সিলেট মহানগরীতে সুরমার উপর প্রায় শতবছর ধরে কালের স্বাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ‘কিন ব্রিজ’। সংস্কারের অভাবে সিলেটের ঐতিহ্য বহনকারী এই ব্রিজের অবস্থা এখন ভগ্নদশা। ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায়ই এর উপর দিয়ে চলাচল করছেন মানুষ। ব্রিজটি কেবলমাত্র পথচারীরা ব্যবহার করতে পারবেন এমন ঘোষণা থাকলেও এর মধ্য দিয়ে অনায়াসে চলাচল করছে ছোট বড় যানবাহন।
 

কিন ব্রিজ সংস্কারের জন্য রেলওয়ে বিভাগকে দুই বছর আগে ২ কোটি টাকার বেশি অর্থ বরাদ্দ হলেও এখনও শুরু হয়নি কাজ।
 


সওজ বলছে, রেলওয়ে বিভাগকে বার বার ত্যাগিদ দেয়া হলেও সংস্কার কাজে তারা দেরি করছে।
 

আর এদিকে রেলওয়ে বিভাগ বলছে, অতি শীঘই সংস্কার কাজ শুরু করবে তারা।
 

জানা যায়, ব্রিটিশ আমলে তৈরি লোহার কাঠামোর দৃষ্টিনন্দন ‘কিন ব্রিজ’ নির্মাণ করেছিল রেলওয়ে বিভাগ। টানা দুই বছর নির্মাণকাজ শেষে ১৯৩৬ সালে সেতুটি চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছিল। তৎকালীন অসম (বর্তমান আসাম) প্রদেশের গভর্নর মাইকেল কিনের নামে এই সেতুর নামকরণ করা হয় ‘কিন ব্রিজ’। প্রায় শতবছর ধরে দাঁড়িয়ে থাকা সেতুটি দেশের অন্যতম প্রাচীন এবং সিলেট অঞ্চলে সুরমা নদীর ওপর নির্মিত প্রথম সেতু। এর দৈর্ঘ্য ১ হাজার ১৫০ ফুট এবং প্রস্থ ১৮ ফুট। নির্মাণের পরে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় ক্ষতিগ্রস্ত হয় সেতুটি। পরে ১৯৭৭ সালে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ প্রথম দফা সংস্কার করেছিল। এরপর কিন ব্রিজে আর বড় ধরণের কোনো সংস্কার হয়নি।
 

এদিকে, সময় পরিক্রমায় ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়া ঐতিহ্যবাহী সেতুটি সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) প্রকৌশল বিভাগ দেখভাল করলেও এটির মূল অভিভাবক সড়ক ও জনপথ অধিপ্তর। তাই নড়বড়ে সেতুটি রক্ষায় ২০১৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর সওজকে অবগত করে দুই দিকে লোহার বেষ্টনী দিলে এর উপর দিয়ে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ করে দিয়েছিলো সিটি করপোরেশন।
 

ওই সময় কিন ব্রিজকে ফুট ওভারব্রিজে (পদচারী-সেতু) রূপান্তর করার জন্য একটি প্রস্তাবও সওজ-কে দেয় সিসিক। তবে সে প্রস্তাব আলোর মুখ দেখেনি। উপরন্তু সুরমার দক্ষিণপারের বাসিন্দাদের দাবির মুখে বন্ধের ৫২ দিন পর লোহার বেষ্টনী অর্ধেক কেটে শুধু রিকশা, সিএনজি, ভ্যান, সাইকেল ও মোটরসাইকেল চলাচলের জন্য সেতুটি খুলে দেয়া হয়। কিন্তু কিছুদিন পর সেই বেষ্টনী পুরোপুরি ভেঙে যায় এবং ব্রিজটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও ছোট-বড় যানবাহন ফের চলাচল শুরু করে।
 

সম্প্রতি ব্রিজের কয়েক জায়গায় তৈরি হয়েছে বেশ কয়েটি গর্ত। সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান সিলেটভিউ-কে জানান, কিন ব্রিজ সংস্কার, রক্ষণাবেক্ষণের সকল দায়িত্ব সড়ক ও জনপথ বিভাগের। তবে মহানগরবাসীর চলাচলের স্বার্থে আমরা এসব গর্ত শীঘ্রই মেরামত করে নিবো। তবে মূল সংস্কার সড়ক ও জনপথ বিভাগকে করতে হবে।
 

সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ) সূত্রে জানা গেছে, কিন ব্রিজ সংস্কারের বিষয়ে ২০২০ সালে বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সমন্বয় সভায় আলোচনা করা হয়। সেখানে সেতু সংস্কারের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ৩ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়। পরবর্তীতে সওজের পক্ষ থেকে সেতুটি সংস্কারে মন্ত্রণালয়ের কাছে অর্থ বরাদ্দ চেয়ে আবেদন করা হয়। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে ২ কোটি ১৫ লাখ টাকা বরাদ্দ পায় সওজ সিলেট অফিস। ওই বছরেরই জুনে বরাদ্দের টাকা রেলওয়ের সেতু বিভাগকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। তবে এখন পর্যন্ত শুরু হয়নি সংস্কার।
 

সওজ সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, তৎক্ষালীন সময়ে কিন ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছিল রেলওয়ে বিভাগের মাধ্যমে। লোহার কাঠামোর কাজে রেলওয়ের প্রকৌশল বিভাগ বেশি পারদর্শী। তাই কিন ব্রিজ সংস্কার ও কিছু মেরামত কাজের জন্য রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
 

তিনি আরো বলেন, ব্রিজের নির্মাণ ও পূর্ববর্তী সংস্কারকাজ রেলওয়ে বিভাগ করছে। সংস্কারের জন্য বরাদ্দ হওয়া টাকা ২০২১ সালের জুনেই রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে হস্তান্তর করা হয়েছে। কিন ব্রিজ সংস্কারে প্রকৌশলও নিয়োগ দিয়েছে রেলওয়ে বিভাগ। তবে কি কারণে তারা দেরি করছে তা অজানা। রেলওয়ে বিভাগকে বার বার তাগিদ দেয়া হলেও কোন ফলাফল আসছে না।
 

এ বিষয়ে রেলওয়ে বিভাগের পূর্বাঞ্চলের সেতু প্রকৌশলী জিসান দত্ত সিলেটভিউকে জানান, কিন ব্রিজ সংস্কারের জন্য যাবতীয় মালামাল ইতিমধ্যেই সিলেটে আসতে শুরু করেছে। কিছুদিনের মধ্যেই সকল মালামাল সিলেটে চলে আসবে। আশা করছি অতি শীঘ্রই কাজ শুরু হবে।

 


সিলেটভিউ২৪ডটকম/নাজাত/এসডি-১৪০