ঘুরে ঘুরে এই প্রকৃতি কী কথা কয়?
সে বলে যায় প্রেমের মতন
আর কিছু নয়, আর কিছু নয়।

সত্যিই প্রেমের মতন পবিত্র আর কিছুই নয়। কবি শঙ্খ ঘোষ তাঁর ‘এই প্রকৃতি’ কবিতায় প্রকৃতি আমাদের কিভাবে প্রতিনিয়ত ভালোবেসে যাচ্ছে নিঃস্বার্থভাবে, সেটি দারুণভাবে চিত্রিত করেছেন। এই প্রকৃতিই আমাদের গুণগুনিয়ে গান শুনিয়ে যাচ্ছে প্রেমের মতো আর কিছুই নয়। অথচ আমরা আমাদের প্রকৃতির ডাকে সাড়া না দিয়ে তাঁর সাথে বৈরি আচরণ করছি। প্রকৃতির কোমল বুকে আঘাত করছি বারংবার। পৃথিবীর প্রতিটি ধর্মই প্রকৃতি ও পরিবেশ সংরক্ষণের বিষয়টিকে বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করেছে। প্রকৃতির প্রতিটি প্রাণের মধ্যে মানুষ মাত্র হলো একটি প্রাণ। এছাড়াও পৃথিবীতে কোটি কোটি প্রাণ রয়েছে যা আমাদের জীবন রক্ষায় সহযোগিতা করে। সুতরাং প্রত্যেকটি প্রাণের টিকে থাকার পরিবেশ আমাদেরই তৈরি করতে হবে। পৃথিবী টিকিয়ে রাখতে আন্তঃনির্ভরশীল প্রাণ বৈচিত্র্যময় প্রাণ ও প্রকৃতির প্রতি আমাদের শ্রদ্ধাশীল হতে হবে।


আমাদের একটি মাত্র নীল গ্রহ যেখানে এখন প্রায় ৮০০ কোটি মানুষ আর কোটি কোটি প্রানি গ্রহের বাসস্থান। সাথে আছে নদ নদী, পাহাড় পর্বত, সাগর, মরুভুমী, জলপ্রপাত। আমাদের ধরিত্রী আমাদের দিয়েছে জীবন ধারনের জন্য নির্মল বায়ু, পানি, খাদ্য সম্ভার, বসবাসের উপযোগি সব উপকরন। আজ আমাদের এই একটিমাত্র বাসযোগ্য ধরিত্রী জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে হুমকির মুখে। পরিবেশ বিপ্রর্যয়ের কারনে একদিকে যেমন তীব্র তাপদাহ আর আরেকদিকে প্রচন্ড শীত অথবা বন্যা, খরা, ঝড়-বৃষ্টি, জলোচ্ছাস বা দাবানলে আজকের ধরিত্রী জর্জরিত। এইগুলোর জন্য মানুষের কর্মকান্ড অনেকটা দায়ী। অতিলোভী মানুষ প্রকৃতির সম্পদের অপব্যবহার করেছে। পাহাড় পর্বত, বনাঞ্চল কেটে উজাড় করেছে। নদ-নদী, খাল-বিল, জলাশয় ভরাট করে আবাস্থল আর শিল্প কারখানা প্রতিষ্ঠা করেছে। বনাঞ্চল কমে যাওয়ায় বৃষ্টির পরিমান কমে যাচ্ছে আর তাপদাহ বাড়ছে। এই বছরের এপ্রিল মাসের তাপদাহ আমাদের মনে করিয়ে দিচ্ছে আমাদের ধরিত্রী দিন দিন উত্তপ্ত হচ্ছে।তীব্র তাপদাহে মানুষের শরীর ক্লান্ত হয়ে পড়ছে।

দেশের বিভিন্ন জলাশয়ে পানি সঙ্কট দেখা দিচ্ছে। জলবায়ু বিপর্যয় থেকে রক্ষা করার জন্য বৈশ্বিক তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস রাখতে হবে। এর উপর গেলে প্রানীকুলের বাচার সম্ভাবনা কম। জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত আন্তঃসরকারী প্যানেলের মুল্যায়ন রিপোর্টের চুড়ান্ত প্রতিবেদনে (Intergovernmental Panel on Climate Change) বলা হয়েছে জলবায়ু পরিবর্তন আর সংকটের মুখোমুখি মানবজাতি। গত দুইশ বছরের বিশ্বব্যাপী গরমের জন্য মানুষ দায়ী। আবহাওয়াতে কার্বন-ডাই অক্সাইডের ঘনত্ব অনেক বেশী যা আমাদের ধরিত্রীর জন্য, প্রানীকুলের জন্য মারাত্বক হুমকী। পৃথিবীর তাপমাত্রা কোন ভাবেই যেন ১.৫ ডিগ্রী সেলসিয়াসের উপর না যায় তার জন্য প্রতিটা দেশকে সর্বাত্বক চেস্টা করতে হবে।

প্রতি বছর ২২ এপ্রিল বিশ্বজুড়ে পালিত হয় 'ধরিত্রী দিবস' বা 'আর্থ ডে'। পরিবেশ ও প্রকৃতি রক্ষার মাধ্যমে পৃথিবীকে টিকিয়ে রাখাই হলো এই দিনটির মূল লক্ষ্য। এ বছরের থিম "আমাদের গ্রহে বিনিয়োগ করুন"। ১৯৭০ সালে প্রথম ধরিত্রী দিবস পালিত হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গেলর্ড নেলসনের নেতৃত্বে। তখন প্রায় ২ কোটি মানুষ সেদিন এই দিবসটি পালন করেছিলো। ১৯৭০ সালে জলবায়ু সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে রাস্তায় নেমে এসেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় দুই কোটি মানুষ। সেই থেকেই দিবসটির সূত্রপাত। বিশ্বে প্রতি বছরই ধরিত্রী, পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক বিভিন্ন সভা, সেমিনার হয়ে থাকে। বিভিন্ন সিদ্ধান্তও নেওয়া হচ্ছে কিন্তু দিন শেষে আমরা পৃথিবীতে আমাদের ব্যক্তিগত স্বার্থ, রাজনেতিক স্বার্থ এবং অর্থনৈতিক প্রভাব বিস্তার করবার জন্য পরিবেশ নিয়ে মোটেও চিন্তা করছি না। অথচ এশিয়ার বাতাশ দূষিত হলে ইউরোপ আমেরিকার বাতাশও ক্রমান্বয়ে দূষিত হবে। আফ্রিকার জলবায়ু পরিবর্তন হলে সেটির প্রভাব এশিয়াতেও পড়বে। এটা কোনভাবেই আমরা বুঝতে চেষ্টা করছি না। আমরা বুঝতে চেষ্টা করছি না যে জলবায়ুকে কোন সীমানা দিয়ে বেঁধে রাখা যায় না।

ধরিত্রীকে যত্ন নেয়ার জন্য আমাদের করনীয় পদক্ষেপ
সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগের মাধ্যমে সকল মানুষকে পরিবেশ সচেতন করে তুলতে হবে। বৃক্ষ কর্তন রোধ, বৃক্ষরোপন ও বনসৃজনের দিকে নজর দিতে হবে। আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য বনাঞ্চল, নদ-নদী, খাল-বিল সংরক্ষন করতে হবে। দুরবর্তী স্থানে যাবার জন্য ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার না করে পাবলিক যান বহন ব্যবহার করা। কাছাকাছি পথ অতিক্রম করতে হাঁটা বা সাইকেল ব্যবহার করা। প্লাস্টিকের ব্যাবহার নিষিদ্ধ করতে হবে, যেটা পরিবেশের জন্য খুবই ক্ষতিকারক। জীবাস্ম জ্বালানি যথাসম্ভব কম ব্যবহার করতে হবে। জীব বৈচিত্র্য সংরক্ষনের দিকে সকল মানব জাতিকে নজর দিতে হবে। রি-সাইকেল পদ্ধতির মাধ্যমে দ্রব্যের পুনর্ব্যবহার করতে হবে। পরিবেশ রক্ষার জন্য বিভিন্ন গবেষণা মূলক কাজে প্রশাসনকে ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে।
উপহার হিসেবে কাছের মানুষদেরকে একহাতে বৃক্ষ আরেক হাতে বই দিতে হবে।

একটি নিরাপদ, টেকসই ও সুন্দর ধরিত্রীর জন্য আসুন আমরা যে যেভাবে পারি বিনিয়োগ করি।
সবাইকে মা ধরিত্রী দিবসের শুভেচ্ছা।

লেখক: আস্থা মাহমুদ
শিক্ষার্থী, একাদশ শ্রেনী
মাস্টার মাইন্ড স্কুল, উত্তরা শাখা। ঢাকা
সেচ্ছাসেবক,  ইউনাইটেড নেশন ইউথ এন্ড স্টূডেন্টস এসোসিয়েশন