জলবায়ু পরিবর্তন ও বিশেষ আবহওয়াগত অবস্থা এল নিনোর প্রভাবে ২০২৩ সালে বৈশ্বিক তাপমাত্রার রেকর্ড পরিমাণ বৃদ্ধির আশঙ্কা করছেন জলবায়ুবিদরা। যদি ২০২৩ সালে এমন নাও ঘটে, সেক্ষেত্রে ২০২৪ সালে এই বিপর্যয় দেখা দেওয়ার সমূহ শঙ্কা রয়েছে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।
 

স্প্যানিশ ভাষার দুই শব্দ ‘এল নিনো’ এবং ‘লা নিনা’র আক্ষরিক বাংলা অর্থছোটো খোকা ও ছোটো খুকী। তবে গত কয়েকশ’ বছর ধরে এই শব্দ দু’টি দিয়ে প্রশান্ত মহাসাগরের পূর্ব উপকূলের জলবায়ুগত অবস্থা বা চক্রকে বোঝানো হয়। এই চক্রের একটি অংশের নাম ‘এল নিনো’ অপরটির নাম ‘লা নিনা’।
 


কোনো কোনো বছর প্রশান্ত মহাসাগরের পূর্বাঞ্চলীয় দেশ পেরু, ইকুয়েডর ও চিলির উপকূলে উত্তর থেকে দক্ষিণ দিকে এক প্রকার উষ্ণ সমুদ্র স্রোতের প্রবাহ লক্ষ্য করা যায়। গড়ে প্রতি ৬ থেকে ৭ বছর অন্তর অন্তর বিশেষ এই ব্যাপারটি ঘটে।

এই উষ্ণ স্রোতের কারণে দক্ষিণ থেকে উত্তরমুখী শীতল সামুদ্রিক স্রোতের প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়, ফলে প্রশান্ত মহাসাগরের বিভিন্ন অঞ্চলের সমুদ্রে বাস্তুতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়, উদ্ভিদ প্ল্যাংকটনের পরিমাণ হ্রাস পায় এবং মাছের উৎপাদন কমে যায় এবং স্থলভাগের তাপমাত্রা বাড়ে।
 

এল নিনোর প্রভাবে প্রশাসন্ত মহাসাগরের উপকূলবর্তী বিস্তীর্ণ অঞ্চলে খরা বা অনাবৃষ্টি দেখা দেয়। কোনো কোনো অঞ্চলে অতিবর্ষণও ঘটে থাকে।

সাধারণত ২ থেকে ৪ বছর স্থায়ী হয় এল নিনো। তারপরই আসে ‘লা নিনা’। সে সময় এল নিনোর বিপরীত অবস্থা দেখে প্রশান্ত মহাসাগরের উপকূলবর্তী বিভিন্ন দেশ।
 

যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের জলবায়ু মডেলগুলোর তথ্য অনুযায়ী, গত তিন বছর প্রশান্ত মহাসাগরে লা নিনা আবহাওয়া প্যাটার্ন ছিল। ফলে জলবায়ু পরিবর্তনের চাপ থাকা সত্ত্বেও খানিকটা কম ছিল বৈশ্বিক তাপমাত্রা; কিন্তু চলতি বছরের মাঝামাঝি বা তার কিছু পর থেকে লা নিনা শেষ হবে, শুরু হবে এল নিনো প্যাটার্ন।
 

ইউরোপের দেশগুলোর জোট ইউরোপীয় ইউনিয়নের জলবায়ু গবেষণা সংস্থা কোপার্নিকাস ক্লাইমেট চেঞ্জ সার্ভিসের পরিচালক কার্লো বুয়োন্তেমপো রয়টার্সকে এর সম্পর্কে বলেন, ‘এল নিনো আবহাওয়া প্যাটার্নের সঙ্গে বৈশ্বিক রেকর্ডভাঙা তাপমাত্রার সম্পর্ক বেশ নিবিড়। ২০২৩ অথবা ’২৪— ঠিক কবে এল নিনো প্যাটার্ন ফিরে আসবে— তা এখনও নিশ্চিত নয়, তবে এটা যে আসছেই –তা নিশ্চিত।’
 

এর আগে সর্বোচ্চ বৈশ্বিক তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ২০১৬ সালে। সে সময় প্রশান্ত মহাসাগরে এল নিনো আবহাওয়া প্যাটার্ন বিদ্যমান ছিল। পরবর্তী বছরগুলোকে যদিও বিশ্বের উষ্ণতম বছর হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন জলবায়ুবিদরা, কিন্তু কোনো বছরই ২০১৬ সালের রেকর্ড ভাঙতে পারেনি।
 

তবে চলতি বছর যদি এল নিনো ফিরে আসে, সেক্ষেত্রে ২০১৬ সালের সেই রেকর্ড ভেঙে যাবে বলে মনে করছেন জলবায়ুবিদরা। যুক্তরাজ্যের লন্ডন ইম্পিরিয়াল কলেজের অধীন জলবায়ুবিদ্যা সংস্থা গ্র্যান্থাম ইনস্টিটিউটের জেষ্ঠ্য প্রভাষক ফ্রেডেরিক ওট্টো রয়টার্সকে বলেন, ‘যদি এল নিনো ফিরে আসে, তাহলে ২০২৩ সালেই ২০১৬ সালের রেকর্ড ভেঙে যাওয়ার সমূহ আশঙ্কা আছে। কারণ জীবাশ্ম জ্বালানির অতি ব্যবহারের কারণে প্রতিদিনই বাড়ছে বৈশ্বিক তাপমাত্রা।’

 

সিলটভিউ২৪ডটকম/ডেস্ক/এনটি


সূত্র : ঢাকা পোস্ট