলেন, “আমি যখন শেষ শুট করে ফিরছিলাম তখন পরিসংখ্যানের বিভাগের ইয়াসির নামের একজন আমাকে দেখে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করতে থাকে। তখন আমি হাত দিয়ে সরিয়ে দিতে চেষ্টা করি। তখন অঙ্কন, জুয়েলসহ কয়েকজন আমাকে ঘিরে ধরে। কিল ঘুষি মারতে থাকে। আমি মাটিতে পড়ে যাই। আমাকে মেরে আহত করে তারা। আমি এখন হাসপাতালে আছি চিকিৎসা নিচ্ছি।”
অপরদিকে, পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থী জুয়েল সরকার বলেন, ‘আমি প্রথম ঘটনায় ছিলাম না। পরে হাতাহাতির ঘটনা দেখে সেখানে গেছি। প্রক্টর সহ অনেক শিক্ষকরা ছিল। তারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। আমি কোন মারধরের মধ্যে ছিলাম না।’
হাতে বাঁশ নিয়ে পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থীদেরকে ধাওয়া করার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন লোক প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী আমিনুল ইসলাম তামিম। তিনি বলেন, 'আমার হাতে ওই সময় কোনো বাঁশ ছিল না।'
এ বিষয়ে লোকপ্রশাসন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. আশরাফ সিদ্দিকী বলেন, ‘খেলা শেষে দুই বিভাগের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। সর্বশেষ টাইব্রেকার শুট করে সুজাত আলী। সে শুট করে চলে আসছিল।’
তখন পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থীরা বিজয় উদযাপন করতে গিয়ে তাকে মধ্যখানে ফেলে এলোপাতারি মারধর করে। পরে দুই বিভাগের মধ্যকার হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।
এছাড়া তিনি বলেন, ‘এ ঘটনায় লোকপ্রশাসন বিভাগের সুজাত আলীসহ তিনজনকে মাউন্ট এডোরা হাসপাতালে নিয়ে এসেছি। তবে দুইজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিলেও ভর্তি করা লাগবে না।’
এ ব্যাপারে জানতে পরিসংখ্যান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. রহমত আলীকে কল দিলে মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়।
তবে পরিসংখ্যান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সহাকরী প্রক্টর মির্জা নাজমুল হাসান বলেন, ‘আমরা ছিলাম সেখানে। সেখানে শিক্ষার্থীদের মধ্যে হাতাহাতি হয়েছে। আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছি।’
তিনি বলেন, এতে দু'জন আহত হয়েছে পরিসংখ্যানের। তাদেরকে ওসমানীতে নেওয়া হয়েছে। সিটিস্ক্যান করা হয়েছে তাদের।
ডাক্তারের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, আহত দুজনের অবস্থা ভালো আছে।
এ বিষয়ে প্রক্টর কামরুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ‘খেলা শেষে দুই বিভাগের শিক্ষার্থীরা হঠাৎ হাতাহাতিতে জড়ায়। প্রক্টরিয়াল বডি সেখানে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এখন পরিবেশ শান্ত আছে।’
আহতদেরকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এ ব্যাপারে তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদেরকে শাস্তির আওতায় আনা হবে।
শারীরিকভাবে হেনস্তার শিকার হয়েছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ''তেমন কিছু না।
একজন শিক্ষার্থী বাঁশ নিয়ে যখন অন্য শিক্ষার্থীদের মারতে উদ্ধত হয়েছিল, তখন তাকে আটকাতে গিয়ে তিনি সামান্য ধাক্কাধাক্কি শিকার হয়েছেন বলে জানিয়েছেন।
'গুরুতরভাবে তিনি আহত হননি।
পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থীদেরকে বাঁশ নিয়ে ধাওয়া করার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন লোক প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী আমিনুল ইসলাম তামিম।
তিনি বলেন, 'আমার হাতে ওই সময় কোনো বাঁশ ছিল না।'
সিলেটভিউ২৪ডটকম/নোমান/এসডি-৩৭