২০৫০ সালের আগে দেশের জনসংখ্যা যাতে এক কোটি ছাড়িয়ে না যায় সেজন্য অভিবাসন সীমিত করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে ভোট হতে পারে সুইজারল্যান্ডে৷ তবে ভোটের দিন-তারিখ এখনও চূড়ান্ত করা হয়নি৷


সুইজারল্যান্ডের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় জনগণের কোনো দাবি বা চাহিদার বিষয়টি ভোটের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করার বিধান রয়েছে৷ যে ইস্যুতে দেশটির জনগণ পরিবর্তন বা সংশোধন চায়, সেই ইস্যুতে দেড় বছরের মধ্যে দেশটিতে বসবাসরত এক লাখ মানুষের স্বাক্ষর সংগ্রহ করতে হয়৷ 



দেশটির কট্টর ডানপন্থি রাজনৈতিক দল সুইস পিপলস পার্টি (এসভিপি) বুধবার বার্নের ফেডারেল চ্যান্সেলারিতে এক লাখ ১৪ হাজার ছয়শটি স্বাক্ষর যুক্ত আবেদন জমা দিয়েছে৷ দলটি মাত্র নয় মাসেই এসব স্বাক্ষর সংগ্রহ করেছে৷


সুইজারল্যান্ডের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল এসপিভি জানিয়েছে, ‘‘গণ অভিবাসনের ঊর্ধ্বমুখী ধারা অব্যাহত রয়েছে... যা আমাদের ছোট দেশটির ভয়ঙ্কর পরিণতি ডেকে আনতে পারে৷’’


এসপিভি আরো জানিয়েছে, এমন উদ্যোগ নেয়ার কারণ হলো ‘‘আমাদের এবং আমাদের শিশুদের জন্য নিরাপদ ও সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য আমাদের অনন্য ল্যান্ডস্কেপ, আমাদের উচ্চমানের জীবনযাত্রা, আমাদের সমৃদ্ধির গতি ধরে রাখাটা খুব জরুরি৷’’


ফেডারেল চ্যান্সেলারিতে জমা দেয়া স্বাক্ষরগুলো যাচাইয়ের পরই ভোটের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া ও দিন-তারিখ চূড়ান্ত করা হয়৷ সাধারণত এই কাজটি সম্পন্ন করতে কয়েক মাস থেকে বছরও লাগতে পারে৷


২০২২ সালে সুইজারল্যান্ডের স্থায়ী জনসংখ্যা ছিল ৮৮ লাখ ২০ হাজার৷ ২০১৮ সালে দেশটির জনসংখ্যা ছিল ৮৫ লাখ ৪০ হাজার৷ দেশটির জনসংখ্যার এক চতুর্থাংশ বিদেশি৷

এসপিভির আনা এই প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ‘‘সুইজারল্যান্ডের স্থায়ী জনসংখ্যা ২০৫০ সালের আগে এক কোটির বেশি হওয়া উচিত নয়৷’’


স্থায়ী জনসংখ্যার মধ্যে দেশটিতে বসবাসরত সুইস নাগরিক এবং অন্তত এক বছর বসবাসের অনুমতি থাকা কিংবা অন্তত ১২ মাস ধরে দেশটিতে বসবাস করছেন এমন বিদেশিদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে৷


প্রস্তাবে আরো বলা হয়েছে, যদি ২০৫০ সালের আগে দেশটির জনসংখ্যা ৯৫ লাখ ছাড়িয়ে যায়, তাহলে সরকার এবং পার্লামেন্ট ‘আশ্রয় এবং পারিবারিক পুনর্মিলন সংক্রান্ত ইস্যুতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে৷’


যদি এই ব্যবস্থাগুলোও যথেষ্ট না হয়, তাহলে সুইজারল্যান্ডকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে থাকা মানুষের অবাধ চলাচলের চুক্তিটি বাতিল করতে হবে৷ জোট নিরপেক্ষ দেশটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য না হলেও ২০০৮ সাল থেকে ভিসামুক্ত অবাধ চলাচলে শেঙেন জোনের অংশ৷


এসভিপি জানিয়েছে, এমন উদ্যোগ ‘‘সুইজারল্যান্ডে অভিবাসন সৃষ্ট সমস্যার পরিপ্রেক্ষিতে নেয়া হয়েছে৷’’


তারা বলছে, অভিবাসনের কারণে দেশটিতে আবাসনের ঘাটতি তৈরি হয়েছে৷ এছাড়াও বাড়ছে বাসা ভাড়া, বাড়ছে যানজট, গণপরিবহনে ভিড় বাড়ছে, স্কুলের মান কমছে, সহিংসতা এবং অপরাধ বাড়ছে, বিদ্যুতের ঘাটতি দেখা দিয়েছে, মাথাপিছু আয়ে স্থবিরতা নেমে এসেছে এবং স্বাস্থ্যবিমার প্রিমিয়াম বেড়ে গেছে৷


আর এসব কারণে ‘‘আমাদের সুন্দর গ্রামাঞ্চলে চাপ বাড়ছে’’ বলেও জানিয়েছে এসপিভি৷


সুইজারল্যান্ডের জার্মানভাষী অংশের কৃষকদের দল হিসাবে পরিচিত এসপিভি এখন দেশটির প্রধান রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়েছে৷ তিনটি ইস্যুতে দলটি বিরোধিতা করে আসছে৷ এগুলো হলো: গণ অভিবাসন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক এবং সুইজারল্যান্ডের নিরপেক্ষ অবস্থান৷ 


দলটির নতুন নেতা ৪৩ বছর বয়সি পাহাড়ি কৃষক মার্সেল ডেটলিং অভিবাসন ইস্যুতে খুবই কট্টর হিসাবে পরিচিত৷


স্বাক্ষর জমা দিয়ে তিনি বলেন, ‘‘আজ অনেক বিদেশি আসছেন, কিন্তু সঠিক মানুষেরা আসছেন না৷ আমাদের নিয়ন্ত্রিত অভিবাসন প্রয়োজন, যা আমাদের দেশ এবং আমাদের জনসংখ্যাকে উপকৃত করবে৷’’


ফেডারেল পরিসংখ্যান অফিস অনুমান করছে, ২০৫০ সালে দেশটির জনসংখ্যা হবে এক কোটি চার লাখ৷ তবে ঊর্ধ্বমুখী ধারা থাকলে সংখ্যাটি এক কোটি ১৪ লাখ হতে পারে৷ আর নিম্নমুখী প্রবণতা থাকলে সংখ্যাটি ৯৫ লাখও হতে পারে৷

 

 

সিলেটভিউ২৪ডটকম/নাজাত