সুনামগঞ্জের দাদন ব্যবসায়ী তোফাজ্জুলের কাছে জিম্মি এলাকার হতদরিদ্র মানুষজন। তার সুদী ব্যবসার বেড়াজালে আটকা পরে অনেকে ভিটেমাটি হারিয়ে ফেলছেন। গরীব মানুষদের কাছ থেকে ব্লাঙ্ক চেক ও অলিখিত স্ট্যাম্পে দস্তখত নিয়ে দ্বিগুণ-তিনগুণ করে টাকা আদায় করে থাকে। টাকা পরিশোধ করতে না পারলে তাদের ভিটেমাটি তার নামে লিখে নেয়। মামলা দিয়ে জেলে পুরছে অনেক হতদরিদ্র মানুষদের। এমন অভিযোগ করেছেন এলাকার শান্তিকামী ও নিরীহ মানুষজন।

অভিযোগে প্রকাশ সুনামগঞ্জ জেলার সদর থানার জগাইরগাঁও এর আব্দুল মছব্বিরের পুত্র মো. তোফাজ্জল হক তার আয়ের বৈধ কোন উৎস নেই। একমাত্র বেআইনী দাদন ব্যবসার মাধ্যমে অল্প দিনে সে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে গেছে। 


মঙ্গলবার (৬ জুন) সিলেট রেঞ্জ পুলিশের ডিআইজি বরাবরে দেওয়া অভিযোগে এলাকাবাসী জানান তোফাজ্জুল হক এলাকার গরীব দুঃখী মানুষদেরকে ঋণ দেয়ার নামে অতি চড়া হারে তাদের কাছ থেকে সে সুদ গ্রহণ করে থাকে। এমনকি সে অনেকের জায়গা জমি, গরু-বাছুর ইত্যাদি হাতিয়ে নিচ্ছে। তার চাহিত হারে সুদ না দিলে ঋণ গ্রহিতাদেরকে হামলা-মামলার হুমকি ও ধামকি দিয়ে থাকে। অলিখিত জুডিশিয়াল স্টাম্পে ও খালি চেকে দস্তখত রেখে গরীব মানুষদের সে টাকা ঋণ দিয়ে থাকে। দিগুণ হারে সুদ না দিলে এই স্টাম্প ও চেক দিয়ে মামলা ও সহায় সম্পত্তি হাতিয়ে নেয়ার হুমকি দেয়। বাধ্য হয়ে অনেকে স্বর্ণালংকার, হালের গরু, জায়গাজমি ও ভিটেবাড়ি বিক্রি করে তার সুদের টাকা পরিশোধ করে থাকেন। 

তোফাজ্জুল হক কিছুদিন আগে উজানরামনগর গ্রামের আজিম উদ্দিন মেম্বার উক্ত তোফাজ্জুল হকের কাছ থেকে টাকা ঋণ নেন। তোফাজ্জুল হক আজিম উদ্দিন মেম্বারের কাছে সুদ সহ দিগুন টাকা দাবি করে বসে। টাকা না দিলে মামলা দিয়ে তাকে জেল খাটানোর পাশাপাশি তার সহায় সম্পদ, বাড়ি-ঘর নিলাম করিয়ে নিবে বলে হুমকি দেয়। পার্শ্ববর্তী মোহনপুর ইউনিয়নের উজানরামনগর গ্রামের আজিম উদ্দিন মেম্বারের মতো একই গ্রামের সামসুল ইসলামকে ১ লক্ষ ৫০ হাজার ঋণ দেয়। এসময় অলিখিত স্টাম্প ও খালি চেকে দস্তখত নিয়ে তার প্রাপ্য টাকার চেয়ে বেশি ৬ লক্ষ টাকা লিখিয়ে একটি লিগ্যাল নোটিশ তার বাড়িতে পাঠায়। অথচ সামসুল ইসলামের পরিবার তোফাজ্জুলের পাওনা দেড় লাখ টাকা ইতোমধ্যে পরিশোধও করেছেন। তাদের মতো বিরাম মিয়া, আকবর আলী সহ শত শত ঋণ গ্রহিতা দাদন ব্যবসায়ী তোফাজ্জুল হকের কাছে জিম্মী হয়ে পড়েছেন। 

এছাড়াও টাকা ঋণ দিয়ে তোফাজ্জুল হক অনেক মা-বোনকে জিম্মী করে তাদের কাছ থেকে অসৎ ফায়দা হাসিল করে থাকে। এমনকি ভয়ভীতি দেখিয়ে অনেক নারীর সভ্রমহানীও ঘটিয়ে থাকে। ভয়ে অনেকে মুখ খুলতে নারাজ। তোফাজ্জুল হক এহেন দাদন ব্যবসার যাতাকলে পড়ে এলাকার দরিদ্র ও নিরীহ মানুষজন পীষ্ট হচ্ছেন। তার এই অবৈধ ব্যবসায় বাঁধা দিলে নারী নির্যাতন মামলা সহ বিভিন্ন মামলা দিয়ে প্রতিবাদী লোকদের হুমকি-ধামকি দিয়ে থাকে। ফলে এলাকার সর্বস্থরের মানুষজন দাদন ব্যবসায়ী তোফাজ্জুল হকের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন। 

স্মারকলিপিতে এলাকার জনমানুষের সহায় সম্পদ ও গরীবদের শেষ সম্বল ভিটেমাটি রক্ষার্থে অবিলম্বে দাদন ব্যবসায়ী তোফাজ্জুল হকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধকমূলক আইনে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়েছে।

সিলেটভিউ২৪ডটকম / ডি.আর