সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে গ্রেপ্তার করার সময় রমিজ মিয়া (৫০) নামের এ ব্যক্তির মৃত্যুর ঘটনায় ময়না তদন্তের প্রতিবেদন দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে পুলিশ।

 


 

 


বুধবার (১৭ এপ্রিল) লাশ দাফনের পর পুলিশ রমিজ মিয়ার পরিবার ও স্থানীয় লোকজনকে এই আশ্বাস দেয়।

 

 

 

 

রমিজ মিয়ার পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, পুলিশের মারধরেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তি দাবি করেছেন তাঁরা।

 

 

 

 

গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় উপজেলার উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নের বুরুঙ্গামারা গ্রামে গ্রেপ্তার করার সময় রমিজ মিয়ার মৃত্যু হয়। স্থানীয় টেকেরঘাট পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের দুজন তাঁকে গ্রেপ্তার করতে গিয়েছিলেন।

 

 

 


রমিজ মিয়ার লাশ দাফনের সময় পুলিশ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

 

 

 

রমিজ মিয়ার ছেলে সাইফুল ইসলাম (২২) সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘সবকিছু আমার চোখের সামনে ঘটেছে। পুলিশের বেধড়ক মারধরেই বাবা মারা গেছেন। আমরা এর বিচার চাই।’  

 

 

 

 

সাইফুল ইসলাম জানান, গ্রামের রাস্তার পাশেই তাঁদের ঘর। বসতঘরের সামনের অংশে চায়ের দোকান। তাঁর বাবা দোকান চালাতেন। তাঁরা দুই ভাই শ্রমিকের কাজ করেন। কাজ না থাকলে বাবার সঙ্গে দোকানে বসেন। ঘটনার দিন মঙ্গলবার বিকেলেও দোকানে বাবার সঙ্গে ছিলেন তিনি।

 

 

 

 

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে সাইফুল ইসলাম জানান, বিকেলে দুজন লোক একটি মোটরসাইকেলে এসে তাঁদের দোকানের সামনে নামেন। একজন দোকানে ঢুকে সিগারেট চান। সাইফুল ড্রয়ার থেকে সিগারেট বের করার সময় ওই ব্যক্তি তাঁর বাবার নাম জিজ্ঞেস করেন। রমিজ মিয়া নাম বলতেই তাঁকে বুকে ঘুষির মতো ঝাপটা দিয়ে ধরেন। এ সময় সাইফুল ওই ব্যক্তিকে ধরার চেষ্টা করলেই তাঁরা পুলিশ বলে পরিচয় দেন এবং গ্রেপ্তারি পরোয়ানা আছে বলে জানান।

 

 

 

 


পরোয়ানার কাগজ দেখতে চাইলে তাঁরা জানান, ফাঁড়িতে আছে। তখন বাবা ঘরের ভেতর থেকে মামলার কাগজপত্র এনে দেখানোর কথা বলেন। কিন্তু তাঁকে যেতে না দিয়ে আরও জোরে আটকে ধরা হয়। একপর্যায়ে ধস্তাধস্তি করে বাবা নিজেকে ছাড়িয়ে ঘরের পেছন দিকে বের হওয়ার চেষ্টা করেন। তখন পুলিশের একজন দোকানে থাকা একটি নারকেলগাছের ঢাল দিয়ে তাঁকে আঘাত করেন। তিনি ঘরের পেছনের দিকে হাত বিশেক দূরে আরেক বাড়িতে গিয়ে ওঠেন। পুলিশ সদস্যরাও সেখানে যান এবং বাবাকে কিল-ঘুষি মারেন।

 

 

 

 

সাইফুল ইসলাম আরও বলেন, ‘বাবাকে রক্ষা করার জন্য কান্নাকাটি শুরু করি। বাবা কোনো রকমে তাঁদের (পুলিশ সদস্য) হাত থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে সামনে যাওয়ার সময় মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। তখন তাঁর নাক-মুখ দিয়ে রক্ত বের হতে থাকে। গ্রামের লোকজন জড়ো হলে পুলিশ সদস্যরা দ্রুত সেখান থেকে চলে যান। তখন বাবার মাথায় পানি ঢালতে শুরু করি। কয়েক মিনিট পরই তিনি মারা যান।’

 

 

 

 

এদিকে, রমিজ মিয়াকে ধরতে টেকেরঘাট পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) জিয়াউর রহমানসহ দুজন পুলিশ সদস্য সেখানে গিয়েছিলেন। জিয়াউর রহমান মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘উনি (রমিজ) দোকান থেকে পালানোর পর আমরা তাঁকে আর ধরতে পারিনি। কিছু সময় খোঁজাখুঁজি করে পরে আমরা চলে আসি। তাঁকে মারধরের প্রশ্নই ওঠে না।’

 

 

 

 

এ সম্পর্কে তাহিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন বলেন, ‘ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছিল। পুলিশ রুটিন দায়িত্ব পালন করেছে। তাঁকে মারধর করা হয়নি। ময়না তদন্তের প্রতিবেদন আসুক। যদি আমাদের কারও অবহেলা বা ত্রুটি থাকে, সেটাও আমরা দেখব।’

 

 

 

 

সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাজন কুমার দাস, তাহিরপুর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার মো. নাসিম উদ্দিন, তাহিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন ওই গ্রামে যান। তাঁরা রমিজ মিয়ার পরিবার ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলেন। পরে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য সুনামগঞ্জ জেলা সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়।

 

 

 

সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাজন কুমার বলেছেন, রমিজ মিয়া শ্বাসকষ্টের রোগী ছিলেন। তিনি দৌড়ে পালিয়ে গ্রামের অন্য এক বাড়িতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং মারা যান। তবু তাঁর মৃত্যুর কারণ জানতে লাশের ময়না তদন্ত করা হয়েছে। প্রতিবেদন পেলেই মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে।

 

 

 

সিলেটভিউ২৪ডটকম / প্রথম আলো / ডি.আর