মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে দীর্ঘদিন ধরেই বৃষ্টিপাত না থাকায় আউশ ও রবি ফসলি মাঠ পুড়ে ছারখার হয়ে খরার পড়েছে ক্ষেতখামার। বনাঞ্চলে গাছগাছালি কমে যাওয়ায় মাটিও হারাচ্ছে পানির ধারণ ক্ষমতা। ফলে প্রখর খরা ও দাবদাহে ক্ষেতখামার পুড়ে ছারখার হওয়াতে হাহাকার করছেন কৃষকরা।
 

সরেজিমনে দেখা যায়, উপজেলার শমশেরনগর, পতনঊষার, মুন্সীবাজারসহ বিভিন্ন ইউনিয়নে কৃষকদের রবি ফসলি ক্ষেত খামারে ধ্বস দেখা দিয়েছে। শাক-সবজির গাছ শুকিয়ে মারা যাচ্ছে। কেউ কেউ ভূ-গর্ভ থেকে কোনমতে সেচ দিলেও তা শুকিয়ে যাচ্ছে। কৃষকরা এক পসলা বৃষ্টির জন্য হাহাকার করছেন।
 


পতনঊষারের কৃষক আক্তার মিয়া, আলমগীর হোসেন, ইউনুস মিয়া বলেন, খরায় মাটি পুড়ে যাচ্ছে। ভূ-গর্ভ থেকে সেচ দিয়েও রবি ফসলি ক্ষেতখামার রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না। বাজারে এমনিতেই জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে। তার উপর কৃষির ক্ষয়ক্ষতি বহন করা কঠিন হয়ে উঠবে।

স্থানীয় কৃষকরা আরও জানান, প্রায় দেড় মাস ধরে কোন ধরণের বৃষ্টিপাত হচ্ছে না। মাঝে মধ্যে আকাশে মেঘের গর্জন দেখা গেলেও বৃষ্টিপাতের দেখা মেলেনি আজও। ফলে চলতি আউশ মৌসুমে বীজতলা তৈরি করতে পারছেন না কৃষকরা। রবি ফসলি জমিতে নানা জাতের শাক-সবজির গাছ পুড়ে ছারখার হচ্ছে। খাল-বিল, নদী-নালা, পুকুর ও জলাশয় শুকিয়ে চৌচির। ভূ-গর্ভ থেকে কৃষকরা কোনমতে কিছু কিছু জমিতে সেচ দিলেও কিছুক্ষণ পরই তা আবারো শুকিয়ে যাচ্ছে। ফলে বেগুন, করলা, বরবটি, জিঙ্গা, পুঁইশাক, ঢেঁড়শ, শশাসহ মৌসুমের নানা ধরণের শাকসবজির ক্ষেত পুড়েছে। এতে কৃষকরাও ব্যাপক ক্ষতির শিকার হচ্ছেন।
 

পরিবেশকর্মী নূরুল মোহাইমীন মিল্টন ও শিক্ষক জমশেদ আলীসহ স্থানীয় সচেতন মহল জানান, একটি দেশের পরিবেশ রক্ষায় গাছগাছালি আদ্রতা রক্ষাসহ মাটির মধ্যে পানি ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। তবে সংরক্ষিত বনাঞ্চল, সামাজিক বনাঞ্চল ও গ্রামগঞ্জে বসতবাড়িতেও গাছগাছালি কেটে নিশ্চিহ্ন করে ফেলা হচ্ছে। ফলে ঋতু বদলের মধ্যদিয়ে প্রকৃতিও রূপ বদলাতে শুরু করেছে। আবহাওয়ার ব্যাপক তারতম্য দেখা দিয়েছে। প্রবল দাবদাহে দিনে প্রচন্ড গরম আবার রাতে ঠান্ডা আবহাওয়া অনুভূত হচ্ছে। এসব নানা কারণে পরিবেশের উপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। এজন্য খরার কবলে কৃষি ও রবি ফসলের ক্ষতি বয়ে আনছে।
 

কৃষক সিদ্দিকুর রহমান বলেন, বৈশাখ প্রায় শেষ দিকে। বৃষ্টি নেই, প্রখর রোদে খা খা করছে আউশধানের মাঠ ও বীজতলা। চারাগুলো রোপণ করার জন্য বড়ো হলে মাঠ ঠনঠন করছে।

তিনি আরও বলেন, বোরো ধান কাটতে আসা শ্রমিকেরা তীব্র এ গরমে মাঠে কাজ করতে পারছেন না।
 

টমটম চালক মেরাজ মিয়া বলেন, কয়েকদিন ধরে এতো রোদ ও গরম পড়ায় আমাদের অবস্থা খুব খারাপ যাচ্ছে। ঠিকমতো গাড়ি চালাতে পারছি না। কী আর করবো। কাজ না করলে তো আর সংসার চলবে না। দুপুরের আগেই গরমের কারণে বাড়ি ফিরতে হয়।
 

উপজেলার মাঠ পর্যায়ের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা প্রদ্যুৎ পাল জানান, সবজির জন্য প্রচুর পরিমাণে পানির প্রয়োজন। আবহাওয়াগত কারণে প্রচন্ড খরায় যেসব এলাকায় সেচের অসুবিধা সেসব এলাকায় সবজি ক্ষেত বিনষ্ট হওয়ার পথে। তাছাড়া যারা আউশের বীজতলা তৈরি করেছেন তাদের অনেকের বীজতলাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। দীর্ঘ সময় ধরে অনুবৃষ্টির কারণে মাঠ ঘাট ফেটে চৌচির হচ্ছে।


 


সিলেটভিউ২৪ডটকম/জয়নাল/এসডি-২০৯