লক্ষ্যটা চ্যালেঞ্জিং। সেই চ্যালেঞ্জে জিততে চাই ‘ফ্লাইং স্টার্ট’। কিন্তু কোথায় কী! প্রথম ওভারেই দলপতির গোল্ডেন ডাক, এরপর অন্যদের মন্থর ব্যাটিং কুমিল্লার জয়ের স্বপ্নকে কেবল দূরেই সরিয়ে নেয়। সেই স্বপ্ন আর মুঠোবন্দি করতে পারেনি গেল আসরের চ্যাম্পিয়নরা।

তারকা-খচিত রংপুর রাইডার্সের বিপক্ষে ৮ রানে হেরেছে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। আজ সিলেটে রংপুরের ৫ উইকেটে ১৬৫ রানের জবাবে ৬ উইকেটে ১৫৭ রানে আটকে যায় লিটনের কুমিল্লা। রংপুরের জয়ে রাঙা ম্যাচে ব্যাটে-বলে কার্যকর ভূমিকা রাখেন আফগান অলরাউন্ডার আজমতউল্লাহ ওমরজাই।


পাঁচ ম্যাচে এখন রংপুরের তিন জয়, দুই হার। চার ম্যাচে সমান দুটি করে জয়-পরাজয় কুমিল্লার।

ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন দলের অধিনায়ক হিসেবে সামনে থেকে পারফর্ম করার কথা লিটন দাসের। কিন্তু তার ব্যাট এই টুর্নামেন্টে হাসছেই না। ঢাকায় দুই ম্যাচে ১৩ ও ১৪ রানের পর সিলেটে এসে প্রথম ম্যাচে ৮ রান। আজ তো প্রথম ওভারেই আজমতউল্লাহ ওমরজাইয়ের প্রথম বলেই বাবর আজমের হাতে মিড অনে ক্যাচ দিয়ে বিদায়!

শুরুর ধাক্কা সামলে নিয়ে ইনিংস মেরামতে মনোযোগ বাড়ান মোহাম্মদ রিজওয়ান ও মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন। ধাক্কা সামলে নিলেও রানের চাকায় গতি আনতে তারা ব্যর্থ। বিগ শটের জন্য হাসফাঁস করতে করতে ২১ বলে ১৭ রান করে নবীর বলে ক্যাচ দেন পাকিস্তানি তারকা রিজওয়ান। ভাঙে ৫৬ বলে ৫৯ রানের জুটি।

উড়তে থাকা আস্কিং রানরেট নিচে নামিয়ে আনার চেষ্টা করেন আসরে ফর্মে ফেরার দৌড়ে থাকা তাওহীদ হৃদয়। অঙ্কনের সঙ্গে তার ৪০ বলের জুটিতে রান ওঠে ৫৩। সেই জুটি ভাঙে অঙ্কনের বিদায়ে। ৪১ বলে ফিফটি ছোঁয়া অঙ্কন পরের ১৪ বলে করেন মাত্র ১৩ রান! অথচ তার ৫৫ বলে ৬৩ রানে ইনিংসে বাউন্ডারি চারটি, ছক্কা তিনটি। কিন্তু ডট বল বেশি খেলায় রানের সংখ্যাটি বড় হয়নি।

১০ ওভারে ৬১ রান তোলা কুমিল্লার জন্য পরের ১০ ওভারে ১০৫ রান করতে হতো। শেষদিকে চেষ্টা করেছিলেন তাওহীদ হৃদয়। কিন্তু তার ২৮ বলে তিন চার ও এক ছয়ে ৩৯ রানের ইনিংস যথেষ্ট ছিল না। অন্তিম মুহূর্তে জাকের আলী অনিকের ৪ বলে দুটি ছয় ও একটি চারে অপরাজিত ১৮ রান কুমিল্লার আক্ষেপই বাড়িয়েছে শুধু।

ব্যাট হাতে ২০ বলে ৩৬ রান করা রংপুরের আজমতউল্লাহ বল হাতে ৪ ওভারে ৩১ রানে নিয়েছেন দুটি উইকেট। হাসান মাহমুদ ৪ ওভারে ২৩ রানে একটি, মোহাম্মদ নবী ৪ ওভারে ১৯ রানে একটি উইকেট নেন। একটি উইকেট নিলেও ৪ ওভারে ৪১ রান খরচ করেন সাকিব আল হাসান।

এর আগে রৌদ্রোজ্বল দিনে ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে টসে জিতে ব্যাটিংয়ে নামে রংপুর রাইডার্স। তবে তাদের শুরুটা ছিল মন্থর। শেষের ৫ ওভারের ঝড়ে তারা পায় ৫ উইকেটে ১৬৫ রানের চ্যালেঞ্জিং স্কোর। ১৫ ওভারে তাদের রান ছিল মাত্র ৯৭। সেখান থেকে শেষ ৫ ওভারে আজমতউল্লাহ ওমরজাইয়ের প্রচেষ্টায় যোগ হয় আরও ৬৮ রান।

আগের ম্যাচে ব্যর্থ রংপুরের ব্র্যান্ডন কিং এ ম্যাচে ১২ বলে করতে পারলেন ১৪ রান। তানভীর ইসলামের বলে রিজওয়ারেন স্টাম্পিংয়ের শিকার হন তিনি। দীর্ঘক্ষণ উইকেটে থাকলেও পাকিস্তানি তারকা বাবর আজমের ইনিংসে ছিল না টি-টোয়েন্টির তাড়না। ৩৬ বলে চারটি চার ও একটি ছয়ে ৩৭ রান করে স্বদেশী খুশদিল শাহের বলে বোল্ড ফেরেন বাবর।

ফজলে মাহমুদ রাব্বি বড় কিছুর সম্ভাবনা জাগিয়েও ৩০ রানে থমকে যান মোস্তাফিজের বলে সুইপার কাভারে জাকের আলীর হাতে ক্যাচ দিয়ে। তার ২১ বলের ইনিংসে ছিল দুই ছয় আর এক চার। শামীম হোসেন আরেকবার ব্যর্থ। ১৮ বলে ১৪ করে রেইফারের বলে বিদায় হন তিনি। উনিশতম ওভারে রেইফারের প্রথম দুই বলে চার ও ছয়ের পরের বলেই ক্রস ব্যাটে খেলতে গিয়ে বোল্ড হয়ে ফিরেন মোহাম্মদ নবী (৭ বলে ১৩)।

আফগান তারকা আজমতউল্লাহ ওমরজাইয়ের ব্যাটেই ভালো স্কোর পায় রংপুর। এ তারকা ২০ বলে ৩৬ রানে অপরাজিত থাকেন। তার ইনিংসে দুটি ছয়ের পাশাপাশি ছিল তিনটি চার। নুরুল হাসান সোহান ৬ বলে একটি করে চার-ছয়ে ১৫ রানে থাকেন অপরাজিত।

কুমিল্লার সবচেয়ে খরুচে বোলার মোস্তাফিজুর রহমান। ৪ ওভারে ১ উইকেট পেতে গুনেছেন ৪৮ রান। অথচ তার শুরুর দুই ওভার ছিল দুর্দান্ত। ৯ রানে পেয়েছিলেন রাব্বির উইকেট। কিন্তু পরের দুই ওভারে খরচ করেন ৩৯ রান! ৩ ওভারে ২০ রান খরচায় ২ উইকেট পাওয়া রেমন রেইফার কুমিল্লার সেরা বোলার। খুশদিল শাহ ৪ ওভারে ২৫ রানে ১টি, তানভীর ইসলাম ৩ ওভারে ১৯ রানে ১টি উইকেট শিকার করেন।

এ ম্যাচে ইমরুল কায়েসসহ তিন পরিবর্তন নিয়ে খেলছে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। ব্যাট হাতে রানেই ছিলেন ইমরুল। তবে হালকা চোট থাকায় তাকে নিয়ে ঝুঁকি নেয়নি ম্যানেজমেন্ট। ম্যাচে রংপুরের একাদশে ছিল দুই পরিবর্তন।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/আরআই-কে