জোবাইদা নাসরীন

‘তোমাকে পাব পাব বলেই আত্মহত্যার তারিখটা পিছিয়ে দেই-’


ফেসবুকে এই স্ট্যাটাস দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ইমাম হোসাইন গত বছর আত্মহত্যা করেছেন। শুধু ‘ভালোবাসা’র জন্য এই আত্মহত্যাকে একটি মেধাবী জীবনের অহেতুক অপচয় বলেই অনেকেই মন্তব্য করেছিলেন সেই স্ট্যাটাসের নিচে।

জীবনগুলো এ রকমই। কখনও প্রজাপতির পাখায় উড়ে আবার কখনও বইয়ের পাতায় ভর দিয়ে ঘোরে। তাই তো কখনও এলোমেলো, কখনও টালমাটাল আবার কখনও মায়ার মাখন হয়ে ওঠে জীবন। আবার অকস্মাৎ ধেয়ে আসা ঝড়ে হঠাৎ হাত থেকে ফসকে যায় জীবন, অনেকটাই যেন সরে যেতে থাকে নিজের ভাবনা থেকে, স্মৃতি থেকে। যার জন্য এক সময় মনে হয় একে না পেলে বা এক দিন তাকে না দেখলে জীবনে বেঁচে থাকাই কষ্টকর, সে-ই তার সঙ্গে হয়তো বছর বিশেক পর দেখা। 'বন্ধু কী খবর বল' বলার পর জীবনের উষ্ণতা কেন যেন আর গলা ভেজা কান্না হয়ে ওঠে না। কেন এমন হয়? আবার উদ্দাম যৌবনের রোমাঞ্চে কখনও কখনও কাউকে জড়িয়ে ধরে মনে হয় তার জন্য যে কোনো সময় নদীতে ঝাঁপ দিতে পারি কিংবা নির্মলেন্দু গুণের মতো হয়তো কেউ একজনকে কামনা করে সজোরে আবৃত্তি করি-

আমি বলছি না ভালোবাসতেই হবে, আমি চাই

কেউ একজন ভিতর থেকে আমার ঘরের দরজা

খুলে দিক। কেউ আমাকে কিছু খেতে বলুক।

কাম-বাসনার সঙ্গী না হোক, কেউ অন্তত আমাকে

জিজ্ঞেস করুক : ‘তোমার চোখ এত লাল কেন?’

আমাদের কল্পনার জগৎ আর বাস্তবতার মিল অনেকটাই যেন খেরো খাতার মতো। অনেক বিষয় লেখা হয়, কিন্তু জীবনের স্তব্ধতা কাটে না। আর সেই ভালোবাসা সব সময় ষোলো আনা মিছে না হলেও চার আনা ক্ষতের দাগ আমাদের কাঁদায়, কাঁপায়; কখনও কখনও জীবনকে হতকচিত করে আর মনে হয় তবে কী ভালোবাসা পুরোটাই অপচয়? এর বিনিময় কিছুই নেই? তবে কি এই অনুভূতিতে ভর করেই রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন-

‘তোমরা যে বলো দিবস-রজনী '‘ভালোবাসা ভালোবাসা’ ...

সখী, ভালোবাসা কারে কয়!

সে কি কেবলই যাতনাময়।

সে কি কেবলই চোখের জল?

সে কি কেবলই দুঃখের শ্বাস?

লোকে তবে করে কি সুখেরি তরে এমন দুঃখের আশ!!’

কাগজের নৌকা বানিয়ে পানিতে ভাসিয়ে দেওয়া কিংবা পুতুল বিয়ের শৈশবই হলো জীবনের সবচেয়ে হিসাবহীন অধ্যায়। মাথা নেড়ে নেড়ে বড়দের শিখিয়ে দেওয়া 'বড় হয়ে ডাক্তার কিংবা ইঞ্জিনিয়ার হব' এই কথার মধ্যে জীবনে সফলতার যে সামাজিক 'সোনার কাঠি-রুপোর কাঠি' লুকিয়ে আছে তা জানা হয়নি। সমাজের, পরিবারের মানুষের ভাবখানা এমন যে ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার না হতে পারলে পুরো জীবনটাই আস্ত একটা অপচয়ের ভাগাড়ে পরিণত হবে। কবে বড় হব কিংবা 'আমি যদি বাবা হতাম বাবা হতো খোকা' এই কথা ভাবতে ভাবতেই কৈশোরের আঁটোসাঁটো জীবন। এরই মধ্যে কেউ কেউ অমলকান্তির মতো রৌদ্দুর হয়ে উঠতে চাওয়ার পাশাপাশি সদা হাস্যময়ী মোনালিসার দিকে তাকিয়ে থেকে ভ্যানগঘের প্রেমিকাকে কান উপহার দেওয়ার গল্পও জেনে যায়। কোনো কোনো চোখ খুঁজে নেয় মার্কসবাদের অ আ ক খ। অনেকটা সিনেমার মতো 'ছোট' মানুষের মোড়ায় পা দোলাতে দোলাতে হাফপ্যান্ট থেকে ফুলপ্যান্টে শরীর ডাকা। ছোট্ট মেয়েটিও নিজেই চুলে বিনুনি করতে শিখে আর লুকিয়ে হয়তো রোমানা আফাজের দস্যু বনহুর পড়ে। পোশাকি চে হয়ে ওঠার চেষ্টা চলে টি-শার্টে চে’র ছবির আলিঙ্গনে। আর সমাজ বদলের গান। প্রেমব্যক্তিক থেকে চলে যায় সামষ্টিক বলয়ে। সেখানে খোয়াবনামা হাতে নতুন খোয়াবের তালিম নিয়ে গণসংগীত গায় এক উদ্দাম সময়-

‘সাহারা হৃদয় দাঁড়িয়ে যারা

মোড়ে মোড়ে আজও হতাশায়

আমার রক্ত ঝরে ঝরে যাক

তাদের শূন্য পেয়ালায়।

আজ ভেঙে যাব, কাল জুড়ে যাব

তবু ভাঙতে জুড়তে চলেছি

বিদ্রোহী আমি বিপ্লবে ডাক

তোমাদের দিতে এসেছি।’

শুধু চে গুয়েভারা কেন, কখনও মনে হতে থাকে আমিই বোধহয় হো চি মিন কিংবা বলশেভিক বিপ্লবের অন্যতম ক্ষিপ্ত সৈনিক, বিপ্লব না হলে ঘরে ফিরব না। 'ইস্পাতে'র পাতায় পাতায় কেমন যেন মহুয়া ফুলের মতো কী এক মাদকতা, সবাই কেমন করে যেন নিজেকে পাভেল করচাগিন ভাবা শুরু করে। তাই মনেপ্রাণে যেন পাভেলের মতো বলে- 'এমনভাবে বাঁচতে হবে যাতে মৃত্যুর মুহূর্তে মানুষ বলতে পারে, আমার সমগ্র জীবন আমার সমগ্র শক্তি আমি ব্যয় করেছি এই দুনিয়ার সবচেয়ে বড় আদর্শের জন্য, মানুষের মুক্তির জন্য সংগ্রামে।' সে এক চঞ্চলতার জীবন, মিছিলের জীবন, হেলাল হাফিজের কলমে জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়।

সমাজ পরিবর্তনের আদর্শের জন্য অনেকেই প্রাণ দিয়েছেন। আবার অনেকেরই সেই যৌবনের স্বপ্ন ভেঙে গেছে নানা কারণে। ফেলে আসা সময়কে টাইম মেশিনে ফিরিয়ে আনতে গিয়ে অনেকেই হয়তো আবার সেই সময়কে নিদারুণ অপচয় হিসেবেই দেখেছেন। কেন যেন হিসাবগুলো গোলমেলে হয়? অতীতের সঙ্গে কিছুতেই খাপ খেতে চায় না। হয়তো হেনরি ফোর্ডের মতো ভাবছেন ‘তুমি যা করছ যদি এর মূল্য না থাকে তবে তা নিঃসন্দেহে অপচয়।’

তবে এই মূল্য কী দিয়ে মাপবেন? টাকাপয়সায়? অর্থবিত্তে? খ্যাতি যশ-সম্মানে নাকি আদর্শ কিংবা নৈতিকতায়? পা থেকে মাথা পর্যন্ত আপাদমস্তক যখন আমি বা আপনি একজন পুঁজিবাদী সত্তা, তখন মূল্যের মাপকাঠি যে অর্থ, তা সাদা চোখেই বোঝা যায়। তাহলে কে এই মূল্য মাপবে? এর উত্তরেও রাষ্ট্র এবং সমাজই জায়গা পাবে। আর এই অপচয়কে-বা কীভাবে দেখবেন? জীবনকে নিজ দরবারে দাঁড় করিয়ে হা-হুতাশের বিলাপ তুলে যে ঔচিত্যর আহাজারি জারি রাখি, সেটাই কি তবে অপচয় নামের জীবনের মুখোশ?

কীভাবে আমরা সত্তার এই খোলস তৈরি করেছি? ফরাসি দার্শনিক জঁ পল সার্ত্র তার অস্তিত্ববাদে আত্মপ্রতারণাকে একজনের নির্ভরযোগ্য আবিস্কার এবং বোঝার দায়িত্ব এড়ানোর প্রচেষ্টা হিসেবে মনে করেছেন। আত্মপ্রতারণা এভাবে স্বাধীনতা থেকে পালানোর প্রচেষ্টা, যা সার্ত্র বিশ্বাস করে যে আমাদের জীবনের একটি সহজাত বৈশিষ্ট্য। তবে কি আমাদের এই আত্মপ্রতারণার মনস্কতাই অপচয় নামের তরিকা হয়ে জীবনের ‘আহা’ উৎপাদন করে খেদোক্তি থেকে দূরে থাকার চেষ্টা চালায়?

শব্দভান্ডারে বাংলা অপচয় শব্দটির তেরোটি ইংরেজি অনুবাদ আছে। আবার ইংরেজি এই তেরো শব্দের শখানেক প্রতিশব্দ আছে। তার মানে হলো, অপচয় বিভিন্ন পরিপ্রেক্ষিতে (কনটেক্সট) বিভিন্ন ধরনের অনুষঙ্গ নিয়ে হাজির হয়।

বাংলাদেশে গত কয়েক বছরে বিসিএসে প্রথম দিকে যারা ভালো করেছেন, তারা অনেকেই প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা মেডিকেল কলেজ থেকে পাস করা। কিন্তু কর্মক্ষেত্রে তারা নিজেদের বিশেষ জ্ঞানের চর্চা কাজে না লাগিয়ে নানা কারণেই প্রশাসনিক কাজকে পেশা হিসেবে নিয়েছেন। সেই সময়ও বেশ কয়েকজনকে বলতে শুনেছি, মেধার কী অপচয়! প্রশাসনিক কাজের জন্যও তো আর ডাক্তারি বা প্রকৌশলীর জ্ঞানের দরকার নেই। প্রতি বছর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যত নারী শিক্ষার্থী স্নাতকোত্তর পাস করে বের হন, এর মাত্র ১৭ শতাংশ চাকরি জীবনে প্রবেশ করেন। এর মধ্যে প্রথম পাঁচ বছরে সেখান থেকেও নানা কারণে ঝরে পড়েন প্রায় ৬ শতাংশ নারী। তখনও অনেকেই বলেন ইশ্‌, কী অপচয়! তাহলে এত মেয়ে কেন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে? আমাদের শিক্ষা খাতও অনেকের কাছেই অনেকটাই অপচয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক জ্ঞানই চাকরি জীবনে কাজে আসে না। এখনও কানে ভাসে পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙামাটির এক চাকমা নারীর কথা; যিনি বলেছিলেন, ‘সংসারের জন্য চাকরি ছাড়লাম, আসলে চাকরি তো নয়, আমি সবই ভুলে গেলাম। এখন আমার নামটিও ঠিকমতো লিখতে পারি না। শিক্ষাদীক্ষা সবই নারীর জন্য অপচয় হয়ে যায়, যদি কাজে না আসে।’

এখানে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হলো, কেনইবা সবাইকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে হবে! কেনইবা জেলায় জেলায় মোড়ের চা দোকানের মতো বিশ্ববিদ্যালয় করতে হবে! সেই দর্শন কারও জানা নেই। কিছুদিন পরে এত এত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা মাস্টার্স ডিগ্রি সার্টিফিকেটধারীরা তাদের শিক্ষাজীবনকেই আবার অপচয় ভাবা শুরু করবে না তো!!

অপচয় নেই কোথায়! অর্থের অপচয়, সময় অপচয়, খাবারে অপচয়, জল-তেলে অপচয়, গ্যাসে অপচয়, কেনাকাটায় অপচয়, এমনকি আজকাল সম্পর্কেও অপচয় শোনা যায়। যার সঙ্গে খাতির রেখে লাভ নেই, সেই সম্পর্ককেও অনেকেই অপচয় মনে করেন। খাবারের অপচয় কমাতে এখন অনেক দেশেই বুফেতে একসঙ্গে অনেক খাবার নেওয়া যাবে না বলে নীতিমালা করা হয়েছে এবং খাবার নষ্ট করলে জরিমানার বিধানও আছে কোনো কোনো রেস্টুরেন্টে। কিন্তু নিয়ম দিয়ে অর্থের অপচয় রোধ করলেও জীবনের অন্যান্য অপচয় কি রোধ করা যায়? যাবে?

শরীরে আর মনের অপচয় বলেও কথা আছে গো- বলেই একটি দীর্ঘস্বর তুলেছিলেন আমার সত্তরোর্ধ্ব মা। ছোটবেলায় একান্নবর্তী পরিবারে সেই যে পাঁচ বছর বয়স থেকে ঢেঁকিতে ধান ভানতেন মা চাচিদের সঙ্গে, আর তখন থেকেই 'রত'-এর অপচয় শুরু। সে অপচয় আর থামানো যায়নি। তারপর ঘানি টেনেছেন সংসারের। তার সঙ্গে ছিল ছয় সন্তানের জন্ম দেওয়া। শরীরের অপচয় হতে হতে আর কিছুই নেই বাকি। আর মন? সে তো অনেক আগে থেকেই কুঠরিতে বন্দি মন নিয়ে নয়, যখন মেনে নিয়েই বিয়ে নামক খোলসে ঢুকে তখন সেই মনটি আর নিজের থাকে না। সেই মনের নিয়ন্ত্রণ অন্যের কাছে। নিয়ন্ত্রিত মনের আবার কী খবর নিবা? নিজের মন কেমন আছে আগে সেটা জানতে চাও- মা উল্টো ছুড়ে দিয়েছিলেন প্রশ্ন। যে মন ঔপনিবেশিক, সে তো কবেই অপচয়ের খাতায় ডুব দিয়েছে।

ডিজিটাল যুগ কত্ত কী না উপহার দিয়ে চমকে দিচ্ছে! তাই প্রতি মুহূর্তই এখন ক্যামেরার অধীন হয়ে পড়েছে। ছাপার অক্ষরের কাগজের আদর-কদর কমে গেছে, তাও অনেক দিন হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু তবুও কারও কথা মনে হলে চিঠির জন্য মন পুড়ে। কিন্তু কী এক অদ্ভুত সময়। এখন চিঠি লিখতে গেলে কাগজ, কলম এবং শ্রম সবই অপচয় মনে হয়। কী সুন্দর করে এখন 'এইচবিডি' লিখেই জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানানো যায়। মোবাইল ফোনে ছবি তোলা হয়, প্রতিদিন হাজার হাজার রিপোর্ট হয়। আবার ক'দিন পর অনেকগুলো খুঁজেও পাওয়া যায় না। তখন এই ডিজিটাল স্মৃতিও অপচয় মনে হয়। মন-চোখ খুঁজে বেড়ায় অ্যালবামের পাতা। যেখানে স্থির হয়ে হয়তো এখনও জ্বলজ্বল করে উঁকি দেয় হামাগুড়ি দেওয়া শৈশব।

জীবন তাগাদার সঙ্গে আসলে অপচয়ের সম্পর্ক কী? জৈবিক এবং সামাজিক মানুষ কি তবে অপচয় নিমিত্ত সত্তা? যেমন রাষ্ট্রের কাছে শিক্ষার উপকরণ বিনামূল্যে প্রদানকে অপচয় মনে হতে পারে, নিরাপত্তা বেষ্টনীর খুবই সামান্য টাকা পাওয়া মানুষের জন্য এই বরাদ্দকে অপচয় মনে হতে পারে। আবার এটির সবচেয়ে বেশি নজির দেখেছি চিকিৎসাসেবায়। সেখানে পর্যাপ্ত বরাদ্দ নেই। তাই রাষ্ট্রের কাছে মানুষের মূল্য নির্ধারিত যখন হয়ে পড়ে সঞ্চয়-অপচয়ের বাটখারায়, তখন পুরো জীবনকেই আসলে আস্ত একটা অপচয়ই মনে হয় এবং রাষ্ট্রের সঙ্গে ব্যক্তির অতি ঢিলেঢালা সম্পর্ক ফাঁপাই মনে হয়।

জীবনে কী করেছি, কী পেয়েছি- এই হিসাবে যখন বসবেন, সন্তানদের কাছে প্রত্যাশার দড়িতে যখন টান অনুভব করবেন, তখন কেন জানি হৃদয়ের কোথাও চিনচিন ব্যথা হয়। এই ব্যথা হাহাকারের। কেন জানি পানি নিজেই এসে চোখের কোনায় বসে থাকে। অভিমানী জল মাটিতে গড়িয়ে পড়ে না। তাহলে হঠাৎ হঠাৎ মনে হয় সারাটা জীবন এই সন্তানদের জন্যই অপচয় করলাম!! তাই বৃদ্ধাশ্রমে অনেকেই সেই অপচয়ের ফিরিস্তি আওড়ান। অপচয়ের কাল ঘেঁটে দীর্ঘশ্বাস বড় করেন।

অমরত্বের সুধার প্রতি আর্কষণ অনেকেরই থাকে। খ্যাতি, যশ, অর্থ, বিত্ত, ক্ষমতা সবকিছুরই কাঙালিপনা আমাদের কমবেশি আছে। তাই এসবেরও আছে অপচয়রে তাড়না। যেমন, বাংলা ভাষার জনপ্রিয় লেখক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ ছিল যে তিনি খ্যাতির অপচয় করেছেন। তিনি নিজের অপচয় ঠেকাতে পারেননি।

অপচয় নিয়ে নানামুখী আলাপ এবং আহাজারি থাকলেও দফায় দফায় দেশভাগ যে মানবিক অপচয়ের সুড়ঙ্গ তৈরি করেছে সে বিষয়ে আমরা খুব বেশি মনোযোগ দিইনি। এই বিষয়ে প্রথম অভিঘাত করে 'আগুনপাখি' উপন্যাসটি। এই উপন্যাসে হাসান আজিজুল হক দেশভাগের মানবিক অপচয় নিয়ে তার মায়ের যে আক্ষেপ, সেটি নিয়েই আলাপ পেড়েছেন এবং যে উপন্যাসে অপচয় উপস্থাপিত হয়েছে রাজনীতির বিবেচনায় এবং সেখানে সেই রাজনীতির মূলে রয়েছে মানবিক মূল্যবোধ। সেই অপচয় রোখাই সবচেয়ে বেশি জরুরি।
কৃতজ্ঞতা: কালের খেয়া।
সিলেটভিউ২৪ডটকম/আরআই-কে