ছবি: আবাহনী।

ঢাকার ফুটবলের অন্যতম পরাশক্তি আবাহনীর গেল মৌসুমটা তেমন ভালো যায়নি। ক্লাবের শোকেসে যুক্ত হয়নি নতুন কোনোও ট্রফি। গত মৌসুমে প্রিমিয়ার লিগে দ্বিতীয় স্থানে থেকে শেষ করে আবাহনী; স্বাধীনতা কাপে যাত্রা থামে সেমিফাইনালে। আর ফেডারেশন কাপে তারা হয় রানার্সআপ। গেল মৌসুমের ‘ব্যর্থতা’ ঝেড়ে ফেলে এ বছর জেগে ওঠতে প্রত্যয়ী আবাহনী। সেই প্রত্যয়ের শুরুতেই ঢাকার ক্লাবটির সামনে ছিল এএফসি কাপের বাছাই। মালদ্বীপের ক্লাব ঈগলের বিপক্ষে সেই বাছাইয়ে প্রত্যাশার জয়ই পেয়েছে মারিও লেমোসের শিষ্যরা।

সিলেট জেলা স্টেডিয়ামে বুধবার বিকাল সোয়া ৩টায় শুরু হওয়া ম্যাচে ঈগলকে ১-২ গোলে হারিয়েছে আবাহনী। এই জয়ে প্লে অফ খেলা নিশ্চিত হলো রহমত মিয়াদের।


প্রথমার্ধে ১-০ শূন্য গোলে এগিয়ে থাকা আবাহনী দ্বিতীয়ার্ধে গোল খেয়ে বসে। শেষমুহূর্তে এসে দারুণ হেডে গোল করে আবাহনীকে জয় এনে দেন ডিফেন্ডার মিলাদ সোলায়মানি।

কয়েকদিন ধরে টানা বৃষ্টি হচ্ছে সিলেটে। মাঠ তাই কর্দমাক্ত। এখানকার পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে গত শুক্রবার বহর নিয়ে চলে আসে ক্লাব ঈগল। সোমবার আসে ঢাকা আবাহনী। উভয় দলের কোচই কর্দমাক্ত মাঠের বিষয়টি নিয়ে খুব বেশি শঙ্কিত ছিলেন না। তবে মাঠের খেলায় এর চাপ অবশ্য পড়লোই। কাদার মধ্যে খেলোয়াড়দের রানিংয়ের সমস্যা স্পষ্টই ছিল। কেউ কেউ পড়েছেন পা পিছলে।

ম্যাচের প্রথমার্ধের শুরুটা উভয় দলের জন্যই ছিল অগোছালো। এর মধ্যেও আক্রমণে ওঠার চেষ্টা চালায় আবাহনী। উনিশ মিনিটের মধ্যে তারা আদায় করে নেয় দ্বিতীয় কর্ণার।

পরের মিনিটেই এগিয়ে যায় আবাহনী। বাঁ প্রান্ত থেকে ডেভিড ইফেগুর বাড়ানো বলে মাথা ছুঁইয়ে বল জালে ঢুকান ফরোয়ার্ড কর্ণেলিউস ইজেকিল স্টুয়ার্ট।

২৩ মিনিটে গোল পেতে পারতো ঢাকার ক্লাবটি। কিন্তু প্রতিপক্ষের ডিবক্সে জটলায় প্রথমে স্টুয়ার্ট, পরে ইফেগু পোস্টে শট নিতে ব্যর্থ হন। ২৭ মিনিটে ঈগলের মিডফিল্ডার মিলোবান পেত্রোবিচের ডিফেন্সচেরা পাস ডিবক্সে ধরতে ব্যর্থ হন ফরোয়ার্ড ইব্রাহিম হোসাইন। ৩২ মিনিটে গোলরক্ষককে একা পেয়ে পোস্টের ওপর দিয়ে মারেন আবাহনীর ডেভিড ইফেগু।

৪১ মিনিটে প্রথম কর্ণার আদায় করে নেয় ক্লাব ঈগল। ইব্রাহিমের শট বক্সে জটলায় পেয়ে পোস্টে রাখতে ব্যর্থ হন দানিল পিত্রোনিন। পরের মিনিটে বাঁ দিক দিয়ে স্টুয়ার্টের বাড়ানো বল প্রতিপক্ষের ফাঁকা ডিবক্সে পেলেও কাদায় পা পিছলে পড়ে যান ইফেগু। তিনিই মিনিট দুয়েক পরে বাঁ প্রান্তে ফাঁকা জায়গায় বল পেয়ে পোস্টে বল রাখতে পারেননি।

১-০ গোলে এগিয়ে থেকে বিরতিতে যায় আবাহনী। দ্বিতীয়ার্ধে ঈগলকে আরও চেপে ধরার চেষ্টা করে লেমোসের শিষ্যরা। এ অর্ধের শুরুতেই ডান প্রান্ত দিয়ে বল নিয়ে ঢুকে পোস্টের ওপর দিয়ে মারেন ফাহিম। ৫১ মিনিটে ডিবক্সের ঠিক বাইরে আবাহনীর ইফেগুকে ফাউল করে হলুদ কার্ড দেখেন মিলোবান পেত্রোবিচ। তবে এ সুযোগ কাজে লাগাতে পারেনি ঢাকাইয়া পরাশক্তিরা।

৬১ মিনিটে আবাহনীর ডিফেন্সের গড়বড়ে ডিবক্সে বল পেয়ে জালে ঢুকান ঈগলের ইভান কার্লোস কোয়েলহো। কিন্তু রেফারি বাজান অফসাইডের বাঁশি। ঈগলের কোচ ও খেলোয়াড়রা ওই সময় স্পষ্ট ক্ষোভ প্রকাশ করেন। সীমা অতিক্রম করায় হলুদ কার্ড দেখেন ঈগলের ডিফেন্ডার আব্দুলমালিক।

অবশ্য এক মিনিট পরেই গোল আদায় করে নেয় সফরকারীরা। ডিবক্সের বাঁ দিকে ফ্রি কিক পায় ঈগল। মিলোবান পেত্রোবিচের নিখুঁত শট পোস্টের ডান পাশ থেকে দারুণ মটে লক্ষ্যভেদ করেন অধিনায়ক আহমেদ রিজোয়ান।

সমতা ফেরার পর জয়সূচক গোলের জন্য মরিয়া ছিল উভয় দল। কিন্তু ম্যাচ যেন গড়াচ্ছিল অতিরিক্ত সময়ের দিকে। তা অবশ্য হতে দেননি আবাহনীর ডিফেন্ডার দানিলো অগাস্টো। ৮৯ মিনিটে ডানপ্রান্ত থেকে কর্ণার কিক নেন মোজাফ্ফরভ। পোস্টের সামনে জটলায় বল পেয়ে মাথা ছুঁইয়ে বল জালে জড়ান দানিলো। উল্লাসে ফেটে পড়ে আবাহনীর ডাগআউট।

শেষ বাঁশি বাজার পর ঈগলের কোচ, কোচিং স্টাফ ও খেলোয়াড়দের ক্ষোভ ঝাড়তে দেখা যায়। চতুর্থ রেফারির সঙ্গে কিছুক্ষণ রাগান্বিতভাবে কথা বলতে দেখা যায় কোচ শিয়াজ মোহাম্মদকে।

এ ম্যাচের জয়ে প্লে অফ নিশ্চিত করেছে ঢাকা আবাহনী। এএফসি কাপে আগামী ২২ আগস্ট তাদের পরের ম্যাচ। নেপালের মাচিন্দ্রা ও ভারতের মোহনবাগান সুপারজায়ান্টসের মধ্যকার ম্যাচের বিজয়ী দলই হবে আবাহনীর প্রতিপক্ষ।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/আরআই-কে