২০২০ সালের ৫ এপ্রিল সন্ধ্যা। পুরো সিলেট থমথমে। সবার মাঝে এক অজানা আতঙ্ক। কী হচ্ছে, কী হবে। দেশে প্রবেশ করে ফেলেছে ‘মৃত্যুদূত’। সিলেটে এই আসলে বলে। উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মাত্রা বাড়িয়ে দিয়ে সিলেটে শেষপর্যন্ত প্রবেশ করেই ফেললো সেই ‘দানব’। তিন বছর আগের এই ৫ এপ্রিল সন্ধ্যায় সিলেটজুড়ে ছড়িয়ে পড়লো চরম আতঙ্কের খবর- সিলেটেও শনাক্ত হয়েছে মৃত্যুবাহী রোগ কোভিড-১৯ (করোনা)।
ওই বছরের ৫ এপ্রিল করোনা শনাক্তের সরকারি রিপোর্টে দেখা যায়- করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত হয়েছেন সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিনের সহকারী অধ্যাপক মঈন উদ্দীন। তাঁর বাসা ছিলো সিলেট মহানগরের হাউজিং এস্টেট এলাকায়। ওই দিন রাতেই পুরো এলাকা লকডাউন করা হয়।
ডা. মঈনকে চিকিৎসকদের পরামর্শে প্রথমে নিজ বাসায় আইসোলেশনে রাখা হয়। অবস্থার অবনতি ঘটলে ৭ এপ্রিল তাঁকে সিলেটের শহীদ ডা. শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে ভর্তি করা হয়। কিন্তু অবস্থার অবনতি ঘটলে সেখান থেকে পরে তাঁকে ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। ১৫ তিনি সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন ডা. মঈন।
এরপর এ ৩ বছরে প্রাণঘাতি করোনা একে একে কেড়ে নেয় সিলেটের বিভিন্ন রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, ক্রীড়াঙ্গনের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গসহ হাজারের অধিক লোকের প্রাণ। করোনায় মারা যান সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরান, সিলেট-৩ আসনের সাবেক সাংসদ মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী কয়েস, বিএনপি নেতা এম এ হকসহ খ্যাতিমান ব্যক্তিরা।
২০২০ ও ২০২১ সালের প্রায় পুরোটাই করোনার দাপট ছিলো সিলেটে। অবস্থা বুঝে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন এলাকা লকডাউন করা হয়। এছাড়াও পুরো দেশের নিষেধাজ্ঞার সঙ্গেও লকডাউন থাকে সিলেট বিভাগ। এসময় সরকারি নির্দেশে হ্যান্ড স্যানিটাইজেশন ও মাস্ক পরা ছিলো বাধ্যতামূলক। করোনার নিষেধাজ্ঞার কারণে বিভিন্ন সময় দিনের পর দিন বন্ধ রাখা হয় নিত্যপ্রয়োজনীয় ও ওষুধের দোকান ছাড়া সিলেটের সকল বিপনীবিতান এবং ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। এতে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হন সিলেটের ব্যবসায়ীরা। এই দুই বছরের ৪টি ঈদ খরার মধ্য দিয়ে কাটে সিলেটের ব্যবসায়ীদের।
অবশেষে ২০২০ সালে কিছুটা স্বস্তি দেয় করোনা। সরকারের নির্দেশে সিলেটে সব বয়েসি মানুষকে ভ্যাকসিনের আওতায় নিয়ে আসায় কমতে থাকে প্রাণঘাতি এ ভাইরাসের দাপট। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন- সতর্কতা অবলম্বন না করলে ফের আসতে পারে করোনার ঢেউ। তাই হ্যান্ড স্যানিটাইজেশন ও মাস্ক পরার নির্দেশনা রেখে দিয়েছে স্বাস্থ্যবিভাগ।
শুরু থেকে এ পর্যন্ত সিলেট বিভাগে করোনায় মারা গেছেন মোট ১ হাজার ২৭৩ জন। এর মধ্যে সিলেট জেলায় ৯৫৪, সুনামগঞ্জে ৭৫, হবিগঞ্জে ৪৯ ও মৌলভীবাজারে ৭২ মারা গেছেন। এছাড়াও সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিভিন্ন স্থানের আরও ১২৩ জন মারা গেছেন।
অপরদিকে, এ পর্যন্ত সিলেট বিভাগে মোট করোনাক্রান্ত হয়েছেন ৬৮ হাজার ২৬৩ জন। এর মধ্যে সুস্থ হয়ে নবজীবন পেয়েছেন ৬৬ হাজার ৭৪৯ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সিলেট বিভাগীয় পরিচালক ডা. হিমাংশু লাল রায় বুধবার (৫ এপ্রিল) বিকেলে সিলেটভিউ’কে বলেন, আশার কথা যে সিলেটে এখন করোনা শূন্যের কোটায়। তবে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। সরকারি নির্দেশনা যা ছিলো তা এখনও বলবৎ আছে।
সিলেটভিউ২৪ডটকম / ডালিম / এসডি-০৬