কাজী জালাল উদ্দিন বহুমুখী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে গত ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস ও ৯ এপ্রিল বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের সিলেবাস বণ্টনকে কেন্দ্র করে স্কুলের অব্যাহতিপ্রাপ্ত সম্পূর্ণ অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগপ্রাপ্ত খণ্ডকালীন শিক্ষক রুনা সুলতানা ও মাহমুদা আক্তার সুমি বহিরাগতদেরকে নিয়ে অনুপ্রবেশ করলে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে করণীয় নির্ধারণের জন্য স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির একটি জরুরি সভা ১০ এপ্রিল সোমবার বিকাল দুই ঘটিকার সময় বিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠিত হয়। 

 


উল্লেখ্য, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বিদ্যালয়ে এনটিআরসি কর্তৃক ০২ (দুই) জন শিক্ষক নিয়োগের জন্য সুপারিশ প্রাপ্ত হওয়ায় এবং স্টাপিং প্যাটার্ন অনুযায়ী শূন্য পদ না থাকায় সম্পূর্ণ অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগপ্রাপ্ত খণ্ডকালীন দুইজন শিক্ষক অতিরিক্ত শিক্ষক হিসেবে গণ্য হওয়ায় ম্যানেজিং কমিটির গত ২২ মার্চ ২০২৩ তারিখের সভার ১২ ও ১৩ নং সিদ্ধান্ত মোতাবেক খণ্ডকালীন শিক্ষক রুনা সুলতানা ও মাহমুদা আক্তার সুমিকে গত ১ এপ্রিল ২০২৩ তারিখ হতে অব্যাহতি দেওয়ার চিঠি দেওয়া হয়। 

এছাড়া বিদ্যালয়ের আর্থিক সংকুলান না থাকায় এবং উক্ত দুই শিক্ষিকার বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠানের নীতি—নৈতিকতা এবং শিক্ষকের আদর্শ পরিপন্থী অনৈতিক বিভিন্ন কার্যকলাপের সাথে জড়িত থাকায় তাদের কারণে প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে। একারণেই তাদেরকে স্থায়ীভাবে বিদ্যালয় থেকে অব্যাহতির চিঠি দেওয়া হয়। উক্ত শিক্ষকদ্বয় পিয়নবুকে স্বাক্ষর করে চিঠিও গ্রহণ করেন। কিন্তু গত ২৬ মার্চ ২০২৩ তারিখের মহান স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানচলাকালীন আনুমানিক ১১ ঘটিকার সময় স্থানীয় উগ্রপন্থী ও স্বার্থান্বেষী মহলের কয়েকজন বহিরাগতকে সাথে নিয়ে সম্পূর্ণ বেআইনি ও বিধি বহিভূর্তভাবে স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুল খালিকের অফিস কক্ষে অনধিকার প্র্রবেশ করে। এ সময় অব্যাহতিপ্রাপ্ত শিক্ষক রুনা সুলতানা ও মাহমুদা আক্তার সুমি বিদ্যালয়ের হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করতে চাইলে প্রধান শিক্ষক জানান, আজ গেজেটেড ছুটির দিন। তাই হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর দেওয়া যাবে না। এতে তারা প্রধান শিক্ষকের উপর চড়াও হয় এবং রুনা সুলতানা প্রধান শিক্ষকের পাঞ্জাবি ও গলায় ঝাপটে ধরে অশালীন অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে। 

এ সময় প্রধান শিক্ষকের পাঞ্জাবি ছিড়ে যায় এবং গলায় আঘাতপ্রাপ্ত হন। বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষকের সহায়তায় তিনি তাদের থেকে রক্ষা পান। শুধু তাই নয়, রুনা সুলতানা ও মাহমুদা আক্তার সুমির নিয়ে আসা বহিরাগত স্বার্থান্বেষী মহলের কয়েকজন সদস্য সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের কয়েকজন সিনিয়র নেতার নাম ভাঙিয়ে দুই শিক্ষিকাসহ সাতজন মিলে তাঁকে হেনস্থা—টানাহেঁচড়া করেন এবং পুলিশ সদস্যদের উপস্থিতিতে প্রাণনাশের হুমকি দেন। এরই প্রেক্ষিতে প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুল খালিক গত ২৭ মার্চ ২০২৩ তারিখে অব্যাহতিপ্রাপ্ত শিক্ষক রুনা সুলতানা, মাহমুদা আক্তার সুমি সহ ৭ জনের বিরুদ্ধে থানায় জিডি করেন। জিডি নং ২৭১৫। বিদ্যালয়ের উদ্ভূত পরিস্থিতি শান্ত রাখার জন্য এবং বিদ্যালয়ের স্বাভাবিক পরিবেশ স্থিতিশীল রাখতে ম্যানেজিং কমিটি সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের একজন সিনিয়র নেতার মধ্যস্থতায় এলাকার কিছু লোকজন নিয়ে একটি বৈঠক হয়। 

উক্ত বৈঠকে উপস্থিত এলাকার কিছু লোক উক্ত দুই শিক্ষিকার বিদ্যালয়ে পুনর্বহালের দাবি জানায়। কিন্তু কমিটি তাদেরকে সেই সুযোগ দিতে অপারগতা প্রকাশ করে। উল্লেখ্য, উক্ত বৈঠকের শুরুতে তারা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুল খালিককে সভা থেকে বের করার প্রস্তাব দেয় এবং তিনি এখান থেকে প্রস্থান করেন। এতে ম্যানেজিং কমিটি এবং শিক্ষকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। তবুও ম্যানেজিং কমিটি প্রধান শিক্ষকের অনুপস্থিতিতে পরিবেশ স্বাভাবিক রাখার জন্য প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা চালায়। কিন্তু উপস্থিত সভায় এলাকার বহিরাগত স্বার্থান্বষী মহলের কিছু লোকজন পরিবেশকে ঘোলাটে করে ফেলে এবং বিদ্যালয়ের পরিবেশ নষ্ট করার জন্য গভীর পাঁয়তারা শুরু করে। এরই সূত্র ধরে গত ৯ এপ্রিল বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের সিলেবাস বন্টনের সময় ওই দুই শিক্ষিকা রুনা সুলতানা ও মাহমুদা আক্তার সুমি উগ্রপন্থী বহিরাগত স্বার্থান্বেষী মহলের কয়েকজন লোককে সাথে নিয়ে জোরপূর্বক বিদ্যালয়ের ভেতরে প্রবেশ করে এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্কময় পরিবেশ সৃষ্টি করে। 

শুধু তাই নয়, তারা ওই উগ্রপন্থী ও স্বার্থান্বেষী মহলের লোকদেরকে সাথে নিয়ে বিদ্যালয়ের মেইন গেইট তালা মেরে শিক্ষার্থীদের প্রাণনাশের হুমকি দেয়। এছাড়া ম্যানেজিং কমিটির সদস্য রুনা বেগমের দশম শ্রেণিতে পড়—য়া শিক্ষার্থীকে বিদ্যালয়ে অনুপ্রবেশকারী বহিরাগত লোকজন টুকরো টুকরো করে কেটে ফেলার হুমকি দেয়। এতে শিক্ষার্থীরাও তাদের প্রতি চড়াও হয়ে ওঠে। শেষপর্যন্ত তারা বাধা ভেঙে বিদ্যালয়ের সামনে শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে। এখন শিক্ষক, কর্মচারী এবং শিক্ষার্থীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ম্যানেজিং কমিটি, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের দাবির প্রেক্ষিতে অব্যাহতিপ্রাপ্ত শিক্ষক রুনা সুলতানা ও মাহমুদা আক্তার সুমিকে বিদ্যালয় থেকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে। 

উল্লেখ্য যে, উক্ত সভায় অব্যাহতিপ্রাপ্ত ও অবাঞ্ছিত রুনা সুলতানা ও মাহমুদা আক্তার সুমির সাথে শিক্ষক—কর্মচারী ও অভিভাবক—শিক্ষার্থীদের প্রাতিষ্ঠানিক কোনো আর্থিক লেনদেন না করার জন্য ম্যানেজিং কমিটির পক্ষ থেকে বিশেষভাবে অনুরোধ করা হয়।

 

সিলেটভিউ২৪ডটকম/ নাজাত